কলকাতা: ভারতের ১০ রাজ্যে ছড়ালো বার্ড ফ্লুর প্রকোপ। উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলির পর নতুন করে বার্ড ফ্লুর আতঙ্ক ছড়িয়েছে ঝাড়খণ্ডে।
পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত সংক্রমণের কোনো খবর নেই। তবে বার্ড ফ্লুর প্রভাব পড়েছে রাজ্যের পোলট্রি শিল্পে। পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি বলেন, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ায় গত দু’দিনে পশ্চিমবঙ্গে মুরগির মাংসের বিক্রি ২০ শতাংশ কমেছে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের একটাই আবেদন, গুজবে কান দেবেন না। গুজবের কারণেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
কলকাতার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুরগির ব্যবসায় এখনও বার্ড ফ্লুর আঁচ সেভাবে লাগেনি। তবে বিক্রেতারা বেশ আতঙ্কে রয়েছেন। নিউ মার্কেট মুরগি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ মুসতাকিম জানান, সাধারণ মানুষ এখনও মুরগির মাংস কিনতে আসছেন ঠিকই, তবে বিভিন্ন রাজ্যে যে হারে বার্ড ফ্লু বাড়ছে, তাতে আমাদের চিন্তাও বাড়ছে।
একই মত উত্তর কলকাতার মানিকতলা বাজারের মুরগি বিক্রেতা সন্দীপ সাউয়ের। তার কথায়, আমাদের শহরে এখনও আঁচ না পড়লেও একটা চিন্তা তো রয়েছেই। আগামী দিনগুলিতে কী হয়, সেটাই দেখার।
পশ্চিমবঙ্গের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রতি সপ্তাহে দুই কোটি পঞ্চাশ লাখ কেজি মুরগির মাংসের প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রতিদিন ডিম দরকার হয় তিন লাখ। স্রেফ গুজবের কারণে গত দু’দিনে মুরগির মাংসের পাশাপাশি ডিম বিক্রিও ২০ শতাংশ কমেছে।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বার্ড ফ্লুর আতঙ্কে গোটা ভারতে ফার্মের মুরগি ও ডিমের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে পোলট্রি ফেডারেশন। সংগঠনের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল আতঙ্কের কারণে মুরগি ও মুরগিজাত দ্রব্যের চাহিদা ৭০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। ফলে মুরগি ও ডিমের দাম অর্ধেক কমেছে।
দিল্লির সীমানা লাগোয়া এলাকায় ফার্মের মুরগির কেজি ১৪০ রুপি থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ থেকে ১০৫ রুপিতে। মহারাষ্ট্রে ৮২ রুপি থেকে নেমেছে ৫৮ রুপিতে। গুজরাট ও তামিলনাড়ুতে মুরগির দাম নেমে হয়েছে যথাক্রমে ৬৫ ও ৭০ রুপি। অপরদিকে, ডিমের দামও কমেছে। এক ডজন ডিমের দাম ৫০ রুপির নিচে নেমেছে। পোলট্রি ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি রমেশ খাতরি জানান, বার্ড ফ্লুর আতঙ্কে মুরগি ও ডিমের চাহিদা অত্যন্ত কমে যাওয়ায় দামও কমেছে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় পশু পালন ও ডেইরি মন্ত্রণালয় প্রতিটি রাজ্যের উপর কড়া নজর রাখছে।
এখনও পর্যন্ত পরিযায়ী পাখি ছাড়াও হাঁস, মুরগি ও কাকের মাধ্যমে এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া চিড়িয়াখানা ও বিশেষ কয়েকটি ঝিলে।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, বার্ড ফ্লু হলো পাখিদের এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা। ১৩১ ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা পাখিদের দেহে ছড়াতে পারে। এবার যে দ ‘টি ভাইরাস ছড়িয়েছে, সেগুলি হলো, ‘এইচফাইভএনএইট’ এবং ‘এইচফাইভ এনওয়ান’।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২১
ভিএস/এএ