আবার এ তথ্যও এসেছে যে মোসলেহউদ্দিনকে দেশের কোনো এক স্থলবন্দর দিয়ে ঢাকার কাছে হস্তান্তর করেছে ভারত সরকার।
কলকাতার সংবাদমাধ্যমগুলোর কেউ দাবি করছে, মোসলেহউদ্দিনকে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন>>>খুনি মোসলেহউদ্দিন ভারতে যেভাবে হয়ে ওঠেন ‘দত্ত ডাক্তার’
প্রকৃত ঘটনা যাই ঘটুক, সংবাদমাধ্যমগুলো একটি বিষয়ে একমত ছিল যে মোসলেহউদ্দিন আত্মগোপন করে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার যশোরের একটি স্থানে। আর সেসব সংবাদমাধ্যমের ওপর সূত্র ধরে বাংলানিউজ পৌঁছায় যশোর রোড সংলগ্ন ঠাকুরনগরে। শহর কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। যদিও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দূরত্ব মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের। জায়গাটি ঠাকুরনগরের শিমুলপুরের মধ্যে এবং তা গাইঘাটা থানার অন্তর্গত। এলাকাটি মূলত হিন্দু অধ্যুষিত। আর এই এলাকায় মোসলেহউদ্দিন নাম পরিবর্তন করে হয়েছিলেন সমীর কুমার দত্ত। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ইউনানি চিকিৎসা। এটি আয়ুর্বেদ চিকিৎসারই একটি ধারা। সমীর কুমার দত্ত ‘দত্ত ডাক্তার’ নামে পরিচিত ছিল এলাকায়। শিমুলপুরের যথেষ্ট খ্যাতিও অর্জন করেছিলেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত প্রায় ৪০ বছর আগে। সমীর কুমার দত্ত র সঙ্গে দমদমে পরিচয় হয় পরেশ চন্দ্র অধিকারীর। অভুক্ত বেকারের মতো দমদম স্টেশনে পড়ে থাকতেন সমীর দত্ত। অপরদিকে ইউনানি চিকিৎসক ছিলেন পরেশ চন্দ্র অধিকারী। তার হয়েই পথে পথে পোস্টার লাগাতেন সমীর দত্ত। ধীরে আলাপ জমে ওঠে দু’জনের। তৈরি হয় মৈত্রীর সম্পর্ক।
আরও পড়ুন>>>একটি ব্যাগ হাতছাড়া করতেন না খুনি মাজেদ
এই অধিকারীর হাত ধরে ঠাকুরনগরে আশ্রয় পান সমীর দত্ত। অবশ্য তখনও অধিকারী পরিবারে পাকাপাকি আশ্রয় হয়নি তার। তবে প্রায়ই আসতেন পরেশ অধিকারীর বাসায়। শিখতে শুরু করে চিকিৎসা পদ্ধতি। এরপর ২০০৯ সালে মারা যান পরেশ অধিকারী। তখন পাকাপাকিভাবে সমীর দত্ত বসবাস করতে শুরু করলেন অধিকারী পরিবারের সঙ্গে। এমনকী বংশ পরম্পরার চিকিৎসা পুরোপুরি সমীর দত্তের দখলে চলে যায়।
আরও পড়ুন>>>১৯ বছর কলকাতার যে বাড়িতে ছিলেন খুনি মাজেদ
‘অধিকারী ইউনানি চিকিৎসা’ পরিচয় পেতে থাকে ‘দত্ত ডাক্তার’ নামে। এমনই সব তথ্য দিচ্ছিলেন অধিকারীর ছোট মেয়ে মমতা অধিকারী। তার দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৯ সাল থেকে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন ‘দত্ত জেঠু’।
এতদিন সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু বাধ সাধে সংবাদমাধ্যমে ওই বাড়ির ‘দত্ত ডাক্তার’ নিয়ে খবর প্রকাশ হতেই। মফস্বল, তাই রাতারাতি প্রচার হতেও সময় লাগেনি। এরপরই ১৯ এপ্রিল রাতে অধিকারী বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। মোড় নেয় গল্পের আর এক দিক। পুলিশ জানতে পারে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি মারা গেছেন সমীর কুমার দত্ত।
এরপরই মোবাইলে মোসলেহউদ্দিনের ছবি দেখিয়ে গাইঘাটার পুলিশ জানতে চায় একে চেনে কিনা পরেশের মেয়ে-জামাই। তৎক্ষণাত না বলে দিলে বাড়ি থেকে সমীর কুমার দত্তের ছবি মোবাইলে তুলে নেয় পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করে তার ডেথ সার্টিফিকেট, আধার কার্ড, ভোটার কার্ডসহ একাধিক নথি।
মমতা অধিকারী বাংলানিউজকে বলেন, দত্ত জেঠু ১০ জানুয়ারি রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ওইদিন রাতেই তাকে গাইঘাটা শ্মশানে দাহ করা হয়। এই যে তার ছবি (এসময় তিনি মরদেহের ছবি দেখান)।
শিমুলপুরের অধিকারী বাড়ির আশপাশের প্রতিবেশীরাও তাদের দত্ত ডাক্তার ১০ জানুয়ারি মারা গেছেন বলে জানান।
বাংলানিউজের হাতে আসা ছবিতে দেখা যায়, সমীর দত্তকে হিন্দু নিয়মে সৎকারের জন্য সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে মুখে ফুলচন্দন পরিয়ে গলায় মালা পরানো হয়েছে। তাকে দাহ করার জন্য যে শ্মশানে নেওয়া হয়েছে সেটাও স্পষ্ট ছবিতে।
সত্যি যদি এই সমীর দত্তই বঙ্গবন্ধুর খুনি রিসালদার মোসলেহউদ্দিন হন তাহলে একথা বলাই যায় তিনি আর বেঁচে নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২০
ভিএস/এএ/এজে