কলকাতা: কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় মামলা হাইকোর্ট থেকে গেল সুপ্রিম কোর্টে। এ মামলার কোনো বিষয়ে হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
এমনটি জানিয়েছেন ভারতের শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) এ মামলার প্রথম শুনানি ছিল দেশটির শীর্ষ আদালতে। পরবর্তী শুনানি আগামী বৃহস্পতিবার।
দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতে চান আদালত। এ জন্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সিবিআইকে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী ২২ তারিখের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট (স্ট্যাটাস রিপোর্ট) জমা দিতে হবে।
এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে প্রাথমিক রিপোর্টের চাওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৪ তারিখ রাতের আন্দোলনে ভাঙচুরের পর কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার, তা উল্লেখ করতে হবে।
আর জি কর মামলার শুনানিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে মমতার পুলিশ এবং প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাতেই আছে পুলিশ ও স্বাস্থ্য দপ্তর। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি মমতাই রাজ্যে পুলিশ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ফলে এ মামলায় তার দিকেই আঙুল তোলেন শীর্ষ আদালত। রাজ্য সরকারের পক্ষে মামলার দায়িত্বে রয়েছেন দিল্লির কংগ্রেস নেতা আইনজীবী কপিল সিব্বল। তাকে এদিন নানা প্রশ্ন করেন আদালত।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের তিন বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গের এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন। কীভাবে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারে, তা নিয়েও নিন্দা জানান তারা। এদিন দুই অংশে মামলার শুনানি হয়।
প্রথম অংশে ছিল পশ্চিমবঙ্গসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে হাসপাতালে ডিউটিরত নার্স এবং নারী চিকিৎসকদের সঙ্গে। ফলে এটি শুধু নির্দিষ্ট কোনো রাজ্যের নয়, গোটা ভারতের। এ ধরনের ঘটনা ভারতে সচেতনতায় আঘাত করছে। প্রধান বিচারপতি অনুশোচনা করে বলেন, আর কত ঘটনা ঘটলে আমরা সচেতন হব? এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য ভারতে চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য গঠিত হলো ‘ন্যাশনাল মেডিকেল টাস্ক কোর্স’।
দ্বিতীয় অংশের পুরোটাই ছিল আর জি করের ঘটনা নিয়ে। সেখানে প্রধান বিচারপতি, রাজ্যের আইনজীবীকে নানা প্রশ্ন করেন। বিচারক প্রশ্ন তোলেন, চিকিৎসক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল একেবারে ভোরের দিকে, সেক্ষেত্রে কেন এফআইআর হল রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে? কেন সেই এফআইআর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করেনি? কেন তার বাবা-মাকে করতে হলো? কেন পুলিশের এত দেরি বুঝতে যে আত্মহত্যা নয় হত্যা?
বিচারক আরও প্রশ্ন তোলেন, কেন প্রথমে আত্মহত্যার কথা বাড়িতে এবং সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল? কার নির্দেশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও আদালত প্রশ্ন তোলেন। যখন অধ্যক্ষের প্রতি সন্দেহ ছিল, তাহলে কেন তাকে সেখান থেকে সরিয়ে মেডিকেল কলেজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল? কেন তাকে বদলি করা হয়েছিল?
তার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিচারকরা প্রশ্ন তোলেন, ১৪ আগস্ট রাত দখল কর্মসূচি ছিল পশ্চিমবঙ্গের নারীদের। তারা বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন। তখন সাত হাজারের বেশি বহিরাগত লোক হাসপাতালে কীভাবে তাণ্ডব চালালেন? কীভাবে তারা হাসপাতালের ভেতর ভাঙচুর করলেন? পুলিশ থাকার পরও কীভাবে তারা হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ভেঙে দিলেন? হত্যার ঘটনা যেখানে ঘটেছিল, সেই স্পটেও যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এসব কি রাজ্যের পুলিশ বা পুলিশ মন্ত্রী জানতেন না? যারা সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন, কেন পুলিশ তাদের সমন পাঠাচ্ছে।
পাশাপাশি শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলার জন্য আর জি কর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করছি। চিকিৎসকেরা যাতে আবার কাজে ফিরতে পারেন, তাই এমন সিদ্ধান্ত। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের এবার কাজে ফিরবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৪
ভিএস/আরএইচ