ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

মুসলিমদের আয়োজনে হয় দুর্গাপূজা, হিন্দুরাও পড়েন নামাজ

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২২
মুসলিমদের আয়োজনে হয় দুর্গাপূজা, হিন্দুরাও পড়েন নামাজ

কলকাতা: কলকাতাজুড়ে শারদ উৎসবের আমেজ এখন মধ্যগগনে। শহরের মুন্সিগঞ্জ এলাকার ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের, মুন্সিগঞ্জ ফাইভ স্টার ক্লাবের দুর্গাপূজার  ধরনটা একটু ভিন্ন।

কারণ গত ৭০ বছর ধরে ওই এলাকার পূজার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয় মুসলমানরা। ওখানকার মুসলমানরা মনে করেন, উৎসবের কোনো ধর্ম হয় না। উৎসব সবার। আর সে কারণে, পূজার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন তারা।

পূজার নিয়ম-আচার ছাড়া বাজার-হাট, মণ্ডপ সজ্জা, প্রতিমা কেনা থেকে বিসর্জন- সব কিছুতেই থাকেন স্থানীয় মুসলমানরা।  

পূজার উৎসাহ দিয়ে থাকেন আশপাশের মহল্লার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিম। পূজা কমিটির উদ্যোক্তা মোহাম্মদ নাজিম বলেন, আমাদের এখানে পূজা মানেই দুর্গাপূজা, মায়ের পূজা, সেটা পালন হয়ে আসছে, আমরাও করছি। আমরা ছোট থেকে সবাই বড় একসঙ্গেই হয়েছি। ওরা যদি আমাদের সঙ্গে ঈদ পালন করতে পারে তাহলে আমরাও দুর্গাপূজা পালন করতে পারি। এই মহল্লা সবার। এখানে পূজা হবে, ঈদ হবে, বড়দিন হবে সব ধরনের অনুষ্ঠান হবে। আর  আমরা সবকিছুতেই শামিল থাকবো।

পূজা কমিটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ আলমিন বলেন, গোটা ভারতবর্ষে কি হচ্ছে তা নিয়ে আমি কিছু বলবো না। কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গের একটা সংস্কৃতি আছে, ঐতিহ্য আছে। সেই রীতিকে কি করে ভেঙে ফেলি বলুন? আর এই মহল্লাতো পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নয়, তাই এখানেও ঐতিহ্য মেনে সবকিছু হয়। যেরকম আমরা মুসলিম ভাইরা সবাই মিলে দুর্গাপূজার সহযোগিতা করি। একইরকমভাবে হিন্দু ভাইরাও ঈদে আমাদের সঙ্গে থাকে। কলকাতায় আর কোথায় হয় কিনা জানিনা কিন্তু, আমরা যেমন পূজায় সামিল হই হিন্দুরাও এখানে আমাদের সঙ্গে নামাজ পড়েন। এটাই আমাদের প্রথা, এটাই আমাদের বিশ্বাস।

ওই মহল্লার সাড়ে ছয়শ জন পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে ১০ জন হিন্দু ও তিন জন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাস। কিভাবে এই পূজার শুরু হয়েছে তা সঠিক তথ্য না থাকলেও ৭০ বছরের পুরনো এই পূজা এক বিশ্বাসের ওপরেই টিকে আছে। প্রায় ৭০ বছর ধরে এটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। এটি কোনোমতেই ভাঙতে চাননা এলাকাবাসী।  

এলাকার বাসিন্দা সৈকত বলেন, ‘আমি মনে করি ধর্মীয় উৎসবটা বাহ্যিক। কলকাতার সংস্কৃতি একটাই, ‘ধর্ম বলতে মানুষ শুধু মানুষ বুঝবে। ’

বিশ্ববাসী কলকাতাকে চেনে সিটি অব জয় নামে। ফরাসি লেখক ডমিনিক লাপিয়েঁর লিখেছিলেন, ভালোবাসা, আবেগ, প্রানখোলা আনন্দ আর বন্ধুত্বের সম্পর্কের মিশ্রনে তৈরি,আনন্দনগরী -শহর কলকাতা। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ মিশে যায় উৎসবের, আলোতে। কারণ এটাই কলকাতার সংস্কৃতি এটাই কলকাতার রীতি। যা এবারের শারদীয়াতেও ছন্দপতন হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ২ অক্টোবর ২০২২
ভিএস/ইআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।