ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘অজ্ঞাত রোগে’ আক্রান্ত এক গ্রামের শিশুসহ ৬০ নারী-পুরুষ!

মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২২
‘অজ্ঞাত রোগে’ আক্রান্ত এক গ্রামের শিশুসহ ৬০ নারী-পুরুষ!

নাটোর: অজ্ঞাত ভাইরাসজনিত কারণে নাটোরের গুরুদাসপুরে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন একই মহল্লার শিশুসহ প্রায় ৬০ জন নারী-পুরুষ। প্রায় দেড় বছর ধরে বিভিন্ন চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়েও এই রোগের কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।

ফলে হতাশা আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন আক্রান্ত রোগী ও স্বজনরা।

বৃহস্পতিবার (০৬ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহাবুর রহমান বাংলানিউজকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, তার ইউনিয়নের পাবনাপাড়া এলাকায় এমন রোগের বিষয়টি জানার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হয়। তবে স্থানীয় চিকিৎসকরা বলছেন, এটি ভাইরাসজনিত রোগ এবং এক ধরনের চর্ম রোগ।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে পাবনাপাড়া এলাকায় জনৈক সুলতানের স্ত্রী লিমা বেগমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘামাচির মত বের হয়। পরে ব্যাপক চুলকানোর কারণে লাল হয়ে যায়। তার তিন দিন পরে তার মেয়ের শরীরেও একই লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় তারা প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাসেবা নেন। এতে শরীরে চুলকানি আরও বেড়ে যায়।

একপর্যায়ে নাটোর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। বরং লিমা ও তার মেয়ে এবং পরে প্রতিবেশীদের শরীরেও একই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। আস্তে আস্তে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।

বর্তমানে ওই এলাকায় নারী-পুরুষ শিশুসহ প্রায় ৬০ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত রোগীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘামাচির মত লাল ও গোটা হয়ে গেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেছেন কিন্তু কেউ প্রতিকার পাননি। এমনকি সঠিক রোগ নির্ণয়ও করতে পারেনি কেউ।

লিমা বেগম জানান, দেড় বছর আগে হঠাৎ করেই তার শরীরে ঘামাচির মত বের হয়। এরপর শুরু চুলকানি। ব্যাপক যন্ত্রণায় থাকতে না পেরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। পরে নাটোর শহরের একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। তিনিও বলেছেন এটি একটি চর্মরোগ। ওষুধ সেবনের পরেও কোনো কাজ হয় না। পরবর্তীকালে চর্ম ও মেডিসিন রোগ বিশেষজ্ঞ প্রায় সাতজন ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাননি। এমনকি এই রোগের নাম কি তাও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেননি। এখনও পর্যন্ত তারা জানেন না এটি কোনো চর্মরোগ না অজ্ঞাত কোনো ভাইরাসের কারণে অন্য কোনো রোগ।

আক্রান্ত হাজেরা বেগম, রিমা, সুলতান, মেহেদীসহ আরও অনেকে বাংলানিউজকে জানান, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকায়। এতে অনেক সময় আক্রান্ত স্থানে চুলকানোর কারণে রক্ত বের হয়। ফুলে লাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে তারা আতঙ্কে আছেন। কারণ দিন দিন রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সময় মত চিকিৎসা নিয়ে সারাতে না পারলে এই রোগের ভয়াবহতা আরও বাড়বে।

আক্রান্ত শিশু সুয়াইবার মা জানান, তার ছোট্ট শিশু চুলকাতে না পেরে চিৎকার করে। শিশু বিশেষজ্ঞ, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন। এখনও রোগ থেকে মুক্তি পায়নি। শিশু সন্তান নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মুজাহিদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন, তবে আক্রান্ত রোগীরা এখনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেননি। তাদের হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত রোগী ও আক্রান্ত স্থান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি রোগ নির্ণয় করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২২

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।