ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

‘তিস্তা চুক্তি হতে খুব বেশি দিন লাগবে না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৪
‘তিস্তা চুক্তি হতে খুব বেশি দিন লাগবে না’

নয়াদিল্লি: বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকেই পাশে আছে ভারত। দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমাগত আরও শক্তিশালী ও দৃঢ়তর হচ্ছে।

সেই পথ ধরে দুই দেশের মধ্যে অচিরেই পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান হবে। দিল্লির হায়দ্রাবাদ ভবনে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। চূড়ান্ত কিছু না হলেও বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণভাবে তিস্তা প্রসঙ্গ উঠেছে। যা স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখেই উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুদিনের নয়াদিল্লি সফরে তিস্তা ইস্যু আলোচনায় আসা ঢাকার জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন ভারতের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তিস্তা চুক্তি হলো না। তবে আমি মনে করি এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মাস্টার স্ট্রোক’ করেছেন। শেখ হাসিনার বুদ্ধিমত্তার জন্য তিস্তার বিষয়টি ভারতকে ভাবাতে শুরু করেছে। আমি মনে করি, এই চুক্তি বাস্তব হতে খুব বেশিদিন লাগবে না। ”

গৌতম লাহিড়ী আরও বলেন, ‘আমার ধারণাটা ভিন্ন। তিস্তা যে কারণে হচ্ছিল না, তার একটা বিকল্প পথ ভাবছিলেন শেখ হাসিনা। সেই বিকল্প পথে তিস্তা উপত্যকাজুড়ে একটা প্রকল্প করে, সেখানকার উন্নয়নের কথা তিনি অনেকদিন ধরেই ভাবছেন। শেষ পর্যন্ত আমি মনে করি, এটা শেখ হাসিনার একটা কূটনৈতিক জয়। আপাতত নীতিগতভাবে ভারত এবার রাজি হয়েছে। খুব শিগগির ভারত থেকে একটি টেকনিক্যাল টিম সেখানে যাবে। টিম গিয়ে পরীক্ষা করবে যে নদীর পানি কীভাবে বাড়ানো যায় এবং এই নদীর পানি উভয় দেশ কীভাবে যৌথভাবে ব্যবহার করতে পারে। এতে দুই পাড়ই লাভবান হবে। ’

“এবার কিন্তু ‘বিষয়টা দেখছি, হচ্ছে, হবে’ এমনটা নয়। ভারত কিন্তু এবার বিষয়টা সিরিয়াসলি নিয়েছে। যেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। তার বড় প্রমাণ রংপুরে ভারতের উপ-হাইকমিশন খোলা হচ্ছে। অর্থাৎ ভারত এই প্রকল্পটির ওপর নজর রাখবে এবং তদারকি করবে। ফলে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানের পথে। ”

তিস্তার বিষয়ে চীনের আগ্রহ আলোচনায় এসেছিল। তারপরই ভারত বেশি তৎপর হলো কি না, এমন প্রশ্নে লাহিড়ী বলেন, “চীনের মাথা গলানো মানেই ভারতের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ সেখান থেকে ‘চিকেন নেক’ খুব কাছে। ফলে ওই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি এবং নদী সংক্রান্ত যাবতীয় ডাটা—যা চীনের সংগ্রহ করাটাই মূল উদ্দেশ্য। চীন আসা মানেই তার সঙ্গে তাদের নানা ধরনের লোকজন আসবে। ফলে ভারতের নিরাপত্তার বিষয়ক বার্তাটাই বোঝাতে পেরেছেন শেখ হাসিনা। তিনি ভারতকে বোঝাতে পেরেছেন যে, এটাতে আমরা সমর্থন দিচ্ছি না। আর যে কারণে ভারতের বিষয়টাকে গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। নীতিগত সম্মতি হাসিল করতে পেরেছেন শেখ হাসিনা। ফলে আমার ধারণা, এই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত চীনের হাতে যাবে না। ভারতকেই দায়িত্ব নিতে হবে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। ”

এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, ‘যদি শেষ পর্যন্ত তিস্তা প্রকল্প চীনের হাতে চলে যেত তাহলে এটা ভারতের পক্ষে চিন্তার বিষয় ছিল। শেখ হাসিনা নিজেও সেটা উপলব্ধি করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ এ বিষয়ে ডিটেইল প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করেছে। সেই ডিপিআর কাউকে এখনো দেয়নি। আমি শুনেছি সেই ডিপিআর ভারত সরকার চেয়েছে। ফলে টেকনিক্যাল টিম যখন যাবে, সেই ডিপিআর নিয়ে তখন আলোচনা হবে, পরে বোঝা যাবে। এর পেছনে কতটা লগ্নির দরকার, কতটা অর্থের দরকার, কী ধরনের ব্যবস্থাপনা হবে সেসব ভবিষ্যতে বোঝা যাবে। আমার মনে হয় নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনা কূটনৈতিক জয় নিয়েই দেশে ফিরেছেন। ’

ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিস্তার বিষয়ে সহযোগিতা দরকার। মমতা এ ‍চুক্তিতে সমর্থন দেবেন কি না, এমন প্রশ্নে গৌতম লাহিড়ী বলছেন, “আমার মতে এই প্রকল্পটি এবার মমতাকে বাদ দিয়েই হবে। তার কারণ, এই প্রকল্পটার যে ভৌগোলিক অবস্থান তার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সার্বভৌম ক্ষমতা বাংলাদেশ সরকারের। এখানে ভারতের কোথাও অস্তিত্ব নেই। এই প্রকল্পটি রূপায়ণের পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক, রেল ইত্যাদিতে ভারত সহযোগিতা করছে। সেগুলির কোনোটাই কিন্তু ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে নয়। ভারতীয় সীমানার মধ্যে হলে ভারতের একটি সংবিধান আছে। সেই সংবিধান অনুযায়ী, প্রাদেশিক বা রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনোকিছু করা যাবে না। তবে যে যাই বলুক, আমাদের সংবিধান এতটাই মজবুত যে ভারতের ৭৫ বছরের গণতন্ত্র টিকে আছে। এখানে কোনোদিন সেনাশাসন হয়নি। তবে সংবিধানে অনেকক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা রয়েছে যে, দেশের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকার অনেকটাই এগোতে পারে। ”

তিস্তা চুক্তিতে এখন পর্যন্ত মমতার সম্মতি দেখা যায়নি, ২০২৬ সালে গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন হবে, তখন আবার পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার ভোট। ওই সময়ে মমতা কি গঙ্গা চুক্তি হতে দেবেন? লাহিড়ী বলেন, ‘জ্যোতি বসুর সরকার যখন গঙ্গা চুক্তি করেছিল, তখনো মমতা কিন্তু আপত্তি তুলেছিলেন। তবে আমার মনে হয় না গঙ্গা চুক্তিতে মমতার আপত্তি থাকবে। কারণ এটা নতুন কোনো চুক্তি নয়, নবায়ন হবে। একবার কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়ে গেলে, তা বাতিল করা সম্ভব নয়। তবে আমার ধারণা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, তিনি এটা জানেন। যদিও আন্তর্জাতিক পুরনো চুক্তি নবায়নের জন্য রাজ্য সরকারের অনুমতি লাগে না বলেই আমি জানি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৪
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।