ঢাকা, শুক্রবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নড়াইলে ‘ইমন ক্লিনিক’র অপচিকিৎসার শিকার গৃহবধূ ঝুমার বাঁচার আকুতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২২
নড়াইলে ‘ইমন ক্লিনিক’র অপচিকিৎসার শিকার গৃহবধূ ঝুমার বাঁচার আকুতি

নড়াইল: ‘নড়াইলের ইমন ক্লিনিকে সিজার করতে এসে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা ও ক্লিনিকের অব্যস্থাপনায় মরতে বসেছি। গত দেড় বছর ধরে আমি অতি কষ্টে জীবনযাপন করছি, আমি আর মা হতে পারবো না।

এমনকি আমার নবজাতককে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াতেও পারি না। আমি এখন এক অথর্ব নারী, আমার ভবিষ্যৎ জীবন কীভাবে কাটবে তাও জানি না’।

কান্না জড়িত কণ্ঠে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গৃহবধূ ঝুমা বেগম (৩০)। তিনি জেলা সদর উপজেলার হবখালি গ্রামের মাফুজুর রহমানের স্ত্রী।

বুধবার (২৩ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরিতে ঝুমা বেগম পারিবারিক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। পরে নড়াইল চৌরাস্তায় ইমন ক্লিনিকে কয়েকজন ভুক্তভোগী মানববন্ধন করে।

সম্মেলনে ঝুমার স্বামী মাফুজুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার স্ত্রীর করুন পরিণতির জন্য দায়ী চিকিৎসক ডা. আকরাম হোসেন এবং শহরের ইমন ক্লিনিক নামের কসাইখানা। ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঝুমার সিজার অপারেশনের পর তলপেটে যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। তার তলপেটের সেলাই ফেটে রক্ত এবং প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরে জরায়ুতে ইনফেকশন হয়। জীবন বাঁচাতে খুলনায় দ্বিতীয় দফা অপারেশন করে তার জরায়ু ফেলে দেওয়া হয়। এরপরও ঝুমা সুস্থ না হওয়ায় পুনরায় খুলনা, ঢাকায় চিকিৎসা চলে এক বছর। সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে ভারতের কোলকাতার একটি হাসপাতালে আরও দুই দফা অপারেশন হয় ঝুমার। ক্লিনিকের চিকিৎসকের একটি ভুল চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রীকে আরও তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন করেও সুস্থ করা যায়নি। সে ঠিক মতো বসতে পারে না, শুতে পারে না। এমনকি নিজ সন্তানকে কোলে তুলে বুকের দুধও খাওয়াতে পারে না। উপরন্ত মানসিক যন্ত্রণায় সব সময়ই ছটফট করে।

এ ব্যাপারে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি ঝুমা বেগমের স্বামী মাহফুজ রহমান বাদী হয়ে ক্লিনিক মালিক, তার স্ত্রী ও চিকিৎসকের নামে নড়াইলের নালিশি আদালতে মামলা দায়ের করেন।



মাহফুজ রহমান বলেন, চিকিৎসার নামে এহেন অপকর্ম করার পরেও নড়াইলের সিভিল সার্জন কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ভুয়া ক্লিনিক আর অসাধু মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আকতার আদালতে প্রতিবেদন দিতে কালক্ষেপণ করেছেন। চিকিৎসক আর ক্লিনিক মালিক সরোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম দ্বারা ম্যানেজ হয়ে ওই চক্রের পক্ষে মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন সিভিল সার্জন। আমার কোনো বক্তব্যই নেননি তদন্ত কমিটি।

সংবাদ সম্মেলন শেষে নড়াইল চৌরাস্তায় ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন করেন। সেখানে বক্তব্য দেন, শহর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকির হোসনে, ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান মোল্যা, নান্নু মোল্যা প্রমুখ।



মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ইমন ক্লিনিকে মা হতে এসে অন্তত ৫০ রোগী চরম ভোগান্তির শিকার। সার্জারি বিশেষজ্ঞ হয়ে গাইনি চিকিৎসা করে ডা. মো. আকরাম হোসেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিময় অনুযায়ী বেআইনি কাজ করেছেন।

ভুল চিকিৎসা ও ইমন ক্লিনিকের অব্যবস্থপনার দায়ে ওই ক্লিনিক বন্ধসহ জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

অভিযোগ বিষয়ে ইমন ক্লিনিক মালিক মো. সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, আমার ক্লিনিক সঠিকভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। এখানে আমার কোনো গাফিলাতি ছিল না। সঠিকভাবেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আকতার বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত আছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করেই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমি বিষয়টি দেখবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।