ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

১৫০০ টাকার প্লাস্টিক বক্স ৬ হাজারে ক্রয়!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
১৫০০ টাকার প্লাস্টিক বক্স ৬ হাজারে ক্রয়!

পাবনা: ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।  

সম্প্রতি সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের মাধ্যমে বাজার দরের চাইতে বেশি দামে নিম্নমানের মালামাল ক্রয় ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

 

হাসপাতালে মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বিলের একটি কপি সংযুক্ত করে এ বিষয়ে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুকক) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাদেক হোসেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গোপন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বর্তমান সহকারী পরিচালক কার্যাদেশ প্রদান করেছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে সাদেক হোসেন জানান, সম্প্রতি হাসপাতালে ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে দেখেন অফিস কক্ষের সামনে সদ্য কেনা বর্জ্য ফেলার প্লাস্টিক বক্স রাখা আছে। বক্সগুলোর বিষয়ে কয়েকজন সাবেক সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানতে পারেন প্রতিটি বক্স কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯০ টাকা দরে। সাধারণত এ ধরনের বক্স বাজারে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।  
সাদেক হোসেন আরও বলেন, সরকারি অর্থের অপচয় করে বাজারমূল্যের চেয়ে কয়েকগুন বেশি দামে এসব পণ্য কেন নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্মচারীরা বলেন, বিষয়টি এডি স্যার জানেন। পরে আমি সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীরকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা হচ্ছে জানালে তিনি আমাকে এ বিষয়ে নাক গলাতে নিষেধ করেন। মালামাল নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ফল ভালো হবে না বলেও জানান।  

সাদেক হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূতভাবে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ কিংবা নোটিশ বোর্ডে না টানিয়েই ঢাকার এস টি এম করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে গত ১১ জুন কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অফিসে যোগাযোগ করেও দরপত্র বিজ্ঞপ্তির কোনো কপি পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে সহকারী পরিচালক এসব নিম্নমানের মালামাল উচ্চ মূল্যে কিনেছেন। যা দাখিলকৃত বিলে প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করা হয়েছে।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান মালামাল ক্রয়ের দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র ঠিক না থাকায় এস টি এম করপোরেশন যে দর দেয় তাই অনুমোদন পায়। বিষয়টি সন্দেহজনক। সরবরাহকৃত মালামাল বাজার দরের চাইতে অনেক বেশি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড রেটের মধ্যে রয়েছে। তবে এ ধরনের অস্বাভাবিক দামে মালামাল ক্রয়ের বিল ভাউচার দেখে বিস্মিত হয়েছে পাবনার সচেতন মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক ঠিকাদার জানান, জুন মাস সামনে রেখে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করতেই উচ্চ মূল্যে নিম্নমানের মালামাল কেনা হয়েছে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়নি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এস টি এম করপোরেশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড রেটে মালামাল কেনা হয়েছে বলা হলেও পণ্যের কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত না থাকায় এখানে তা বিবেচ্য হওয়ার কথা নয়।

এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের উচ্চমান সহকারী সনজিৎ কুমার দাসের কাছে জানতে চাইলে কোন পত্রিকায় কবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি।  

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। সহকারী পরিচালক স্যার জানেন। আমার কাছে কোনো কাগজপত্র নেই।

হাসপাতালের স্টোরকিপার মো. জালাল হোসেন বলেন, মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। সব ক্ষমতার অধিকারী সহকারী পরিচালক স্যার। স্টোরে মালামাল প্রবেশ করাতে আমার কোনো ক্ষমতা নেই। হাসপাতালের আরএমও স্যারসহ আরও দুইজন চিকিৎসকের একটি কমিটি রয়েছে তারা যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দিলেই তখন সেই মালামাল স্টোর করা হয়। আর এই সব মালের অনুমোদন দিয়েছেন বলেই মালামালগুলো বুঝে নিয়ে স্টোর করা হয়েছে।

মালামাল ক্রয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটি নীতিমালা মেনে যাচাই বাছাই করে কার্যাদেশ দিয়েছে। এখানে দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ নেই। জাতীয় পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান ও নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ সুবিধা না পেয়ে অসত্য অভিযোগ করছেন।

তবে মালামাল ক্রয়ের তালিকা অনুসারে সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে চোখে পরে তালিকার প্রথম দিকে থাকা বিভিন্ন কালারের প্লস্টিকের ডাস্টবিন প্রশাসনিক ভবন থেকে সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে। মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে সহকারী পরিচালক ডা. মীরের কাছে কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি সেটি না দেখিয়ে নিয়ম মেনে কাগজ চাইতে বলেন। কোন পত্রিকায় কবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে সিটিও তিনি জানেন না। কিন্তু পত্রিকার মাধ্যমে এই মালামাল ক্রয় করা হয়েছে বলে দাবি তার। কতগুলো এবং কি কি ধরনের মালামাল এসেছে সেটিও তিনি জানেন না।  

তিনি বলেন, এই মালামাল ক্রয়ের জন্য একটি কমিটি রয়েছে তারাই সব কিছু দেখ বুঝে নিচ্ছে। তবে কারা এই কমিটিতে আছেন কত জন আছেন সেটিও তিনি জানেন না।

জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. খায়রুল হক বলেন, পাবনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত অভিযোগ ও একটি ক্রয় ভাউচার আমরা পেয়েছি। বিষয়টি কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন পেলেই আমরা এ বিষয়ে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।