৪৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় স্রোতের বিপরীতে এ কাজটিই করে চলেছে ‘সবুজপত্র’ প্রকাশনা নামে একটি সংস্থা। পুরনো চাল ভাতে বাড়ে মতেই বিশ্বাসী তারা।
বড় বড় প্রকাশনা সংস্থার বাইরে যখন নতুন বই কেনার লাইন, ভেতরে উপচে পড়ছে ভিড়, তখন নিঃশব্দে অমূল্য সব বইয়ের পশরা সাজিয়ে ভিড় টানছে সবুজপত্রের স্টল। স্টলটির আকার বেশ ছোট। এতোটাই ছোট যে, তাতে এক সঙ্গে আট-দশজনের বেশি লোক ঢুকতে পারবে না। কিন্তু এই গুহা থেকেই প্রাচীন বই নেড়েচেড়ে আর কিনে হাসিমুখে বেরিয়ে আসছেন অনেকেই।
আর পাঁচটা স্টলের মত নতুন বইয়ের গন্ধ নেই এখানে, কিন্তু আছে মহামূল্যবান প্রাচীন সব গুরুত্বপূর্ণ বই। আর সে সব ঘিরে উৎসাহী বইপ্রেমীদের ভিড়ও লক্ষ্যণীয়।
চমকের এখানেই শেষ নয়। স্টলের ভেতরে কাঠের দেওয়ালে বড় বড় অক্ষরে এও লেখা যে, কারো বাড়িতে বিক্রির উদ্দেশ্য পুরনো বই থাকলে সবুজপত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বইমেলায় সাধারণত পাঠক যান বই কিনতে। কিন্তু এ স্টলটিতে বই কেনার পাশাপাশি বিক্রিরও সুযোগ আছে। সবুজপত্র আবার সংগ্রহ করা সেসব বইও বিক্রি করে অন্য পাঠকদের কাছে।
ব্যতিক্রমী এ প্রকাশনা সংস্থার কাণ্ডারি শুভাশিস ভট্টাচার্য। এ প্রকাশনা সংস্থা সম্পর্কে তিনি জানান, এটাই তার নেশা ও পেশা। বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহের পর বিক্রি করে তার প্রকাশনা। বংশ পরম্পরায় তিনি এ কাজ করছেন বলে জানান।
তিনি জানান, সবুজপত্রের স্টলে প্রায় সব বইয়েরই বয়স দেড়শ’ বছর বা তার বেশি। এবারের মেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সই করা বই যেমন ছিল, তেমনি ছিল তার প্রথম ছাপানো বই। সাহিত্য, সিনেমা থেকে শুরু করে অপরাপর শিল্পমাধ্যমের বইও আছে এ স্টলে। গবেষণামূলক কাজের জন্য দরকার এমন অনেক বইও রয়েছে এখানে। আগেকার দিনে যখন বিজ্ঞাপনের বাজার রমরমা ছিল না, তখন সিনেমা হলে এক ধরনের বুকলেট দেওয়া হতো। তাতেই বিভিন্ন জিনিসের প্রচার বা বিজ্ঞাপন করা হতো। সেরকম বুকলেটও সংগ্রহে আছে সবুজপত্রের।
মজার ব্যাপার হলো এ স্টলে বইয়ের দাম নির্ধারণ করা হয় গুরুত্ব অনুসারে। মলাটে লেখা মূল্য সেখানে বিবেচ্য নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুরনো বই, যার কোনও দ্বিতীয় সংস্করণ নেই, তার কোনও দাম হয় না। সেগুলো অমূল্য। পাঠকের হাতে তেমন সব বইই তুলে দিচ্ছে সবুজপত্র।
এ স্টলের অন্যতম সুবিধাভোগী একজন বাংলা সাহিত্যের গবেষক সন্দীপ মুখার্জী। এখানে বই কেনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার গবেষণার জন্য কিছু বই খুঁজছিলাম, কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষমেশ এখানে সেগুলো পেয়েছি। এর থেকে খুশির কথা আর কী হতে পারে! গবেষণা বা জ্ঞান অর্জনের জন্য বহু প্রাচীন বই যেমন রয়েছে এ স্টলে, তেমনি ছোটদের আকর্ষণ করতেও অনেক বয়ই আছে এখানে। সব বয়সের পাঠকই ভোক্তা হতে পারে সবুজপত্রের। এখানকার পুরনো বই যেন সমান তালে পাল্লা দিচ্ছে নতুন বইয়ের সঙ্গে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) শেষ হবে ১২ দিনব্যাপী কলকাতা বইমেলার ৪৪তম আসর। গত ২৯ জানুয়ারি শুরু হয় এ মেলা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০
ভিএস/এইচজে