ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতার রেস্তোরাঁয় মিলছে না পেঁয়াজনির্ভর খাবার 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯
কলকাতার রেস্তোরাঁয় মিলছে না পেঁয়াজনির্ভর খাবার 

কলকাতা: গোটা ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া। বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) কলকাতার পাইকারি বাজারেই কেজিপ্রতি পেঁয়াজ একলাফে একশো রুপি ছুঁলো। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতীতে কখনও পেঁয়াজের দাম এতটা বাড়েনি। এর জেরে কলকাতার মধ্যবিত্তদের সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদেরও মাথায় হাত পড়েছে।

খুচরো ব্যবসায়ীরা ঠাওর করে উঠতে পারছেন না, কত দামে তাদের বিক্রি করা উচিত।  

১৩০ থেকে ১৫০ রুপির নিচে কীভাবে বেচবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারণ পেঁয়াজ পচনশীল সবজি। তাদের মতে, বস্তাপিছু দুই থেকে তিন কেজি পেঁয়াজ এমনিতেই পচে যায়। এর সঙ্গে দাম বাড়ায় ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। ফলে আরও বেশিদিন পেঁয়াজ রাখতে হবে।  

এতে পচনের সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। তাই কোনো মতেই ১৩০ থেকে ১৫০ রুপির নিচে পেঁয়াজ বেচা সম্ভব নয়। তবে এর চেয়ে পেঁয়াজ বিক্রিই বন্ধ করে দেওয়া শ্রেয় বলে মনে করেন অনেক খুচরা বিক্রেতা।
একদিকে যখন কলকাতায় কী হবে পেঁয়াজের ভবিষ্যত- তা নিয়ে ভাবাচ্ছে ব্যবসায়ীমহলকে। এ পর্যায়ে কার্যত হাত তুলে নিলেন কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টনমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান।  

গোটা দেশে বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১০০ রুপি হলেও সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা।

এদিন কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টনমন্ত্রীর উত্তর সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিয়েছে বলে মত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী পাসোয়ান বলেছেন, আমাদের কিছু করার নেই। চাহিদা বেশি। জোগান কম। তাই পেঁয়াজের এই আকাশছোঁয়া দাম।  

তার যুক্তি, অকাল বৃষ্টি ও চলতি বছর উৎপাদন ২৬ শতাংশ কম হওয়াতেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।  

একই সঙ্গে পাসোয়ান বলেন, রাজ্যগুলোয় কোথাও কত পেঁয়াজ মজুদ আছে, তা রাজ্য সরকাররেই দেখার দায়িত্ব। পশ্চিমবঙ্গসহ সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এ ব্যাপারে চিঠিও লেখা হয়েছে।  

‘কোন রাজ্যে কোথায় কত পেঁয়াজ বেআইনি মজুদ আছে, তার পাশাপাশি বাজারে পেঁয়াজের দাম কত, তার রিপোর্ট সপ্তাহে সপ্তাহে কেন্দ্রকে পাঠাতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। ’

কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে শেষ ৫৭ হাজার টন পেঁয়াজ মজুদ করা ছিল। কিন্তু সেগুলো সবই সরকারি সংস্থার মাধ্যমে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।  

তাই সরকারের ভাঁড়ার আপাতত প্রায় শূন্য। পেঁয়াজ এই মুহূর্তে এতটাই দুর্মূল্য যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে আধার কার্ড জমা দিলে তবেই মিলছে সরকারি দামে পেঁয়াজ।

কলকাতার অনেক রেস্তোরাঁ থেকে পেঁয়াজু, পেঁয়াজ ধোসা বা মটর্ন দো-পেঁয়াজার মতো পেঁয়াজনির্ভর খাবারগুলো আপাতত মেনুকার্ড থেকে সরে গেছে।  

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা জানান, এসব খাবারের মূল উপকরণই পেঁয়াজ। ১৩০ রুপি দিয়ে পেঁয়াজ কিনে কখনই ২০ রুপির পেঁয়াজু বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই পেঁয়াজ উপকরণ জাতীয় খাবার আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
 
এদিকে এই ইস্যুতে ভিতরে ভিতরে আমজনতার আক্রোশ ও বিরোধীদের চাপ সামলাতে চাপে তুরস্ক থেকে ১১ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। যদিও সেগুলো জানুয়ারি মাসের আগে ভারতে এসে পৌঁছাবে না।  

তুরস্কের পাশাপাশি মিশর থেকে ৬ হাজার ৯০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। হল্যান্ড থেকেও পেঁয়াজ আনা হবে বলে ঠিক করেছে সরকার।

ফলে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ ভারতবাসীর সঙ্গে পেঁয়াজ নিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছে মোদী সরকারও।  

কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচ মন্ত্রীর একটি বিশেষ কমিটি গড়তেও বাধ্য হতে হয়েছে। যার প্রধান করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
ভিএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।