ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ, হাসপাতালে দৃষ্কৃতকারীদের হামলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৪
উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ, হাসপাতালে দৃষ্কৃতকারীদের হামলা

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও বিস্তৃত হয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এতে যোগ দিয়েছে সাধারণ জনতা।

কয়েক দফা দাবি নিয়ে পালিত হয়েছে ‘রাত দখল’ কর্মসূচি।

বুধবার (১৪ আগস্ট) দিবাগত রাত থেকে ভোর ৫টা অবদি কোথাও হয়েছে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, আবার কোথাও আন্দোলন দমাতে দুষ্কৃতকারীরা চালিয়েছে হামলা। সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর করেছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। এতে বিপাকে পড়েন রোগীসহ চিকিৎসকরা।

ব্যাহত হাসপাতাল পরিকাঠামো। অনেক ক্ষেত্রেই নির্বাক পুলিশ। আবার পরক্ষণেই অতি সক্রিয়তায় চলে লাঠিচার্জ এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ।

মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো পশ্চিমবঙ্গ। অপরাধীদের দ্রুত কঠোর শাস্তির বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

শুক্রবার পাল্টাপাল্টি দেষারোপে নানা কর্মসূচি পালন করবে রাজনৈতিক দলগুলোও। পৃথকভাবে পথে নামছে তৃণমূলসহ সবগুলো রাজনৈতিক দল।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিণতি দেখেছে পশ্চিমবঙ্গবাসী। এখন গোটা ভারতের চোখ মমতার বাংলায়। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি, নাগরিক নিরাপত্তা ও বিশেষত নারীদের নিরাপত্তার নানা দাবি নিয়ে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে বুধবার রাতভর চলে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ভারতের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু আগের দিনের ‘রাত দখল’ কর্মসূচি থেকে একাধিক দফায় আরও এক স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

নারী চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীরা রাতভর যে কর্মসূচি নিয়েছিলেন, তা বাংলায় ৩০০টি স্থানে পালিত হয়েছে। পুলিশি তথ্য মতে লক্ষাধিক রাজ্যবাসী রাতভর পথেই অবস্থান করেন। রাত দখল কর্মসূচি পালিত হয়েছে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বাইসহ ভারতের মেগা সিটিগুলোতে।

কলকাতার যাদবপুরের মতো এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। শহরের সর্বত্র প্রায় এ ধরনের জমায়েত লক্ষ্য করা গেছে। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে জমায়েত এবং সন্ত্রাসী হামলা দেখল সেইসব বঙ্গবাসী, যারা কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন।

সর্বত্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হলেও, দুষ্কৃতকারীরা ধ্বংসলীলা চালালো কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে। রাত তখন সাড়ে ১২টা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে তখন উত্তাল হয়ে উঠেছিল হাসপাতালের বাইরের প্রাঙ্গণ। সকলে সমস্বরে তখন একটাই স্লোগান তুলছিলেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। ঠিক সেই ভিড়ে মিশে থাকা একদল দুষ্কৃতকারী আচমকা ব্যারিকেড ভেঙে হামলা চালায় হাসপাতালে। জরুরি বিভাগসহ ১৮টি বিভাগে ভাঙচুর করা হয়। তিনতলা অবদি উঠে যায় হামলাকারীরা। প্রাণ বাঁচাতে পাঁচতলায় চলে যান রোগী ও চিকিৎসকরা। স্যালাইন বোতল নিয়ে ছুটতে দেখা যায় রোগীদের।

আচমকা এই তাণ্ডবে কার্যত হতবাক হয়ে যায় পুলিশ এবং আন্দোলকারীরা। দুষ্কৃতকারীরা ইট বৃষ্টি করতে থাকে পুলিশ, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনতার দিকে। মাথা ফাটে পুলিশের। পর মুহূর্তে চলে পুলিশের টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জ। ভেঙে যাওয়া বিক্ষোভে, পরক্ষণেই আবার জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। দ্রুত এলাকা ছাড়ে দুষ্কৃতকারীরা। ভোর তিনটা অবধি উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তর কলকাতার হাসপাতাল চত্বর।

গত ৯ আগস্ট ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার রুমেই মিলেছিল ছাত্রীটির অর্ধনগ্ন লাশ। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বর্তমানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। শিক্ষার্থীদের দাবি, সেমিনার রুমের তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং আন্দোলন স্তব্ধ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতকারীরা।

এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ফের পথে নামবেন বিক্ষোভকারীরা। বিজেপির নারী নেতাকর্মীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছেন। পৃথক কর্মসূচি নিয়েছে বামেরাও। ১২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে এসইউসিআই নামে অপর একটি বাম সংগঠন। ফাঁসির দাবিতে পথে নামছেন মমতাও। সব মিলিয়ে শুক্রবার আরও সাসপন্সে অপেক্ষা করছে বঙ্গবাসীর জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।