ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

পঞ্চগড়ে গ্রামে গ্রামে চিকেন পক্সের প্রাদুর্ভাব, আতঙ্কে স্থানীয়রা

সোহাগ হায়দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২২
পঞ্চগড়ে গ্রামে গ্রামে চিকেন পক্সের প্রাদুর্ভাব, আতঙ্কে স্থানীয়রা

পঞ্চগড়: দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনার কারণে প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে ঘরবন্দী মানুষ কর্মক্ষেত্রে বের হয়েছেন, নতুন করে আবার কাজ শুরু করেছেন ঠিক এ সময়ে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে হঠাৎ করে চিকেন পক্সে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয়রা।  

এদিকে শহরের চেয়ে গ্রাম-গঞ্জে বেশি দেখা যাচ্ছে এ ভাইরাসের প্রকোপ।

আর এ রোগে শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীরা আক্রান্ত হচ্ছে। তবে সব থেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও কিশোররা। চিকেন পক্সে আক্রান্তের পর গ্রামের অধিকাংশ সাধারণ পরিবার গ্রাম্য কবিরাজ বা আদি চিকিৎসায় ঝুকছেন।  

অন্যদিকে কবিরাজি বা গ্রাম্য আদি চিকিৎসা গ্রহণ না করে আক্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন জেলার চিকিৎসকেরা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে দেশি নিমের পাতা ও কাঁচা হলুদ বেটে চিকেন পক্সে আক্রান্তদের পুরো শরীরে লাগিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করানো হচ্ছে। কেউ আবার নিম পাতা গরম জলে গোসল করছে। অনেকেই আবার আক্রান্ত স্থানে ডাবের পানি দিচ্ছে, কেউ পানি পান করছে।

আক্রান্ত রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকেন পক্সের প্রাদুর্ভাব গ্রামাঞ্চলে সব থেকে বেশি দেখা মিলছে। এতে করে অনেকের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকের কাছে আদি নিয়মটি সঠিক মনে হওয়ায় চিকেন পক্সে আক্রান্ত গ্রামের অধিকাংশ সাধারণ পরিবার গ্রাম্য আদি চিকিৎসায় ও কবিরাজের কাছে ঝুকছেন।

জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার জব্বার মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আদিকালের নিয়ম এই পক্স হলে আমরা ডাবের পানি পান করি, শরীরের ক্ষত স্থানে নিমের পাতা বেটে লাগাই। এতে করে একটু সময় লাগলেও রোগটি সেরে যায়। তবে অনেকের একটু বেশি সময় লাগায় তারা আতঙ্কে থাকেন।

একই এলাকার ভেলুপাড়া গ্রামের তাহের ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, একসময় আমারও পক্স হয়েছিল। তখন আমি ডাবের পানি খাওয়ার পাশাপাশি ডাবের পানি দিয়ে গোসলও করেছি। এখন আধুনিক সময়ে এ রোগের নাকি ওষুধ বের হয়েছে।  

ওরিফুল নামে আরেকজন বলেন, গ্রামে পক্স হওয়ায় সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।  

এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন বর্তমান সময়ে ঝার ফুঁক ও কবিরাজি চিকিৎসার যেমন ভিত্তি নেই, তেমনি চিকেন পক্স নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সবাইকে সু-চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতাল মুখি হওয়ার আহ্বান জানান তারা। এর মধ্যে যারা হাসপাতালে সু-চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকেই এখন রয়েছেন সংখ্যামুক্ত।  

ভুতিপুকর গ্রাম থেকে ভজনপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পক্সের চিকিৎসা নিতে আসা আয়শা বাংলানিউজকে বলেন, ছেলের গত কয়েকদিন ধরে শরীরে পক্স উঠেছে। ঘরোয়া চিকিৎসায় তেমনভাবে সেরে না ওঠায় ডাক্তারের কাছে এসেছি।

ভজনপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. মো. আবুল বাসার বাংলানিউজকে বলেন, চিকেন পক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ হলেও করোনা বা অন্যান্য রোগের মত ভয়ানক নয়। একটু বিশ্রাম ও ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ সময় মত খেলেই সেরে যায়। এটি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। তবে আমরা দেখেছি গ্রামাঞ্চলে এ রোগটির প্রকোপ একটু বেশি। রোগীরা আমাদের কাছে এলে আমরা ওষুধসহ পরামর্শ দিচ্ছি।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডাক্তার রফিকুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে চিকেন পক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে অনেকেই আতঙ্কিত হচ্ছে। চিকেন পক্স আমাদের একটি পুরনো রোগ। এটি শরীরের এক অংশে হলে ছোঁয়াচে হওয়ায় অন্যখানে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। এটি একটা সময় আমাদের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাতেই ভালো হয়ে যায়। তবে বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে এই রোগটি কিছুটা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা বলবো যদি কেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে আদি চিকিৎসা করে থাকলেও, আমাদের মাঝে একটা কুসংস্কার আছে ঝাড়-ফুঁক বা কবিরাজের কাছে যাওয়া। তা না করে আপনাদের এলাকায় আমাদের যে হেল্থ কমপ্লেক্স, সাব সেন্টার বা আমাদের যে কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে সেখানে গিয়ে এ রোগের সু-চিকিৎসা নেবেন। কারণ চিকেন পক্সসহ সব ধরনের রোগের সু-কিৎসা দিতে আমাদের চিকিৎসকেরা সর্বদা প্রস্তুত আছি।

জানা যায়- জেলা শহরসহ তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চিকেন পক্সের প্রকোপ দেখা গেছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড়ে চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলে অনেকেই জনসমুক্ষে আসে না। আক্রান্তরা কেউ কাউকে জানতেও দেয় না। যত পারে গোপনে বা নিরবে চিকিৎসা নেন।  

পঞ্চগড়ে চিকেন পক্সকে বসন্ত বলে চেনে সবাই। আর এই বসন্তকে মহামারি ছোঁয়াচে হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আক্রান্তের বাড়িতে কাউকে আসা যাওয়া করতে দেওয়া হয় না। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় এ রোগে আক্রান্ত হলে তাদের এক ঘড়ে করে রাখার প্রচলনও চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।