ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু জ্বরে রেকর্ড মৃত্যুর পথে দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
ডেঙ্গু জ্বরে রেকর্ড মৃত্যুর পথে দেশ

ঢাকা: দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে চলতি বছর এবং ডেঙ্গুতে অতীতের মৃত্যুর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশ।

  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক কারণে এবার দেরিতে এসেছে বর্ষা। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়ে দীর্ঘায়িত হয়েছে ডেঙ্গু মৌসুম।

সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই চার মাস হলো ডেঙ্গুর মূল মৌসুম। চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এবছর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেও ডেঙ্গু রোগের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ রোগী এবং মারা যান ১৭৯ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় কম, তবে মৃত্যুর দিক দিয়ে ২০১৯ সালের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।  

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৪৩ হাজার ১০৭ জন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১৭০ জন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুত্র অনুযায়ী দেশে ২০০০ সালে দেশে সাড়ে পাঁচ হাজার রোগী ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে আড়াই হাজার লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় এবং ৪৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালে ছয় হাজার রোগীর মধ্যে ৫৮ জন মারা যান। ২০০৩ সালে ৪৮৬ জনের মধ্যে ১০ জন, ২০০৪ সালে চার হাজারের মধ্যে ১৩ জন, ২০০৫ সালে এক হাজারের মধ্যে চার জন, ২০০৬ সালে দুই হাজারের মধ্যে মৃত্যু হয় ১১ জনের।

২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আড়াই হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কেউ মারা যাননি। ২০১১ দেড় হাজারের রোগীর মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ৬৭১ জনের মধ্যে একজন, ২০১৩ সালে প্রায় দুই হাজারের মধ্যে দুইজন রোগী মারা যান। ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে কেউ মারা যাননি। ২০১৫ সালে তিন হাজারের মধ্যে ছয়জন, ২০১৬ সালে ছয় হাজারের মধ্যে ১৪ জন, ২০১৭ সালে তিন হাজারের মধ্যে আট জন, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জনের মধ্যে ১৭৯ জন মারা যান। ২০২০ সালে দেড় হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয় চারজনের। আর ২০২১ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় সাড়ে ২৮ হাজার, মারা যান ১০৫ জন।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, এবারে ডেঙ্গুরোগী ২০১৯ সালের তুলনায় সংখ্যায় কম, তবে রোগের তীব্রতা এবং ভয়াবহতা অনেক বেশি। এবারে ডেঙ্গুর টাইপ ৩-৪ বেশি জটিলতা তৈরি করছে এবং এ দুই ধরনের ইনফেকশন বেশি হচ্ছে, এর ফলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বা মৃত্যু বেশি দেখা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও করোনার কারণে অনেকের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তুলনামূলক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি অন্যান্য বছর থেকে চলতি বছর ডেঙ্গুতে শিশু ও বৃদ্ধরা তুলনামূলক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা এ দুই বয়সীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। তাই সবকিছু মিলে বলা যায়, এবারের ডেঙ্গু ২০১৯ সালের তুলনায় মৃত্যু এবং ভয়াবহতা বেশি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২২
আরকেআর/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।