ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ভারতে নোট বাতিল এবং তার আর্থ-সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
ভারতে নোট বাতিল এবং তার আর্থ-সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ভারতে ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত  শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। একদিকে ‘ব্ল্যাক মানি’ বাজেয়াপ্ত।

কলকাতা: ভারতে ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত  শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। একদিকে ‘ব্ল্যাক মানি’ বাজেয়াপ্ত।

অন্যদিকে জাল নোটের বাড়বাড়ন্ত রোখা। নোট বাতিলের ঘোষণা যে সামাজিক ক্ষেত্রেও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে সেটা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণার তিনদিন পরে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) রাতে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক ভাষণে ঘোষণা করেন ঐ দিন রাত ১২টা থেকে বাতিল হয়ে যাচ্ছে ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট। ভারতবাসীর কাছে ছিল আদ্যপ্রান্ত ‘সারপ্রাইজ’। বিষয়টি বুঝতেই সাধারণ মানুষের কয়েক ঘণ্টা সময় কেটে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যায় কি ভাবে বাতিল হওয়া নোট পাল্টাতে পারবেন সাধারণ মানুষ।

এর আগেও ভারতে নোট বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণার পরে যে পরিস্থিতি শুরু হয়েছিল তা অভিনব। কয়েকটি ঘটনা পরপর জুড়লে সেটি উপলব্ধি করা যেতে পারে। প্রথমেই সাধারণ মানুষ অবাক হয়ে যান এই ভেবে কেন এই সিদ্ধান্ত নিলো ভারত সরকার। যদিও নরেন্দ্র মোদী তার ভাষণে নোট বাতিলের কারণ হিসেবে দুটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন। প্রথমত দেশে জমা থাকা ‘ব্ল্যাক মানি’ উদ্ধার এবং ভারতের অর্থনীতিতে থাকা জাল নোট বাজেয়াপ্ত করা।
তাদের দ্বিতীয় চিন্তা আসে কি ভাবে তারা হাতের নোটগুলি বদল করবেন।

অর্থনীতিবিদরা বেশ কয়েকটি সরাসরি প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন। প্রথমত যারা আইনি পথে অনেক পরিমাণ নগদ নিজেদের কাছে রেখেছিলেন তারা সেগুলি ব্যাঙ্কে জমা দেবেন। এরফলে আগামী দিনে ব্যাঙ্ক বেশি পরিমাণে ঋণ দিতে পারবে এবং কমতে পারে ঋণের উপর নেওয়া সুদের হার।

বেআইনি নগদ অর্থের মালিকরা অর্থ লুকোনোর আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। কিন্তু তাদের জন্য সরকার রেখেছে ২০০ শতাংশ জরিমানার মতো কড়া ব্যবস্থা। ফলে বাড়তি আয়কর পাবে সরকার। অর্থনীতিতে অর্থের  জোগান কম হওয়ায় কিছুটা কমবে জিনিসপত্রের দাম।
অনেকেই মনে করছেন ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট বাতিল করে ২০০০ রুপির নোট বাজারে নিয়ে আসা সরকারের দ্রুত নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত । কিন্তু বিভিন্ন সূত্র মারফৎ যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে ২০০০ রুপির নোট বাজারে নিয়ে আসা ছিল অন্তত ৬ মাস আগের নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত।

জানা যাচ্ছে গত ছয় মাস আগে থেকেই মাইসুরুর সরকারি ছাপাখানায় কড়া সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ছাপা শুরু হয়েছিল ২০০০ রুপির নোট। যা জমা করা হচ্ছিল দিল্লীর রিজার্ভ ব্যাংকের সদর দপ্তরে। নোট বাতিলের পরবর্তী ঘটনাগুলি চমকপ্রদ।

পরের দিন অর্থাৎ বুধবার (৯ নভেম্বর) ব্যাঙ্কগুলি বন্ধ থাকায় মানুষ বাতিল নোট বদল করতে পারেনি। ব্যাঙ্ক খুলেই সেখানে লম্বা লাইন পরে। বাজার দোকানে বাতিল নোট নিতে বেশিরভাগ জায়গায় অস্বীকার করা হয়। এটিএম গুলি বন্ধ রাখা হয়। যদিও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বাতিল নোট গ্রহণ করার কথা সরকারের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এর মধ্যে অন্যতম ক্ষেত্র ছিল চিকিৎসা পরিষেবা, জ্বালানি তেল, রেল, বিমানের টিকিট প্রভৃতি। কিন্তু সেখানেও হয়রানির স্বীকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে।

বিয়ের মরসুম থাকায় কেনাকাটার ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দেয়। কোথাও কোথাও কালোবাজারির খবর পাওয়া যায়। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাসি শুরু হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে বাজেয়াপ্ত হয় নগদ অর্থ। খবর আসতে থাকে গণ্য ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট ভাসিয়ে দেবার। কোথাও বস্তা বন্দি পুড়িয়ে দেওয়া নোট উদ্ধারের খবর আসতে থাকে।

জ্বালানি তেলের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়ে ২০০ রুপি প্রতি লিটারে পৌঁছেছে।   পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের বাজার দোকানে সাধারণ দিনের থেকে ব্যবসা অনেকটাই কমে যায়। কলকাতার রেস্তরাঁগুলিতে ব্যবসা প্রায় নেমে এসেছে দশ শতাংশে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এক সুরে সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছেন। একই সুরে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে জাতীয় কংগ্রেস এবং বামেরা। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী  জাপান সফররত অবস্থায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন আগামী দিনে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন গোটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। তিনি দেশের জনগণকে সরকারের পাশে থাকতে অনুরোধ করেছেন। তবে জনগণের সমস্যা হলেও তারা ‘ব্ল্যাক মানি’ রোধের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক মানসিকতাই দেখিয়েছেন। তবে বাজারে খুচরো নোটের সংকট সাধারণ মানুষকে যথেষ্ট সমস্যায় রেখেছে। আগামী কিছুদিন এই সমস্যা চলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।   এখন দেখার আগামী দিনে নরেন্দ্র মোদীর এই কড়া সিদ্ধান্ত ভারতের আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় কতটা প্রভাব ফেলে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৫২১ ঘণ্টা, ১৩ নভেম্বর , ২০১৬
ভিএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।