বইমেলা প্রাঙ্গণের একটি স্টলের সামনে টুলের ওপর বসে নাগাড়ে এই হাঁক দিয়ে চলেছিলেন এক যুবক। তার অফারে কিন্তু সাড়াও পড়েছে ভালো।
এক ব্র্যান্ডেড মশলা কোম্পানির স্টলের কর্মকর্তার মতে, ‘বইমেলা মানে তো শুধু এক ধরনের পাঠক তো নয়। এখানে সব ধরনের পাঠক আছে। বইমেলা মানেই এক উৎসব। তাই উৎসবে বাড়ির গৃহিণীরাও হাজির থাকেন। যেসব গৃহিণী সারা বছর সিরিয়ালে মগ্ন থাকেন তাদের কি আর সুনীল-সমরেশ ভালো লাগবে?’
‘তাই তাদের কথা ভেবেই এমন অফার। তাদের জন্য অাছে বিভিন্ন ধরনের রান্নার বই। আসলে আমরাও চাই ডিজিটাল ছেড়ে বইয়ে মগ্ন হোক পাঠক। তাই আমাদের কোস্পানির বিজ্ঞাপনও হলো আবার পাঠক দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেখকের রান্নার বইও পেল। ’
তবে কত টাকার বই কিনছে তার ওপর অফার দেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি ৫০০ রুপির বই কেনে সে পাবে রান্নার মশলার প্যাকেজ আর তিনোশো রুপির বাড়তি বই কিনলে সঙ্গে পাবেন ১ লিটার সরিষার তেল। এগুলো সবই ব্র্যান্ডেড। হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, বই আর মশলা দাম প্রায় সমান সমান।
এ রকম ধরেনের নানা স্টল আছে বইমেলাজুড়ে। যেমন- বিখ্যাত এক মিউজিক কোম্পানি। তারা রেখেছে তাদের মিউজিকের বইগুলো। এখানে রয়েছে কোন সালে কোন কোন সঙ্গীত শিল্পীকে দিয়ে রেকর্ড করা হয়েছিল তা। আছে বুকলেটে আকারে ছোট ছোট বই। স্টলজুড়ে চলছে গান বাজনা আর কুইজ।
এই যেমন- হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কোন সালে গেয়েছেন, সুকান্তর লেখা রানার গানটি অথবা অরিজিৎ সিং কোন সিনেমার জন্য গেয়েছেন ‘বোঝে না সে বোঝে না’। বলতে পারলেই অরিজিনাল ব্লু-রে ডিস্ক বা অন্যকোনো অফার।
এখানেই শেষ নয়, বইমেলার চত্বরজুড়ে মাইকে প্রচারিত হচ্ছিল আরও একটি ফ্রি অফার। এক হাজার রুপির বই কিনলে ভাগ্যবান ক্রেতা বিনামূল্যে পাবেন ২৫ হাজার রুপির বই।
আরও আছে, জনাকয়েক তরুণ-তরুণী মাঠের মাঝেই আচমকা পাকড়াও করছিলেন বইপ্রেমীদের। একটি ছোট্ট কার্ডে নাম আর ফোন নম্বরটুকু দিলেই তিনিও জিততে পারেন ফ্রি গিফট। কপাল ভালো থাকলে নিখরচায় মালয়েশিয়া কিংবা নেপাল ভ্রমণও জুটে যেতে পারে। এমনই অফার দিচ্ছিলেন তারা। এছাড়াও বই কিনলে খাবার কুপন, লাকি ড্র-তে মিলতে পারে মোবইল বা ল্যাপটপ। সব মিলিয়ে কলকাতা বইমেলায় পাঠক-দর্শনার্থীরা অর্জন করেন এক নানান অভিজ্ঞতা।
আছে রাজনৈতিক আফারও! কেন্দ্রীয় শাসক দলের স্টলের বাইরে ও ভেতরে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ থেকে শুরু করে আঞ্চলিক নেতাদের পেল্লায় পেল্লায় ছবি। সেই স্টলে কেন্দ্রের শাসকদলের জয়ডঙ্কা বাজানো বই থরে থরে সাজানো।
চলছে সদস্য সংগ্রহ ও নানান অফার। ওই স্টলে আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে নানা তীর্যক আলোচনা। আছে সিপিএম তথা বামেদের সমালোচনা করে জ্বালাময়ী বর্ণনার বই। শুধু বিজেপির স্টলে নয়। প্রতিটা রাজনৈতিক স্টলে এক অপরকে নিয়ে আছে আলোচনা-সমালোচনা বিশ্লেষণের বই।
তাই বাদ যায়নি সিএএ এনআরসি বিষয়গুলোও। ফলে শুধু করপোরেট কোম্পানি নয়, নানা অফার চলছে রাজনৈতিক স্টলগুলোতে।
রোববারই বইমেলার শেষ দিন। মানুষের ভিড়ে স্টলে স্টলে ভিড় জানান দিচ্ছে, এখন তো শেষ হয়নি বইমেলা। সময় তো আছে আর কিছুক্ষণ! তাই যতটা পারা পারা সময়ের ব্যবহার করছেন ক্রেতা বিক্রেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০
ভিএস/এমএ