ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ব্যর্থ ফিরহাদ! ফুরফুরা শরিফের দায়িত্ব পেলেন তপন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
ব্যর্থ ফিরহাদ! ফুরফুরা শরিফের দায়িত্ব পেলেন তপন

কলকাতা: একদিকে নওশাদ সিদ্দিকীর ৪২ দিনের জেলযাপনে ফুঁসছে সমর্থকরা। অন্যদিকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী।

এমন পরিস্থিতিতে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  

ফিরহাদের জায়গায় আনা হয়েছে বিধায়ক তপন দাশগুপ্তকে। ফিরহাদ হাকিম অন্য কাজে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকায়, তপন দাশগুপ্তকে এই পদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।  

তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদে এই পরিবর্তন, রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

এদিকে, দায়িত্ব নিয়েই তপন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, ইমামদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করবেন তিনি। তার দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুরফুরায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। তবে কী কী কমতি রয়ে গেছে, সে বিষয়ে আলোচনাতেই বিশ্বাসী এই বিধায়ক।  

আগামীদিনে পীরজাদাদের পরামর্শ মতো কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন তপন দাশগুপ্ত। শুধু তাই নয়, বিধায়ক জানিয়েছেন, ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করবেন তিনি।

তপন দাশগুপ্তের অভিমত, দিদি (মমতা) যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করতেই হবে। প্রথমেই ফুরফুরায় শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী, কাশেম সিদ্দিকীসহ যত ইমাম আছেন, তাদের সঙ্গে দেখা করব।  

এরই মধ্যে বিধায়ক বড় হুজুর, মেজ হুজুর, ছোট হুজুরের মাজারে প্রণাম সারেন। ফুরফুরার সঙ্গে তার অনেক দিনের সম্পর্ক দাবি করে উন্নয়নের ক্ষেত্রে ফিরহাদ হাকিমের সাহায্য নেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।  

বিধায়ক বলেন, সংখ্যালঘুদের জন্য যা উন্নয়ন করা হয়েছে, ভারতের কোনো মুখ্যমন্ত্রী তা করেননি। তারপরও আমাদের দেখতে হবে কোথাও কোনো ঘাটতি আছে কি না।  

এদিকে, সদ্য জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক তথা পীরজাদা পরিবারের ছেলে নওশাদ সিদ্দিকী। রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ছাড়া বিরোধীদের মধ্যে নওশাদই একমাত্র জয়ি হন। আইএসএফ সেবার নতুন তৈরি হয়ে জোট বেধেছিল বাম দলগুলোর সঙ্গে।

গত ২১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতার ধর্মতলায় কর্মসূচি পালনে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। প্রতিষ্ঠা দিবসে নওশাদ ও তার দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ।  

ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা পরিবারের ছেলে নওশাদকে জামিন না দিয়ে থানায় নানা ধারায় একের পর এক মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ করে আইএসএফ। গত ৪ মার্চ, ৪২ দিন পরে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পান নওশাদ। তপন দাশগুপ্ত জানান, বিধানসভায় নওশাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে তার।
 
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা শরীফের ভূমিকা রাজ্যের রাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই নওশাদের ৪২ দিনের জেলযাপন শাসক দলের প্রতি একাংশের বিরূপ মনোভাব তৈরি করেছে বলেও মনে করছেন একাংশ।  

কাশেম সিদ্দিকী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের ভোটবাক্সে বন্দী করে রেখেছেন। কথায় কথায় বিজেপির ভয় দেখাচ্ছেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে না বলে বারবার মিথ্যা রটাচ্ছেন। ভারতের উত্তরপ্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা-সহ অনেক রাজ্যেই বিজেপি ক্ষমতায়। সেসব রাজ্যে মুসলমানরা ধর্ম পালন করতে পারছে না, এমন কথা শোনা যায় না। বরং পশ্চিমবঙ্গেই এসব হচ্ছে। শাসক দলই নওশাদকে অকারণে বন্দী করে রেখেছে।

অপরদিকে, এর প্রভাব পড়ে পশ্চিমবঙ্গের একটা উপ-নির্বাচনেও। নির্বাচনটি অনেক হিসেব-নিকেশ বদলে দিয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় ২৩ হাজার ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের শাসকদলের প্রার্থীকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই ফল নাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূলকে।  

কারণ, সাগরদিঘির মোট ভোটারের ৬৪ শতাংশই মুসলমান সম্প্রদায়ের। স্বাভাবিকভাবে মুর্শিদাবাদের ওই কেন্দ্রে একটি বড় অংশের ভোট হারাতে হয়েছে তৃণমূলকে। আইএসএফ বিধায়ক তথা ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা পরিবারের সদস্য নওশাদ সিদ্দিকীর গ্রেফতার নিয়ে সংখ্যালঘুদের মনে তৃণমূল সম্পর্কে একটা অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিষয়টির আঁচ পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। তাই কোপ ফিরহাদ হাকিমের ওপর! রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা এমনটাই।

ফিরহাদ হাকিমকে ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের মাথায় বসিয়ে সংখ্যালঘুদের একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মমতা। তবে সংখ্যালঘুদের একটা অংশ এবার তৃণমূলের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বলে ভাবনা তৈরি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ঘনিষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন বলেও সূত্রের খবর।

ভাঙড়ের আইএএসফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে পীরজাদাদের একটা বড় অংশ শাসকদল তৃণমূলের প্রতি অত্যন্ত রুষ্ট। এমনকী প্রকাশ্যে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিবৃতিও দিচ্ছেন।  

রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ফিরহাদ হাকিম টানা কয়েক বছর ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হয়েও নওশাদ-গ্রেফতারি নিয়ে পীরজাদাদের একটি বড় অংশকে বোঝাতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন।

এই বিষয়টিই ভালোভাবে নেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্ভবত সেই কারণেই এবার ফিরহাদকে সরিয়ে হুগলি জেলার বিধায়ক তপন দাশগুপ্তকে ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করেছেন। শোনা যাচ্ছে, শিগগিরই ফুরফুরা শরিফের পীরজাদাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এই বিধায়ক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
ভিএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।