ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কথা দিচ্ছি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে না: মমতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
কথা দিচ্ছি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে না: মমতা

কলকাতা: পরপর দুইদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক নিয়ে অস্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও আড়ালে তৃণমূল সুপ্রিমোর এবারের দিল্লি যাত্রায় অখুশি রাজ্য বিজেপি শিবির।

বিজেপি অখুশি হওয়ার অন্যতম কারণ, মমতার হঠাৎ দিল্লি সফরে রাজ্যের বকেয়া অর্থ সহজে আদায় করার পথ সুগম হওয়ার পাশাপাশি এনআরসি (জাতীয় নাগরিকত্ব তালিকা) নিয়েও পশ্চিমবঙ্গকে আশ্বস্ত করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

তবে মমতার দু’দিনের (১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর) সফরের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তার প্রথম বৈঠকেই আগ্রহ ছিল দেশবাসীর।

আর সেখানেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার আপত্তি শুনে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অমিত শাহ।

যেখানে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবাংলায় হুঙ্কার দিচ্ছেন ‘ক্ষমতায় এলে এ রাজ্যেও এনআরসি হবে এবং দু’কোটি মানুষ বাদ যাবে’, সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মমতাকে আশ্বাস দেওয়ায় স্বভাবতই অখুশি রাজ্য বিজেপি শিবির।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফিরেই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বলেন, ‘পশ্চিমবাংলার মানুষদের বলেছি, এনআরসি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হবেন না। আমি কথা দিচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে না। অন্তত আমি বেঁচে থাকতে হবে না। আমার সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা হয়েছে। একটা অংশ থেকে পশ্চিমবাংলায় এনআরসি নিয়ে যে ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের কী মত, তা সবারই জানা। ’

‘তবে আমি পশ্চিমবাংলা নিয়ে সেভাবে কথা না বললেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আসামে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে, তাদের নাম সংযুক্ত করার অনুরোধ করেছি। কারণ এনআরসি তালিকা থেকে যে ১৯ লাখ লোকের নাম বাদ পড়েছে, তাদের মধ্যে অনেক বাংলাভাষী রয়েছেন। হিন্দি ভাষাভাষীর পাশাপাশি গোর্খা (দার্জিলিং) ভাই-বোনেরাও রয়েছেন। তাদের কোনোভাবেই বাদ দেওয়া চলবে না। যারা প্রকৃত ভোটার, তাদের দেশ থেকে তাড়ানো যাবে না। আচমকা ১৯ লাখ লোককে কেন তাড়িয়ে দেওয়া হবে? তারা কোথায় যাবেন?’ 

মমতা আরও বলেন, এনআরসি ইস্যুর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের মতো যে রাষ্ট্রগুলোর সীমান্ত রয়েছে, তা সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে রাজ্যকে সবসময় সাহায্য করা হবে বলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন।

দিল্লিতে গিয়ে প্রথমদিন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে রাজ্যের বকেয়া আদায় করা এবং দ্বিতীয়দিন এনআরসি ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বস্ত হওয়া, মমতার দু’দিনের সফরের সারসংক্ষেপ এই।  

মুখ্যমন্ত্রীর দু’দিনের হঠাৎ দিল্লি সফরে রাজ্য বিজেপির যেমনি জল্পনা থামেনি, তেমনি এ সফর নিয়ে বাম-কংগ্রেস রাজনৈতিক মহলেরও কৌতুহলের শেষ ছিলনা। তাদের বক্তব্য, মোদী ভাই ও মমতা দিদি, অর্থাৎ ভাই-দিদি বৈঠকে বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাত হয়ে গেছে। তাই বিজেপি নিয়ে নবান্নে কিছু বললেন না মুখ্যমন্ত্রী।

এনিয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক মূল্য এখন শূন্যে এসে ঠেকেছে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যা সাংগঠনিক শক্তি, তাতে তৃণমূলকে আমাদের কোনোভাবেই দরকার নেই। বরং এখানকার শাসক শিবিরকে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করার কাজে আমরা তৈরি হচ্ছি। তাই রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে যারা অবগত নন, সেই অবিবেচকরাই আঁতাতের তত্ত্ব দাঁড় করাচ্ছে।

বিজেপির রাজ্য কমিটির আরও এক নেতা বলেন, আগের জমানা আর নেই। রাজনাথ সিং, অরুণ জেটলিকে ধরে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রভাবিত করতে মমতার দীর্ঘদিনের যে ছক, এখন সেটি আর চলবে না।

তবে রাজ্য বিজেপি মুখে যাই বলুক না কেনো, স্বভাবতই তারা অখুশি। কারণ দুই দিনের সফরে রাজ্যের যা প্রয়োজন তা আদায়ের দিকেই অগ্রসর হতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
ভিএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।