কলকাতা: বিপুল সাড়া ফেলে কর্নাটকে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। ১৩৫ আসন জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে রাহুলের দল।
অপরদিকে, গত নির্বাচনে বিজেপির জেতা ১০৪ আসন থেকে নেমে পেয়েছে ৬৬ আসন। এমনকি, কর্নাটকের ১৫টি উপজাতি আসনের একটিও এবার জিততে পারেনি বিজেপি।
কিন্তু জয়ের পরে কে হবেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এখনও ঠিক করতে পারছে না কংগ্রেস। গোটা কর্নাটকজুড়ে একটাই জল্পনা কে হচ্ছেন তাদের মুখ্যমন্ত্রী? সিদ্দারামাইয়া নাকি শিবকুমার? অথবা তৃতীয় কোনো মুখ? কার্যত এ নিয়ে চরম দ্বিধায় কংগ্রেস হাই-কমান্ড।
এর মাঝেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, আগামী বৃহস্পতিবার (১৮ মে) কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী ও ক্যাবিনেট পদে শপথ গ্রহণ হতে চলেছে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে বিভিন্ন রাজ্যের সমমনস্ক মুখ্যমন্ত্রীদেরও।
ইতোমধ্যে রাজ্যটির রাজধানী বেঙ্গালুরুতে অবস্থান করছেন কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা। সমস্ত বিধায়কদের নিয়ে চলছে ধাপে ধাপে বৈঠক। সিদ্দারামাইয়াকে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিতে সেখানে পোস্টার সাঁটানো শুরু হয়েছে। কিন্তু, বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না কংগ্রেসের হাইকমান্ড।
কারণ, অতীতে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কর্নাটক সামলেছেন সিদ্দারামাইয়া ঠিকই। আবার ওই রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে এবারের ভোটে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শিবকুমার।
কিন্তু, সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে শিবকুমারের লড়াই কারও অজানা নয়। তবে দলের স্বার্থে কেউই এ প্রসঙ্গে ভোটের আগে মুখ খোলেনি। ফলে বিপুল জয়ের পর এখন কংগ্রেসের মাথাব্যথা, কে হবে মুখ্যমন্ত্রী?
শিবকুমার এবং সিদ্দারামাইয়া দু’জনেই ওই রাজ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী নেতা। ইতোমধ্যে এ বিষয় নিয়ে কংগ্রেসের নেতা ও নব নির্বাচিত বিধায়করা এখন দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এরইমধ্যে ৭৫ বছরের সিদ্দারামাইয়া কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছে কংগ্রেসের একটি মহল। কারণ, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তেমন অভিযোগ নেই।
অন্যদিকে, শিবকুমারের পেছনে লেগে রয়েছে ইডি, সিবিআইয়ের মত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো। নির্বাচনের মধ্যেও ইডি তাকে দুবার নোটিশ পাঠিয়েছে। শিবকুমার ভোটের জন্য সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। এখন ভোট শেষ।
ফলে তদন্তকারীর দফতরে আবার ছুটতে হবে তাকে। দুর্নীতির মামলায় বহুদিন তিহার জেলে কাটিয়েছেন এই নেতা তথা কর্নাটকের প্রথমসারির ব্যবসায়ী শিবকুমার।
কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, শিবকুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে ইডি, সিবিআইয়ের তৎপরতা আরও বেড়ে যাবে। যেখানে কর্নাটকের এই নির্বাচনে বিজেপি সরকারের দুর্নীতিকেই অন্যতম ইস্যু করেছিল কংগ্রেস।
কিন্তু, কংগ্রেসের সমস্যা হল দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শিবকুমারই এখন কংগ্রেস দলের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তার মতো অর্থ ও লোকবল নিয়ে দলের পাশে দাঁড়ানোর মত নেতা এইমুহূর্তে কংগ্রেসে দ্বিতীয় কেউ নেই। দলের তুমুল অর্থ সংকট চলছে। এই অবস্থায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে শিবকুমারকে আরও বেশি করে প্রয়োজন হবে কংগ্রেসের।
অন্যদিকে, সিদ্দারামাইয়া অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। রাজ্যের তৃতীয় সর্বাধিক জনগোষ্ঠী কুরবা সম্প্রদায়ের মুখ তিনি।
ফলে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে কে বসবেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কংগ্রেসের পক্ষে মোটেই সহজ হচ্ছে না। যদিও রোববার (১৪ মে) বিকেলে বেঙ্গালুরুতে নতুন বিধায়কদের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে উপস্থিত ছিলেন। খাড়গে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা ঠিক করবেন জয়ী বিধায়কেরা। হাইকমান্ডের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। যদিও সবাই জানে, এটা নিছকই কথার কথা। বরং সিদ্দারামাইয়া ও শিবুকমারকে নিয়ে বিরোধ মাথাচাড়া দিলে তৃতীয় কোনও মুখকে বাছার রাস্তাও ভেবে রাখছে কংগ্রেস হাইকমান্ড।
পাশাপাশি হাইকমান্ডে একটি প্রস্তাব, শিবকুমার ও সিদ্দারামাইয়াকে আড়াই বছর করে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। যদিও সিদ্দারামাইয়ে সরাসরি এই ফরমুলা খারিজ করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, শিবকুমার প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার তারই পাওয়া উচিত। একই কথা আগেই বলে রেখেছেন সিদ্দারামাইয়া।
যদিও কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, শিবকুমারের দিকে গান্ধী পরিবারের সমর্থন আছে। অর্থাৎ রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, সোনিয়ার পছন্দ তাকে। অন্যদিকে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের পছন্দ সিদ্দারামাইয়া।
ফলে এখন দেখার কংগ্রেস হাইকমান্ড কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাকে বেছে নেয়? নাকি নতুন কোনও মুখকে এবার সুযোগ দেওয়া হবে? সেদিকেই কৌতূহল তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৩
ভিএস/এসএএইচ