ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

রাহুল নয়, মল্লিকার্জুনকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করার প্রস্তাব মমতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
রাহুল নয়, মল্লিকার্জুনকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করার প্রস্তাব মমতার

কলকাতা: ভারতে শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন বিরোধী সংসদ সদস্যদের ‘গণ সাসপেনশনের’ আবহে দিল্লিতে হয়ে গেল বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ বৈঠক।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপি বিরোধী দলগুলির আসন বণ্টনের সমঝোতা এবং কে হবে জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ।

তবে এ দিন আসন সমঝোতার বিষয় প্রকাশ্যে না এলেও, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে ইন্ডিয়া জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার প্রস্তাব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জানা যায়, বিরোধী মুখ কে হবে? বৈঠকে এমন প্রশ্নে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, মল্লিকার্জুন খাড়গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। সংসদীয় রাজনীতিতে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন। রাজ্যসভায় এখন বিরোধী দলনেতা। তাকেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করা হোক। সমর্থন জানিয়েছেন, আমআদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

তবে মমতার প্রস্তাবের পর মল্লিকার্জুন বলেছেন, গরিবের অধিকারের জন্য রাজনীতি করেছি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নই। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন তা পরে দেখা যাবে। এখন সবাই মিলে একসঙ্গে লড়ে আসন সংখ্যা বাড়ানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত।

মমতার এই প্রস্তাবে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন স্বংয় মল্লিকার্জুন। কারণ, গত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার ব্যাপারে রাহুল গান্ধীর বিষয় আগ্রহ দেখিয়েছিলেন বিহারের নেতা লালু প্রসাদ যাদব। তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন ও শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে।

ধারণা করা হচ্ছে, মমতা জেনে বুঝেই একটা মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন। মমতার প্রস্তাবের অর্থ হলো, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হোক গান্ধী পরিবারের বাইরে কাউকে। তা সে কংগ্রেস থেকে হলেও ক্ষতি নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, সম্প্রতি হিন্দিবলয়ের তিন রাজ্যে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগড়ে বিজেপির কাছে কংগ্রেসের হারের পর লোকসভা ভোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে দর কষাকষিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটভুক্ত রাজ্যের দলগুলি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল। তাই মমতার তরফে আগেই ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ প্রার্থী দেওয়ার আলোচনার। কিন্তু, বিষয়টাতে গুরুত্ব দেননি সোনিয়া গান্ধী। ফলে এ দিনের বৈঠকে একপ্রকার চমক দিলেন মমতা। যদিও পদপ্রার্থীর ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এ দিনের জোট বৈঠকে।

এ দিন দিল্লির অশোকা হোটেলে আয়োজিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে। যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টি (সপা) নেতা অখিলেশ যাদব, বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) প্রধান লালুপ্রসাদ ও তার ছেলে তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) প্রধান শরদ পাওয়ার, দ্রাবিরা মূনেত্রা কাযাগাম (ডিএমকে) প্রধান তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা ঝাড়খান্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতা হেমন্ত সোরেন, মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

বৈঠকে ছিলেন আরও তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আমআদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আপ নেতা তথা পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।

গত ২৪ জুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আয়োজনে পাটনায় বিজেপি বিরোধী ১৭টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতানেত্রীরা ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের দিক নির্দেশ খুঁজতে প্রথম বৈঠক করেছিলেন। এরপরে ১৭-১৮ জুলাই সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত দ্বিতীয় বৈঠকে অংশ নেয় ২৬টি রাজনৈতিক দল। জোটের নাম হয় ‘ইন্ডিয়া’। পুরো নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স। সেদিনই কার্যত মুছে যায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের অস্তিত্ব। এরপরে ২৫-২৬ আগস্ট মুম্বাইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র তৃতীয় বৈঠক হয়েছিল। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ছিল জোটের চতুর্থ বৈঠক। চমক দেওয়া ছাড়া এ দিনও বিশেষ কোনো নির্যাস বের হলো না।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।