ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আইনের ফাঁক গলে তামাক চলে বীরদর্পে (১ম পর্ব) 

এসব যেন তামাকপণ্যই না!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২২
এসব যেন তামাকপণ্যই না!

তামাক জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের অন্যতম প্রধান শত্রু। তামাকের এই সর্বগ্রাসী ক্ষতি প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এফসিটিসির (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল) আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে।

২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীও আনা হয়।  

এরপরও বর্তমান আইনের ফাঁক গলে তামাকজাত পণ্যগুলো চলছে বীরদর্পে। আর এ কারণেই আইনের সঠিক প্রয়োগ ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন কিছু বিষয় সংযোজনসহ আইনকে সময়োপযোগী করে সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে ৩ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সোলায়মান হাজারী ডালিম প্রথম পর্বে থাকছে ধোঁয়াবিহীন তামাকের কথা।  

 

একটি আলিম (এইচএসসি সমমান) মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা ইয়াসিন। তিনি প্রায়ই শ্রেণিকক্ষে তার শিক্ষার্থীদেরকে ধূমপান না করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন এবং এর খারাপ দিকগুলোর ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের বলেন। কিন্তু এই শিক্ষক নিজেই দৈনিক ১০ থেকে ১৫ বার তামাকজাত পণ্য গুল সেবন করেন এবং সুগন্ধিযুক্ত জর্দা দিয়ে পান খান। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের এই শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি গুল এবং জর্দাকে তামাক মানতেই নারাজ। তিনি বলতে চান, সিগারেট আর গুল জর্দা কখনোই এক জিনিস নয়।  

ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্য নিয়ে এ ধরনের উদাসীনতা শুধু এর ব্যবহারকারীদের মধ্যেই নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও এর কার্যকারিতা, প্রয়োগেও রয়েছে উদাসীনতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান আইনে মূল ফোকাস করা হয়েছে ধূমপানকে। কম প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ধোঁয়াবিহীন তামাককে।  

সে কারণেই আইনের ফাঁক গলে এসব পণ্যের ব্যবহার চলছে বীরদর্পে। অনেক ক্ষেত্রে ধোঁয়াবিহীন এসব তামাকজাত পণ্য আমাদের সমাজের আচার-অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েও দাঁড়িয়েছে। এখনও যেকোনো উৎসব, বিশেষ করে বিয়ে-সাদির অনুষ্ঠানে পানের সঙ্গে বাহারী সাজে সাজানো থাকে তাকাকজাত পণ্য জর্দা, গুল ও সাদাপাতা। এটা সমাজে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেন এটা তামাকই না।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোলের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘তামাক দ্রব্য’ বলতে বোঝায় আংশিক অথবা পরিপূর্ণভাবে কাঁচামাল হিসাবে তামাক ব্যবহার করে ধূমপান, চুষে, চিবিয়ে অথবা নাকে শুঁকে সেবনীয় দ্রব্য।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর ১০(১) ধারা অনুযায়ী, সব তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পার্শ্বে মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগে অন্যূন শতকরা পঞ্চাশ ভাগ পরিমাণ স্থান জুড়ে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কিত রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আইনের ফাঁক-ফোকরের কারণে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের ক্ষুদ্র আকারের মোড়কে সচিত্র সতর্কবার্তা আরো ক্ষুদ্র করে দেখানো হয়। এমনভাবে সেটি থাকে যা অনেকের চোখেই ধরা পড়ে না। যার ফলে এটির ভোক্তা বাড়ছে, মৃত্যুর হারও বাড়ছে।  

এসব তামাক গ্রহণকারী বিভিন্ন অঞ্চলের ১০ জনের সঙ্গে কথা বললে ৮ জনই এসব পণ্যের প্রাণঘাতী খারাপ দিকের কথা জানেন না বলে জানান। তারা জানেন, শুধু ধূমপানেই ক্ষতি হয়। এসব পণ্য ক্ষতিকর না।  

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার খোদেজা বেগম। বয়স ৬৫। ডায়বেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত তিনি। রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে জর্দা সেবন করার কারণে তার বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। রোগীর স্বজনরা জানান, ডাক্তার নিষেধ করলেও রোগী ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা মানতে নারাজ। তিনি এখনও জর্দা খান। সন্তানরা নিষেধ করলে লুকিয়ে এবং চুরি করে হলেও তিনি জর্দা সেবন করেন।  

দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পঞ্চগড়ের বোঁদা উপজেলার আজগর আলীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তার বয়স এখন ৫৫ বছর। সেই ছোট বেলা থেকেই তিনি পানের সঙ্গে জর্দা খেয়ে আসছেন এবং গুল সেবন করে আসছেন। সিগারেটকে খারাপ জানলেও তিনি এসব গ্রহণকে খারাপ জানেন না। কখনো কেউ বলেননি এবং এসবের খারাপ দিক নিয়ে কোথাও কিছু দেখেনওনি।  

শুধু এই আজগর আলী নয়, আলাপ হওয়া ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই তামাক পাতার তৈরি এসব পণ্য যে শরীরের জন্য ক্ষতিকর এ বিষয়টি জানেনই না। বাকি দুই জন কিছুটা জানলেও তারা মনে করেন, এসব সিগারেট থেকে কম ক্ষতিকর। তাদের মন্তব্য- যদি সিগারেটের মতোই হতো তাহলে সমাজে এটি ওভাবেই প্রতিষ্ঠিত থাকতো।

ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায়, শুধু অশিক্ষিত কিংবা অল্প শিক্ষিত লোকই না। অনেক শিক্ষিত লোকও এসব পণ্য নিয়মিত সেবন করেন। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আধুনিক রেস্টুরেন্ট ও কনভেনশন হলেও পানের সঙ্গে জর্দাকে বাহারী করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। জর্দায় বিভিন্ন ধরনের রং ও সুগন্ধি মিশিয়ে সাজিয়ে রাখা এসব পণ্য অনেক শিক্ষিত মানুষও খাচ্ছেন।  

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, একটি কোনায় শৈল্পিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে পান। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে এসব পান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। বিভিন্ন সুগন্ধির সঙ্গে রং মেশানো মিষ্টি জর্দা মানুষ চড়া দাম দিয়ে কিনে খাচ্ছেন। ওই রেস্টুরেন্টে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, জর্দা ক্ষতিকারক বিষয়টা তারা জানলেও বাহারী উপস্থাপন এবং জর্দার ঘ্রাণের কারণে লোভ সামলাতে পারেন না।  

আশফাক হোসেন নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, পানের সঙ্গে বাহারী রকমের জর্দা খেতে খারাপ লাগে না, বেশ ভালোই।  

দেশের বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার ও দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ধোঁয়াবিহীন এসব তামাক পণ্য অধিকাংশ দোকানে খুব সহজেই মিলছে। এর মধ্যে জর্দা খুব সহজ পণ্য। খিলি পানের সঙ্গে জর্দা সবখানেই পাওয়া যায়। ঘরে নিয়ে খাওয়ার জন্য কৌটা কিনে নিতে হয়। সাদা পাতা ও জর্দা সব শ্রেণির মানুষ গ্রহণ করলেও গুল সব শ্রেণির মানুষ গ্রহণ করেন না। সাধারণত শ্রমিক শ্রেণির মানুষ গুল সেবন করেন।  

রাজধানীর একটি তরকারীর আড়তের শ্রমিক কবির আহম্মদের সঙ্গে কথা হয় গুল সেবন নিয়ে। তিনি বলেন, ‘সারাদিন কাজ করতে করতে শরীরটা নিস্তেজ হয়ে যেতে চায়। মুখে একটু গুল দিলে শরীরটা চাঙ্গা হয়। কাজে শক্তি পাই। ’ 

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের এক তথ্য মতে, দেশের প্রাপ্ত বয়ষ্কদের মধ্যে ১৮ শতাংশ মানুষ ধূমপান (সিগারেট, বিড়ি) করেন। ২০.৬ শতাংশ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক (জর্দা, গুল,সাদাপাতা ইত্যাদি) ব্যবহার করেন। অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের মধ্যে ধূমপান করে ২.৯ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে ৪.৫ শতাংশ। এই তথ্যটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রাপ্ত বয়ষ্ক এবং অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক উভয় ক্ষেত্রেই ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি।  
 
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের এ তথ্য মতে, তামাকের কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত।  

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের দুই চিকিৎসক জানান, তামাকের কারণে মৃত্যু ও বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের বড় অংশ ধোঁয়বিহীন তামাক ব্যবহার করেন। অথচ সমাজে এটিকে অনেকে তামাকই মনে করতে চান না।  

