ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

ত্রিপুরার পর মমতার চোখ মেঘালয়ে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
ত্রিপুরার পর মমতার চোখ মেঘালয়ে

কলকাতা: আগামী বছর মার্চের দিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের দুই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ত্রিপুরা ও মেঘালয় -এই দুই রাজ্যেই প্রার্থী দিতে চায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল।

ত্রিপুরার পাশাপাশি মেঘালয়কেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা। সেই উদ্দেশ্যে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়ে পৌঁছেছেন পশ্চিমবঙ্গের দুই শীর্ষ নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন থেকেই এক প্রকার বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন দলনেত্রী। শিলংয়ে তীব্র ঠান্ডা। তাই মমতা পরেছেন সাদা হাফস্লিভ জ্যাকেট এবং অভিষেকের গায়ে কালো ফুলস্লিভ জ্যাকেট।

মেঘালয়ে গত বিধানসভা নির্বাচনে যারা জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করেছিলেন, তারা এখন মমতার দলে। কংগ্রেসের ১১ জন বিধায়কই যোগ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ফলে হিসেব মতো পাহাড়ি রাজ্যটিতে এখন প্রধান বিরোধী দল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। এমন সময়ে অভিষেককে নিয়ে মমতার মেঘালয় সফর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সেখানে তৃণমূলের দায়িত্ব রয়েছেন বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তিনি মেঘালয়ে তৃণমূল দলের পর্যবেক্ষক। মুকুল সাংমার নেতৃত্বে মেঘালয়ের ১১ জন জাতীয় কংগ্রেসের বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে মুকুলের হাত ধরেই মেঘালয় জয়ের অঙ্ক কষা শুরু করেছেন মমতা।

মূলত, সেই রাজ্যে নিজেদের বিপন্ন বলে দাবি করে ব্রু সম্প্রদায়সহ একাধিক জনজাতি। তাদের মধ্যে মুকুল সাংমার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। রাজ্যটির ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে একাধিক আসনে এই জনজাতিরা ভোটের ফলের নির্ণায়ক শক্তি। তৃণমূল মনে করছে, মুকুল সাংমার নেতৃত্বে ভোট হলে মেঘালয়ে জয় সম্ভব।

এর কারণ, এমনিতে মেঘালয় রাজ্যে বিজেপির একার কোনো শক্তি নেই। জনজাতিভিত্তিক আঞ্চলিক শক্তির কাঁধে ভর করেই ক্ষমতাসীন জোটে থাকে বিজেপি। বর্তমানে সেই জোটের আঞ্চলিক ন্যাশনাল পিপল পার্টি দলের মুখ্যমন্ত্রী কনরার্ড সাংমা। তার মেয়াদ একেবারে শেষের দিকে।

ফলে এবার মমতা টার্গেট পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নতুন কোনো রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করা। প্রসঙ্গত, আঞ্চলিক দল হিসেবে দিল্লির অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল পাঞ্জাব ক্ষমতায় পেয়েছে। একই ভাবে ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে ভারতের ছোট রাজ্যগুলোর দিকে হাত বাড়িয়েছেন মমতা।

সোমবার দুপুরে শিলংয়ের উমরোই বিমানবন্দরে নামতেই মমতাকে স্বাগত জানান সমর্থকরা। মেঘালয়ের বিরোধী নেতা মুকুল সাংমা বলেন, সর্বভারতীয় তৃণমূলের চেয়ারপার্সন (মমতা) প্রথমবার এখানে এসেছেন। আমরা খুব খুশি। রাজ্যের সমস্ত তৃণমূল নেতা-কর্মী তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন।

টুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, মেঘালয়ের মানুষের ভালবাসা, উষ্ণতা ও সমর্থনের জন্য সবার প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। মেঘালয়ের সুন্দর পার্বত সৌন্দর্যের প্রতীক এবং মানুষের মধ্যে সরলতা হৃদয়গ্রাহী। আমি এখানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে এখানকার মানুষ হেসে স্বাগত জানিয়েছেন, সেই আনন্দমুখর মুখগুলি আমার হৃদয়ে চিরকাল থাকবে। আমি রাজ্যের ইনচার্জ শ্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, রাজ্য সভাপতি শ্রী চার্লস পিংগ্রোপ, বিরোধীদলীয় নেতা ড. মুকুল সাংমা, শ্রী জর্জ লিংডোহ ও শ্রী জেনিথ সাংমাকে তাদের অমূল্য সময়ের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।  

তিনি আরও লিখেছেন, এ রাজ্যের সম্ভাবনা যাচাই করে মেঘালয়ের জনগণকে একটি সমৃদ্ধ জীবনযাপনের যোগ্য পরিস্থিতি তৈরির জন্য আমরা নিশ্চিতভাবে চেষ্টা করব, তাদের কথা শুনব, তাদের চাহিদা বুঝে সর্বদা তাদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেব। আমাদের যাত্রা সবে শুরু হয়েছে, আমাদের অনেক মাইল যেতে হবে। মেঘালয়ের একটি গৌরবময় ভবিষ্যতের জন্য, আমরা চেষ্টা করব।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এর আগে ত্রিপুরা রাজ্য দিয়ে বাংলার বাইরে সংগঠন বিস্তারে পা বাড়িয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আগরতলা নগরনিগম ভোটে পরাজিত হয় মমতার দল। যদিও একজন জয় পেলেও পরে সে বিজেপিতে নাম লেখান।  

অন্যদিকে, গোয়া রাজ্যের বিধানসভা ভোটেও ব্যাপক প্রচার করেও খাতা খুলতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। এসবের পরও মেঘালয়ে দখলে মরিয়া তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। বিষেশজ্ঞদের মতে মমতার সমীকরণ একটাই। মেঘালয়ে বিজেপি ক্ষমতায় নেই। তাই সমর্থন পেলেও পেতে পারে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
ভিএস/ আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।