ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

শীতের আগমনী বার্তায় খেজুরের রসের খোঁজে ব্যস্ত ‘শিউলি’রা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
শীতের আগমনী বার্তায় খেজুরের রসের খোঁজে ব্যস্ত ‘শিউলি’রা

কলকাতা: শীত আর খেজুর রস যেন একে অপরের সমার্থক। আর তাই শীতের আগমনী বার্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাংলার খেজুর রস সংগ্রহকারীরা, যাদের পশ্চিমবঙ্গের ভাষায় ‘শিউলি’ বলা হয়।

এই সময়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকাগুলো থেকে খেজুর রস সংগ্রহের ধুম পড়েছে। খেজুর গাছ পরিষ্কার এবং রস সংগ্রহের জন্য ভোর থেকেই ব্যস্ত থাকেন শিউলিরা।

এ রস থেকেই তৈরি হবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী নলেন গুড়, পিঠাপুলি, মিষ্টি ইত্যাদি। এ গুড় দিয়েই তৈরি হয় জয়নগরের মোয়া। জয়নগর দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি অঞ্চলের নাম।  

সুগন্ধি কনকচূড় ধানের খই, নলেন গুড় আর ক্ষীরের মিশ্রণে যে মিষ্টি প্রস্তুত হয়, সেটিই জয়নগরের মোয়া। এ মোয়া ভারতে জিআই স্বীকৃত এবং এ মোয়া গোটা বিশ্বে জনপ্রিয়। সারা বছর এ সময়েই তৈরি হয় মিষ্টিটি।

শিউলি দুলাল দাশের মতে, নলেন গুড়ের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কিন্তু খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। বাংলার এ ঐতিহ্যকে বাঁচাতে হলে খেজুর গাছ রোপণে আরও উদ্যোগী হতে হবে। নইলে শিগগিরি হারিয়ে যাবে নলেন গুড়ের প্রকৃত স্বাদ।  

তিনি বলেন, শীতের ঠান্ডার তীব্রতা সঙ্গে সরাসরি রসের জোগানের ওপর প্রভাব ফেলে। শিউলিরা জানাচ্ছেন, এখনো যথাযথ ঠান্ডা না পড়ায় রসের পরিমাণ কম, যা গুড় তৈরিতে তাদের সমস্যায় ফেলছে।

এরইমধ্যে রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার শিউলিরা ভিড় জমাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগর,বাসন্তী, কুলতলীসহ বিভিন্ন এলাকায়। এ সময়ে তারা ঘরছাড়া হয়ে ভিনজেলায় জীবনযাপন করবেন।

ঐতিহ্যবাহী নলেন গুড় আর জয়নগরের মোয়া সংরক্ষণের জন্য স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রশাসনকেও আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।

ক্যানিং অঞ্চলের এক গাছি বলেন, পুরো শীত মৌসুমজুড়ে ব্যস্ত সময় কাটাব আমরা। এ বছর রস সংগ্রহের জন্য এখনো পর্যন্ত অনেক গাছ প্রস্তুত করেছি আমরা। আগামী পাঁচ মাস ভালই উপার্জন হবে।  

তবে তাদের ভয় একটিই, আর তা হলো বাজার ছেয়ে যাওয়া নকল খেজুর গুড়। এরইমধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে খেজুর গুড়। তারা বলছেন, এখনো সেভাবে রস সংগ্রহ হলো না, অথচ বাজারে গুড় এসে গেল!

সাধারণরা খুব একটা খাঁটি খেজুর গুড় চেনেন না। গুড়ের মিষ্টতা আর ঘ্রাণ -এ দুই দেখেই তারা খেজুর গুড় কিনে থাকেন। কিন্তু এই দুই বিষয় সহজেই নকল করা যায়। ফলে গ্রাহকরা ঠকে যাওয়ার পাশাপাশি তারা লোকসানের মুখ দেখে থাকে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকার শিউলিদের।  

খেজুরের রস শুধু পানীয় বা মিষ্টি তৈরির উপকরণ নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। তাই খেজুর গাছ রোপণ ও গুড় রক্ষার এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সবাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।