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির ২০১৮ সালের আরেকটি গবেষণাও আঁৎকে ওঠার মত। ওই গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ত্রিশোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর ৯ দশমিক ১ শতাংশ তামাক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।  
 
বাংলাদেশে তামাক বিরোধী আন্দোলনের সংগঠক ও গবেষকরা মনে করেন, দেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক সমাজের রীতিনীতির সঙ্গে মিশে গেছে। এটি ডাল-ভাতের মত সহজলভ্য হয়ে গেছে। সব শ্রেণির মানুষ খুব অল্প খরচে এসব তামাকপণ্য কিনতে পারে। যার ফলে এসবের ব্যবহার বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে এটি দেশের সাধারণ মানুষের জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

গেল বছর (২০২১ সালের) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে কম দামে ধোঁয়াহীন তামাক পণ্য পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। এর আগে রয়েছে মিয়ানমার ও নেপাল।  

তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ক্রমাগত এই বৃদ্ধি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ কারণেই তামাক (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করে বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা এবং প্যাকেট ছাড়া বা খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তামাক বিরোধী সংগঠক ও বিশেষজ্ঞরা।  

এ প্রসঙ্গে কথা হয় ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমান তামাক আইনে ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়টি সজ্ঞায় উল্লেখ থাকলেও ভেতরে তেমন প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। তামাক বন্ধ করার ক্ষেত্রে ও পাবলিক প্লেসে তামাক নিষিদ্ধ করাসহ অন্যান্য মেজরসে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগের কথা বর্তমান আইনে নেই। বর্তমান আইনে মূলত ফোকাস ধূমপানের দিকে। আইনে যদি ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা না হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব না।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বড় একটা অংশ, এর মধ্যে নারী ও স্বল্প আয়ের মানুষ তামাক, জর্দা পাতা এগুলোর প্রতি আসক্ত। আমাদের দেশ যদি তামাক নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়, আইনে ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে। ভেজালবিরোধী অভিযান যেভাবে পরিচালিত হয়, ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়েও যেন তেমন অভিযান পরিচালিত হয়। আইন না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে যেন তাৎক্ষণিক বিচার হয়।  

ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতিকারক দিক উল্লেখ করে, মাদক দ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, ধোঁয়াবিহীন তামাক গ্রহণের কারণে মানুষের মুখে এক ধরনের ঘা তৈরি হয়; যা পরে ক্যানসারে রূপ নেয়। এ ছাড়া এসব তামাক সরাসরি রক্তেও প্রবেশ করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক, ফুসফুসে সংক্রমণের মতো দুর্ঘটনা ঘটে’।  

ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়ে কথা হয় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার প্রকল্প প্রধান (তামাক নিয়ন্ত্রণ) হাসান শাহরিয়ারের সঙ্গে। তাদের পরিচালিত একটি গবেষণায় উঠে আসা তথ্য উল্লেখ করেন তিনি। দেশের ৮টি বিভাগে পরিচালিত ২০১৬ সালের ওই গবেষণায় দেখা যায়, ৪০.২% জর্দা কৌটায় এখনও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ছাপা থাকে না। ৮৫.২% জর্দা এবং ৪২% গুলের কৌটায় সতর্কবাণী সঠিক স্থানে মুদ্রণ করা হয় না। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক বিষয়টি সম্পর্কে ৩১% বিক্রেতা অবগত নন। আর ৭০.৮% বিক্রেতাই জানেন না এটি ৩ মাস অন্তর পরিবর্তন করতে হয়। বর্তমান আইনকে সংশোধন করে ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়টি প্রাধান্য দিলে এগুলোর ব্যবহার কমতে পারে।  

এ প্রসঙ্গে কথা হয় জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আন্তরিক। সরকার চায় দেশ তামাক মুক্ত হবে।  

আইনের সংশোধনীর বিষয়ে তিনি বলেন, তামাকজাত পণ্যের ব্যাপকতা রুখতে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন। এরইমধ্যে বিষয়টি নজরে নিয়ে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য বিভাগ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫- এ একটি অধিকতর সংশোধনী আনার লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। আশা করি এটি সম্পন্ন হলে ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২২
এসএইচডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।