কিন্তু এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ধসে পড়ার অবস্থা। সার্বিক বাস্তবতায় গত ৮ জুন থেকে পশ্চিমবঙ্গে শিথিল করা হয়েছে ৫ম দফার লকডাউন।
এ পরিস্থিতিতে কলকাতার ফুটপাতের নিম্ন আয়ের ব্যবসায়ী আর হকাররা অন্য ব্যবসায়ীদের চেয়েও বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। বেচাবিক্রি না হওয়ায় তাদের ঘিরে ধরেছে হতাশা আর বিষণ্ণতা।
একই চিত্র কলকাতার নিউমার্কেট থেকে শুরু করে হাতিবাগান, গড়িয়াহাটে। হকাররা ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে নিয়ে বসলেও, ক্রেতার অভাবে বিক্রিবাট্টা একেবারেই নেই। এমনও দিন যাচ্ছে লাভ তো দূর অস্ত, অনেকেরই বউনি পর্যন্ত হচ্ছে না।
সোমবার (২২ জুন) সরেজমিনে কলকাতার বিভিন্ন মার্কেট এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই উঠে আসে। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের চাহিদা, ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এরই প্রভাব পড়েছে হকারদের ব্যবসায়।
নিউ মার্কেটে ফুটপাতের এক ব্যাগ বিক্রেতা বলেন, শুক্রবার থেকে দোকান খুলেছি। ৩ দিন হলো, আজ পর্যন্ত বউনি হয়নি। তারপরও দোকান খুলে বসে আছি, যদি বিক্রি হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ খাবে, নাকি জিনিস কিনবে! আবার তারা না কিনলে আমরা খাবো কী? আমাদেরও তো পরিবার আছে। আমরাও পরিযায়ী শ্রমিকদের মতো খারাপ সময় কাটাচ্ছি।
মূলত প্রতি বছরই চৈত্রমাসের শেষে কলকাতায় ‘চৈত্র সেল’ ও বৈশাখের শুরুতে ‘পহেলা বৈশাখ সেল’ থাকে। এসব ঘিরে দোকানে বহু টাকার মালামাল তোলেন ব্যবসায়ীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে সে সব মালের বেশিরভাগই দোকানে পড়ে রয়েছে।
এসব প্রসঙ্গে হকার্স মার্কেটের এক বিক্রেতা বলেন, লকডাউনের কারণে পুরো ঝাড় খেয়েছি চৈত্র সেল ও নববর্ষের বিক্রিতে। আড়াই মাসের উপর বিক্রিবাট্টা বন্ধ, কিন্তু মহাজনের ঋণ তো শোধ দিতেই হবে। পাশে দাঁড়ানো জামাকাপড়ের আরেক বিক্রেতার কথায়, চৈত্র সেল আর ঈদ উপলক্ষে প্রায় তিন লাখ টাকার মাল তুলেছিলাম। এখন ঋণের বোঝা দিন দিন চেপে বসছে। মহাজনকে টাকা শোধ করার পথ খুঁজে পাচ্ছি না। আগামীদিনে কীভাবে পরিবারের পেট চলবে কে জানে। সংসার খরচ, ঋণের বোঝায় জীবন জেরবার হয়ে যাচ্ছে।
হকারদের একাংশের আশা, আসন্ন দুর্গাপূজায় পরিমাণে কম হলেও মানুষ কিছু কেনাকাটা করবে। আগামী দু’মাসে বাজারের হাল ফিরবে বলে আশা করছেন তারা। তবে আরেক অংশের এতো সহজে স্বাভাবিক্তা ফিরবে না। প্রতি বছর রথ উৎসবের সময়ও কিছু কেনাবেচা হয়। কিন্তু, সরকারিভাবে এবারের রথযাত্রা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাও হয়নি।
এসপ্ল্যানেড সংলগ্ন গ্র্যান্ড হোটেলের নিচে গুটিকয়েক ফুটপাতের দোকানে পসরা সাজিয়ে বসেছেন। অনেকেই পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। কয়েক হকার জানান, বাজার খুব খারাপ। কেউ আসছে না কিছু কিনতে। দুই-একজন এলেও জিনিস দেখে চলে যাচ্ছে। দোকান খোলা, অথচ ক্রেতার দেখা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২০
ভিএস/এইচজে