কারণ যাদের তালিকায় নাম নেই, তারা আবেদন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। এ নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছেআসামসহ ভারতজুড়ে।
আর এ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও এ ঘটনায় ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন আসামে এনআরসির আহ্বায়ক হিতেশ দেব শর্মা।
তার বক্তব্য, সমস্ত তথ্য সুরক্ষিত আছে। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একই বিবৃতি জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দপ্তর থেকে।
তবে ঘটনায় রাজনৈতিক চক্রান্তের গন্ধও পাচ্ছেন অনেকে। বিরোধীদের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে এনআরসি সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় কাদের নাম রয়েছে বা কাদের নাম বাদ গেছে, তা জানার জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করেছিল সরকার। তাতে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ক্লিক করলেই সমস্ত তথ্য দেখা যেত। কিন্তু, এখন সেখানে ক্লিক করলে স্কিনে ‘এরর (Error’ দেখাচ্ছে। প্রায় দু’মাস ধরে চলছে এই সমস্যা।
এই নিয়ে হিতেশ দেব শর্মার বক্তব্য, এই ওয়েবসাইট দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা উইপ্রোকে। কিন্তু তাদের সঙ্গে চুক্তির নবায়ন করা হয়নি।
ফলে পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। আর তাতেই বিপত্তি তৈরি হয়েছে। তবে চুক্তি নবায়ন করার জন্য ইতোমধ্যেই উইপ্রোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। গোটা প্রক্রিয়া শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে এনআরসির আহ্বায়ক হিতেশ দেব শর্মা।
এদিকে গোটা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হিতেশ দেব শর্মাকে চিঠি লিখেছেন ওই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দেবব্রত সাসকিয়া। তথ্য উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ‘রহস্যজনক’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
পাশাপাশি, টুইটারে কংগ্রেস সংসদ সদস্য সুস্মিতা দেব লিখেন, ‘৩১ আগস্ট ২০১৯-এ এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। আসামের বিজেপি সরকার এখনও জানায়নি তা বৈধ, না অবৈধ। এরমধ্যে সমস্ত তথ্য উধাও হয়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তাহলে এনআরসির জন্য ব্যয় করা মানুষের অর্থ, পরিশ্রম ও সময় - সব কিছুই কি জলে চলে গেল?’
পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তথ্য সংক্ষণ করতে কেন সময়মতো চুক্তির নবায়ন করা হলো না- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবী আমন ওয়াদুদ।
তার কথায়, এনআরসি প্রক্রিয়াতে ৫ বছর সময় লেগেছে। ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপি ব্যয় হয়েছে। তারপরও সমস্যার মুখে পড়েছেন বহু মানুষ। এই এনআরসির কারণে ঘটেছে একাধিক মৃত্যুর ঘটনাও। এ রকম একটা সেনসেটিভ ইস্যু নিয়ে উইপ্রোর সঙ্গে সময়ের মধ্যে কেন চুক্তি করা গেল না? অসাবধানতা কারনে এটা হয়নি। ইচ্ছাকৃতভাবেই এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে এনআরসি হয়েছিল আসামে। চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন ১৯ লাখের বেশি মানুষ।
তালিকা প্রকাশ হতেই অস্বস্তিতে পড়ে আসামের শাসক দল বিজেপি। এর মধ্যে গোটা দেশে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি চালু করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পরস্পর বিরোধী মন্তব্য ঘিরে তুমুল জল্পনা শুরু হয়।
আর এর মাঝেই ওয়েবসাইটে তালিকা উধাও হয়ে যাওয়ায় অনেকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করছেন।
বিরোধীদের মতে, লোকসভায় ভালো ফল করলেও একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হচ্ছে বিজেপির। স্থানীয় ও বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে এনআরসি ইস্যুকে বিজেপির বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
তার সুফলও মিলছে হাতেনাতে। সেই কারণেই সমস্ত তথ্য দেশবাসীর মাথা থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে শাসক বিজেপি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
এমএ