ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সেন্টমার্টিন হাসপাতাল শুধু কাগজ-কলমেই ২০ শয্যা

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
সেন্টমার্টিন হাসপাতাল শুধু কাগজ-কলমেই ২০ শয্যা

কক্সবাজার: দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রায় ১৪ হাজার বাসিন্দার স্বাস্থ্যসেবায় স্থাপিত হয়েছিল ২০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল। ২০০২ সালে দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় দেড় একর জমিতে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়।

প্রথমে ১০ শয্যা থাকলেও পরে এটি ২০ শয্যায় উন্নীত হয়।

তবে প্রতিষ্ঠার ২০ বছরেও হাসপাতালটিতে চালু হয়নি ইনডোর সেবা। ফলে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটকসহ দ্বীপের বাসিন্দারা।

জানা গেছে, ২০০২ সালে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে প্রশাসনিক ভবন ও চিকিৎসকের আবাসিক ডরমিটরি নির্মাণ শেষে ২০০৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব ড. জাফর উল্লাহ চৌধুরী হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর হাসপাতালটি ২০ শয্যায় উন্নীত হয়।

যদিও স্থানীয়রা বলছেন, আগের চেয়ে হাসপাতালে সেবার মান কিছুটা বেড়েছে। আগে হাসপাতালে ডাক্তার থাকতো না। এখন নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হাবিব খান বাংলানিউজকে বলেন, বহির্বিভাগে সেবার মান আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র ও ইউনিয়ন হলেও এখানে ইনডোর সেবা চালু হয়নি। কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা ভবনের বেশিরভাগ কক্ষ ফাঁকা পড়ে আছে। মূলত ২০ শয্যার হাসপাতাল শুধু কাগজে কলমে, বাস্তবে তা নেই বললেই চলে।

সেন্টমার্টিন পূর্ব পাড়ার এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে জানান, কয়েক বছর আগেও হাসপাতালটিতে নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া যেত না। বেশিরভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকতো। চিকিৎসক পদায়ন করা থাকলেও বেশিরভাগ সময় তারা থাকতেন না। সে সময় রোগীদের একমাত্র ভরসা ছিল হাসপাতালের এমএলএসএস (চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) রমজান আলী। তিনিই রোগীদের সেবা দিতেন। এখন অন্তত সেই চিত্র পাল্টেছে। দুই-তিনজন চিকিৎসক রোগী দেখেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মুরশিদা বেগম বলেন, বর্তমানে এই হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। কিন্তু গর্ভবতী নারীর প্রসবজনিত জটিলতা দেখা দিলে সিজারিয়ান অপারেশনের দরকার পড়ে। কিন্তু এই সেবা চালু না থাকায় রোগীদের বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষ করে দ্বীপ এলাকা হওয়ায় কখনো কখনো গর্ভবতী নারীকে উপজেলা বা জেলা সদরে নিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

একই কথা বলেন দ্বীপের পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ আহমদও। তিনি বলেন, এই হাসপাতালের প্রসব সেবা নিয়ে ভরসা করা যায় না। ঘরে গর্ভবতী নারী থাকলে পুরো পরিবারকে দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এছাড়াও পর্যটন মৌসুমে কিছুটা চিকিৎসা সেবা পাওয়া গেলেও বর্ষায় হাসপাতালে ভূতুড়ে পরিবেশ থাকে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটন মৌসুমে পর্যটকবাহী জাহাজ চালু থাকলেও বর্ষায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম মালবাহী সার্ভিস বোট। পণ্যবাহী এসব জাহাজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকজনকে চলাচল করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো রোগীকে দ্বীপের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই দ্বীপবাসীর দাবি, প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা এবং ইনডোর সেবাসহ ২০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এটি চালু করা হোক, থাকুক সি-অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও।

সেন্টমার্টিন ২০ শয্যার হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও সহকারী সার্জন জোবাইদা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে জরুরি সেবা এবং বহির্বিভাগ সেবা চালু আছে। ইনডোর সেবা এখনো পরিপূর্ণভাবে চালু করা যায়নি। তারপরও যতটুকু সম্ভব আমরা সেবা দিই। হাসপাতালে প্রসূতি সেবা চালু আছে। প্রতিমাসে এখানে ৭-৮টি নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। তবে স্থানীয় মানুষ প্রসব সেবা নিয়ে খুব বেশি সচেতন নয়। তারা বাড়িতেই ডেলিভারি করাতে অভ্যস্ত।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে দুজন করে চারজন সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসক ওই হাসপাতালে কর্মরত আছেন। তারা আউটডোর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আর ইনডোর সেবা চালুর জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
এসবি/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।