ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ক্যান্সার প্রতিরোধ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে রঙিন আলু!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১২
ক্যান্সার প্রতিরোধ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে রঙিন আলু!

ময়মনসিংহ: গোল আলু-১, গোল আলু-২, গোল আলু-৩ ও গোল আলু-৪। সাদা আলুর তুলনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) গবেষকদের উদ্ভাবিত এ ৪ প্রজাতির রঙিন আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন ও ফেনোলিক কম্পাউন্ড।

আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা।

এ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানবদেহে মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ভাতের বিকল্প হিসেবে নিয়মিত এসব প্রজাতির আলু খেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা যেমনি পূরণ হবে তেমনি হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, বয়ঃবৃদ্ধিজনিত বুদ্ধি হ্রাস রোধ এবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করবে, এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা।

গবেষক সূত্র জানায়, ‘এ রঙিন আলুতে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। তবেত নেই কোনো ফ্যাট। ’

গবেষক দলের প্রধান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিম বাংলানিউজকে জানান, ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন্স-মেডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শ্যালি জ্যাংক্স ও অধ্যাপক ড. ফিল সাইমনের কাছ থেকে ২৮টি রঙিন গোল আলুর বীজ এ দেশে নিয়ে আসেন তিনি। এরপর বাকৃবি জার্মপ্ল¬াজম সেন্টারের মাঠ গবেষণাগারে ওই আলু নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু করেন।

প্রায় ৪ বছর গবেষণা শেষে অধিক ফলন ও রোগবালাইমুক্ত ৪ প্রজাতির আলুর নতুন লাইন উদ্ভাবন করেন। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন মাস্টার্স (এম.এস.) অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পিএইচডি ফেলোরা।

উদ্ভাবিত এসব আলু নিয়ে আরও গবেষণার জন্য বর্তমানে একজন কৃষকের জমি ও বাকৃবি জার্মপ্ল¬াজম সেন্টারে গবেষণা চলছে বলে জানান তিনি।

রঙিন প্রজাতির এ আলুগুলো কেমন? জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘গোল আলু-১ প্রজাতিটি দেখতে কালো ও ডিম্বাকৃতির। এর ভেতরের অংশ গাঢ় কালচে থেকে গোলাপি রঙের মাংসলযুক্ত। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ২০ থেকে ২৫ টন।

গোল আলু-২ প্রজাতিটি দেখতে লালচে হলুদ ও লম্বাটে। এর ভেতরের অংশের কেন্দ্র হলুদ রঙের এবং চারদিকে লাল রঙের রিংয়ের মতো আস্তরণ থাকে। উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টন।

গোল আলু-৩ প্রজাতিটি দেখতে হলুদ ডিম্বাকার। এর ভেতরের অংশ গাঢ় হলুদ বর্ণের। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ টন।

গোল আলু-৪ প্রজাতিটি দেখতে কালো ও লম্বাটে। এর ভেতরের অংশ গোলাপি ও লালচে রঙের। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ১৮ থেকে ২২ টন।

বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই এসব আলুর চাষ সম্ভব উল্লেখ করে ড. রহিম আরও জানান, প্রতিটি প্রজাতির বীজ নভেম্বর মাসে রোপন করলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আলু সংগ্রহ করা যায়। এসব ফসলের জন্য উর্বর বেলে-দোআঁশ মাটি উত্তম। তবে এসব প্রজাতি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। কিন্তু মাঝেমধ্যে সেচ দিতে হয়।

রঙিন আলুর পুষ্টিগুণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘রঙিন আলুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন ও ফেনোলিক কম্পাউন্ড থাকে, যার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া হলুদ রঙের আলুতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিনয়েড, বিটা ক্যারোটিন ও লুটেইন এবং বেগুনি রঙের আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভোনয়েড থাকে। এটিরও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা রয়েছে। এ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানবদেহে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ’

ড. রহিম জানান, এ উপাদানটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, বয়ঃবৃদ্ধিজনিত বুদ্ধি হ্রাস রোধ এবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

গবেষক দল সূত্র জানায়, আলুর রঙ যত বেশি গাঢ় হয়, সেই আলুতে তত বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়া রঙিন আলুর মাংসল অংশের তুলনায় চামড়া বা খোসায় প্রায় ১০ গুণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এর ফলে খোসাসহ রঙিন আলু খাওয়ার ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিত।

গবেষক দল প্রধান ড. রহিম বলেন, ‘উদ্ভাবিত এ রঙিন আলুতে ড্রাই ম্যাটার বা শুষ্ক পদার্থ বেশি থাকায় সহজেই কৃষক নিজ ঘরে অনেক দিন এটি সংরক্ষণ করতে পারবেন। ’

বাকৃবি’র হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিম আরও বলেন, ‘এখনো উদ্ভাবিত নতুন আলুর ৪টি জাতের রেজিস্ট্রেশন সরকারিভাবে পাওয়া হয়নি। রেজিস্ট্রেশন মিললে খুব শিগগিরই মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকরা সহজেই এ আলুর চারা রোপণ করতে পারবেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১২

প্রতিবেদন: এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন, সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।