ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

একটু সহযোগিতা করুন, অচৈতন্য সন্তান কোলে বাবার আঁকুতি

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২১
একটু সহযোগিতা করুন, অচৈতন্য সন্তান কোলে বাবার আঁকুতি

কলকাতা: কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। দেশে ফিরতে এনওসির জন্য দাঁড়াতে হচ্ছে দীর্ঘ লাইনে।

ক্যানসার রোগী থেকে সাত মাসের শিশু- কেউ বাদ নেই। কারো কারো রাত কাটছে ফুটপাতে।

সব ঠিক থাকলে আগামী ৯ মে’র পর খুলতে পারে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। কিন্তু ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের।  

ইমিগ্রেশনের এক তথ্য অনুযায়ী, শুধু গতমাসেই ভারতে এসেছে ১০ হাজার ৪শ জনের মতো বাংলাদেশি। সংখ্যার নিরিখে এর মধ্যে বেশিরভাগ রোগী। আবার সুস্থদের মধ্যে অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে মে মাসের ৯ তারিখের আগে। তাদেরও সময়ের আগে দেশে ফিরতে না পারলে বাড়তি জরিমানা গুনতে হবে। ফলে মাথার চুল ছেঁড়া ছাড়া উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই!

এনওসির জন্য কলকাতার বাংলাদেশ মিশনের সামনে দীর্ঘ লাইন। বৃহস্পতিবারও (২৯ এপ্রিল) চিত্রটা একই। লাইনে দাড়িয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন অনেকে। কেউ কেউ অসুস্থ রোগী নিয়ে রাস্তার উপর ফুটপাতে রাত কাটাচ্ছেন। অমানবিক দৃশ্য দেখে মুমূর্ষু রোগীদের মিশনে বা কোথাও রাত কাটানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন মিশন কর্মকর্তারাই।

ঢাকার একজন বাসিন্দা, সাড়ে সাতমাসের অচৈতন্য সন্তান কোলে নিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে। পাশে যেতেই বলেন, মিশনের ভেতরে একটু বসার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। বাচ্চাটাকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার বাচ্চাটার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে ইনফেকশন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা। একটু সহযোগিতা করুন না। আপনারা চাইলে পারবেন। আর পারছি না।

শুকনো মুখে মায়েরও একই মিনতি। কিন্তু উপায় কই!  

৬০ বছর বয়সী ক্যানসারের রোগী চন্দনবাবু। সস্ত্রীক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ভোর ৫টা থেকে। মুখ ক্যানসারে ভরে গেছে। মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা থাকলেও ক্যানসারের ছাপটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সামনে যেতেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন। ‘এনওসিটা দিতে বলুন না। একটু সাহায্য করুন না। খুব কষ্ট হচ্ছে। ’ 

নিরুপায় হয়ে সরে আসা ছাড়া উপায় নেই। অপরদিকে এনওসি নিয়েও রেহাই নেই এনাদের। কারণ বর্ডারে গিয়েও ১৪ দিন আরও কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে তাদের। তাদের জন্য বেনাপোল আর যশোরের হোটেল ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকার ব্যয় করতে হবে তাদেরই। এ পরিস্থিতিতে যেন যন্ত্রণার মধ্যেই আরও তাদের ক্ষোভ বাড়ছে। কেনো তাহলে এনওসির জন্য লাইন দেবো। বাড়িই যখন যেতে পারবো না। তার চেয়ে সরাসরি বর্ডার পার হয়েই কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারতাম।  

নিরুপায় মিশনপ্রধানরাও। ভারতের করোনা গ্রাস করছে তাদেরও। ছয়-সাতজন মিলে গোটা বৈদেশিক নীতি এবং ভিসা পারাপারের কাজ চালাচ্ছেন। ভিসাপ্রধান মো. বসির উদ্দিনের কথায়, আর কী করতে পারি। কম লোকবল নিয়ে আমারা তো আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রোজার মধ্যেও সকাল ৮টায় অফিস ঢুকছে সবাই। বের হচ্ছি তারাবির নামাজেরও পরে। এটুকুই বলতে পারি ধৈর্য ধরলে কেউই নিরাশ হবেন না। গুরুত্ব বিবেচনায় সবাই এনওসি পাবে। আমরা সব রকমই চেষ্টা করছি নাগরিকদের সেবা দেওয়ার জন্য।  

তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত ৮শর বেশি এনওসি দেওয়া হয়েছে। আরও জমা আছে ৫শর মতো। সেগুলোর কাজ চলছে।  

দূতাবাস সূত্র জানায়, সবার জন্য বর্ডার খোলা হয়নি। মুমূর্ষু রোগী আর যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ তাদের জন্যই। তা দেখার জন্যই এনওসির প্রয়োজন। দেশের স্বার্থে সরকার যেটা ভালো মনে করেছে তাই করেছে। সাময়িক সমস্যা সবার হবে। আমাদেরও হচ্ছে। এটা মেনে নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২১
ভিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।