ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

ভারত

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

কলকাতা: ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে দেশটির শীর্ষ আদালতে বহু মামলা দায়ের হয়েছিল। সেগুলি একত্রে এনে সম্প্রতি শুনানি শুরু করেছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) এ মামলার রায় ঘোষণা হয়।

আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানায়, ২০১৯ সালের জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ সম্পূর্ণ বৈধ ছিল। রাষ্ট্রপতির ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করার অধিকার ছিল। ফলে যা হয়েছে, তা কোনোভাবেই অসাংবিধানিক নয়।

পাশাপাশি আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে। অর্থাৎ, জম্মু ও কাশ্মীরকে এখন থেকে আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে পড়বে না। রাজ্যের মর্যাদা দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকেও সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। এরপর ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংসদে ঘোষণা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরেই বিশেষ মর্যাদা হারায় জম্মু ও কাশ্মীর।

অর্থাৎ ৩৫-এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ভারতীয় ভূখণ্ডে থেকেও জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা যে বিশেষ সুযোগসুবিধা ভোগ করতেন, তা খারিজ হয়ে যায়। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। সেগুলিকে একত্রিত করে চলতি বছরে ২ আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে শুনানি শুরু হয়েছিল।

কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তের প্রায় চার বছরেরও বেশি সময় পর প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ একটি সর্বসম্মত রায় দেন।

আদালতের সেই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, এই রায় কেবলমাত্র আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং একটি আশার আলো, একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি এবং একটি শক্তিশালী ও সর্বোপরি অখণ্ড ভারত গড়ে তোলার সম্মিলিত সংকল্পের প্রমাণ।

তিনি আরও লেখেন, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষকে আমি আরও একবার আশ্বস্ত করে বলতে চাই, আপনাদের স্বপ্নপূরণ করতে আমি বদ্ধপরিকর। কেবলমাত্র কাশ্মীরবাসীরাই উন্নয়নের স্বাদ পাবে তা নয়, ৩৭০ ধারার জন্য যে সমস্ত প্রান্তিক মানুষরা কষ্ট পেয়েছেন, সমাজের সেই প্রত্যন্ত মানুষদের কাছেও এর সুফল পৌঁছে যাবে।

৩৭০ ধারা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের আগে পর্যন্ত ভারতের প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রীয় সরকারের। এমনকি, জম্মু ও কাশ্মীরে কোনো আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না সংসদেরও। আইন প্রণয়ন করতে হলে রাজ্যের সম্মতি নিতে হতো। এছাড়া আলাদা পতাকাও ছিল জম্মু ও কাশ্মীরের।

৩৫-এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, রাজ্যের কে স্থায়ী বাসিন্দা, আর কে নন, তা স্থির করতে পারতো জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ কাশ্মীরে জমি কিনতে পারতেন না। এমনকি স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ ওই রাজ্যে চাকরির আবেদন করতে পারতেন না। দিতে পারতেন না ভোটও। রাজ্যের স্থায়ী নারী বাসিন্দারা বাইরের কাউকে বিয়ে করলে, সেই নারী সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। ২০১৯ সালের পর থেকে এসব নিয়মের বিলোপ ঘটেছে।

অপরদিকে, সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতিক দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) দুই নেতাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যদিও রাজ্যটির লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা সেই দাবি অস্বীকার করে একে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। তার দাবি কাউকে গৃহবন্দি বা রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।