মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা প্রাঙ্গণে বই কেনার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আপনিও তাহলে দর কষাকষি করে বই কেনেন? হঠাৎ প্রশ্নে, বাংলানিউজের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলেন পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এবারের বইমেলায় লেখক তথা নাট্যকার ব্রাত্য বসুর বইও প্রকাশ পেয়েছে। বইটির নাম ‘যে কথা বলনি আগে’। তবে, সে কথা ভিন্ন।
মঙ্গলবার তিনি রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন থেকে কর্মব্যস্ত দিন শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে ঘুরে গেলাম বইমেলায়। তবে, এদিন শুধু তার লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ঘুরে বাংলাদেশি বই কিনার। শুধু কেনা নয়, একবারে সাধারণ রাজ্যবাসীর মত দর-দাম করে কিনলেন বই। যেমন, দিব্যপ্রকাশে বইয়ের মূল্য দিতে দেওয়ার সময় ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, আপনি কেনো বইয়ের ২০ পার্সেন্ট ছাড় দিচ্ছেন? মেলার সব স্টলগুলোই তো ৩০ পার্সেন্ট ছাড় দিচ্ছে। কিছুটা হকচকিয়ে ৩০ পার্সেন্ট ছাড় দিলো প্রকাশনা সংস্থাটি। তারপরই মন্ত্রীকে হঠাৎ প্রশ্নটি করেছিলো বাংলানিউজ।
কেমন লাগছে এবারের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন? পশ্চিমবঙ্গের তথ্যমন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, চমৎকার! পুরো প্যাভিলিয়ন দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ভবনেই দাঁড়িয়ে আছি। প্রতিবারই আসি বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে, বই কিনি। এবার সাতদিন সময় পেলাম তাই চলে এসেছি বইমেলায়।
আজ আর কোথায় কোথায় যাবেন? তিনি বলেন, আজ আর কোথাও যাবো না। তবে মেলা তো বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে এলো। তাই ঠিকই করেছি আজ শুধু নজর রাখবো বাংলাদেশি বইয়ে উপর।
কলকাতা বইমেলায় এবারে বাংলাদেশ প্যাভিলিনের থিম ‘বাংলাদেশ ভবন’।
পশ্চিমবঙ্গের তথ্যমন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, শুধু বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন নয়, আমি বাংলাদেশ গেলেও অনেক বই কিনি। ওখানে আজিজ মার্কেট থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে যে, বইয়ের স্টলগুলো আছে। সে জায়গায় আমি একা একা ঘুরি এবং নিজের পছন্দ মত বই কিনি।
দুই মলাটের বই কী আজকের ডিজিটাল যুগে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ব্রাত্য বসু বলেন, দেখে কী মনে হচ্ছে, এত লোক নানা ধরনের বই কিনছে, ঘুরছে ফিরছে। ডিজিটাল হয়তো মলাট বইপড়া কিছুটা কমিয়েছে, কিন্তু আগের থেকে পাঠক সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
আপনি জানেন ২০২০-২১ সালকে বাংলাদেশে মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর এবং বাংলাদেশের সব খবরই রাখি, কাজেই এক কথায় যদি বলা যায়, মুজিব আমার কাছে এক মহান নেতা। যেভাবে তিনি স্বাধীনতা এনেছেন এই উপমহাদেশের জন্য একটা দৃষ্টান্ত। আর ভাষার জন্য এত রক্তক্ষয়ী, এত বলিদান, এত ত্যাগ, বিশ্বের কোনো দেশে আছে বলুন, আমি এখনো মনে করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু, সেক্যুলার ফোর্সের পক্ষে এই উপমহাদেশে একটা বড় আঘাত। সেক্যুলার ফোর্সকে যেভাবেই হোক বাঁচিয়ে রাখতে হবে, কারণ চারিদিকে মৌলবাদ হানা দিচ্ছে। ‘ভারতেও একটা উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলছে। ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকার যা করছে তা ভাবা যায় না, কীভাবে তারা আরএসএসের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ) দর্শন মানুষকে গ্রাস করছে তা কোনোমতেই মানা যায় না। এ নিয়ে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলন করেছেন এবং চলেছে। একজন সাধারণ ভারতবাসী হয়ে চাইবো অচিরেই কেন্দ্রীয় সরকার তার ভুল বুঝতে পারবেন।
কলকাতা বইমেলার পুরো নাম ‘আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা’, কী মনে হয় একুশে বইমেলায় আন্তর্জাতিক তকমা লাগা উচিত?
তিনি বলেন, আমি একুশে বইমেলায় দুই বার গিয়েছি, অনেক বড় পরিসরে মেলা হয় সেখানে, অনেকদিন ধরে চলে, সেই বইমেলার একটা নিজস্ব স্বভাব আছে, নিজস্ব ভঙ্গি আছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি পৃথিবীর অনেক দেশই বাংলাদেশের বইমেলার খোঁজ রাখে। কী দরকার থাক না নিজের স্বভাব-ভঙ্গিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২০
ভিএস/এএটি