ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পাশের রাজ্য থেকে ট্রেনে পাথর ছোড়ার কথা শুনেই সরব মমতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
পাশের রাজ্য থেকে ট্রেনে পাথর ছোড়ার কথা শুনেই সরব মমতা

কলকাতা: ভারতের দ্রুতগামী ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়ার অভিযোগ উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গে। তা নিয়ে রাজ্যজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।

রাজ্যের শাসকদল বাদে মুখ খোলে সব রাজনৈতিক দল।  

মমতার দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি বলেছিলেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা। তবে পাথর ছোড়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) প্রকাশ্যে এসেছে আসল তথ্য, যা জানিয়েছে ভারতের রেল কর্তৃপক্ষই।  

এদিন পূর্ব রেলের পক্ষে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ নয়, বন্দে ভারতে পাথর ছোড়া হয়েছিল পাশের রাজ্য বিহার থেকে।

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রেলের জনসংযোগ কর্তা, কলকাতায় দায়িত্বপ্রাপ্ত একলব্য চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, পাথর বিহার থেকে ছোড়া হয়েছে। সেই ছবি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। অভিযুক্ত চার ব্যক্তির গতিপ্রকৃতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, তারা পাথর ছুড়তেই ওখানে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিটি কামরায় সিসিটিভি রয়েছে। সেখানেই এই ছবি ধরা পড়ে। এ বিষয়ে রেলের পক্ষে বিহারের প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হবে।

হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি রুটের বন্দে ভারতে পাথর হামলা ঘটনায় বিহারের নাম উঠে আসতেই বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া প্রতিক্রিয়ায় বাংলা ও বাঙালির বদনামের নিন্দা করেছেন মমতা।  
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বন্দে ভারতে হামলার ঘটনা বিহারে ঘটেছে। বিহারের মানুষের ক্ষোভ থাকতেই পারে। গণতন্ত্রে ক্ষোভ থাকলে তার প্রতিক্রিয়া ঘটে থাকে। সেটা নিয়ে বিহারকে তো অপমান করা যায় না। আমি মনে করি তাদেরও পাওয়ার অধিকার আছে। কেন তারা এই রেল পাবে না? সেখানে বিজেপি নেই বলে?

ভারতের সপ্তম ট্রেন হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বন্দে ভারত আসলে পুরনো ট্রেনকে রং করে দেওয়া হয়েছে, শুধু ইঞ্জিনটা ছাড়া।

তবে বিহারের নাম আসতেই বেসামাল বিজেপি। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, বিহার থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে, তা জানব কী করে? 

বুধবারই (৪ ডিসেম্বর) মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে দিলীপ বলেন, জয় শ্রীরামের বদলার পরিপ্রেক্ষিতে পাথর ছোড়া হচ্ছে না তো? বাংলার মানুষ এই ট্রেনকে আন্তরিকভাবে নিয়েছে। এতে মুখ্যমন্ত্রী বোধ হয় খুব কষ্ট পেয়েছেন।
 
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, বন্দে ভারতে আক্রমণ যারা করছেন তারা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আক্রমণ করছেন। বাংলায় শাসন করছেন দিদি আর বিহারের ক্ষমতায় ভাই তেজস্বী। এটা ভাই-বোনের বিষয়। আসলে সবাই এক। মানুষ সবটাই দেখছে। মানুষ জাতীয় সম্পত্তি ভাঙার বিরুদ্ধে। কাশ্মিরে পাথর ছোড়া কমছে, আর এখানে বাড়ছে। এর থেকে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।

তবে প্রতিক্রিয়া দিয়ে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, বাংলায় যারা রয়েছেন, বিজেপি নেতাদের বাংলা এবং বাঙালি বিদ্বেষ একমাত্র লক্ষ্য। বাংলাঢ় বদনাম করা, বাংলার অপমান করা তাদের একমাত্র কাজ। বাংলার মানুষ সব দেখছে। তারা আগামী নির্বাচনে এর জবাব দেবে।  

টুইট করে দেবাংশু ভট্টাচার্য লেখেন, বিজেপি নেতাদের মিথ্যাচার, বাংলার মুখে কালি লাগানো এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মরিয়া চেষ্টা মাঠে মারা গেল।

পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট। সেই ভোটে এবার প্রায় এক ধরনের ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া এই সেমি-হাইস্পিড ট্রেনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বার পাথর হামলা হয়। ভেঙেছে কাঁচ, ট্রেনের দরজা, যা নিয়ে রেলকর্তারা মুখে কুলুপ আঁটলেও, রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর, হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি লাইনে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম চালু হয় ভারতের সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। হাওড়া স্টেশনে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে ট্রেনর উদ্বোধন করেন মমতা।  
শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে হঠাৎ তাল কাটে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দর্শকদের একাংশ জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেয়। তাতেই বিরক্ত হয়ে মঞ্চেই ওঠেননি মমতা। হাতজোড় করে ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মুখ্যমন্ত্রীকে মঞ্চে ওঠার অনুরোধ করলেও তাতে রাগ গলেনি নেত্রীর।

এরপর সোমবার বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মালদহ জেলার কুমারগঞ্জ এলাকায় পাথর ছুড়ে গেটের কাঁচ ভাঙে দুষ্কৃতকারীরা। সেই ঘটনা রেষ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার আবারও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ছাড়তেই ট্রেনে ইট-পাথর ছুড়ে দুটি কামরার জানালার কাঁচ ভাঙে দুষ্কৃতকারীরা। ঘটনার নিন্দা সর্বত্র হলেও চুপ ছিল ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩
ভিএস/আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।