ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে সরব বিদ্বজ্জনেরা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে সরব বিদ্বজ্জনেরা

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে একের পর দুর্নীতিতে জর্জরিত মমতার সরকার। শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় (এসএসসি) মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকেই হাজতে।

এরইমধ্যে রাজ্য উত্তাল ‘টেট’ নিয়ে। ‘টিচার এলিজেবেলিটি টেস্ট’ (টেট) নিয়ে সরব রাজ্যবাসী।  

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সল্টলেক করুণাময়ীতে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে পুলিশ যেভাবে বলপ্রয়োগ করে তুলে দিয়েছে তা নিয়ে এবার প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্বজ্জন থেকে বুদ্ধিজীবীরা।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের টেট উত্তীর্ণরা ৮৪ ঘণ্টা ধরে সল্টলেক করুণাময়ীতে অনশন রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) থেকেই শুরু হয়েছিল তাদের আন্দোলন। তবে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশি তৎপরতায় একপ্রকার টেনে হিঁচড়ে বিক্ষোভরত চাকরিপ্রার্থীদের তুলে দেয় পুলিশ। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সরব হয়েছেন বাংলার বিদ্বজ্জনেরা।

টেট-কাণ্ডে পুলিশমন্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে অভিনেতা মন্তব্য, ধিক্কার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুলিশকে। এক শান্তিপূর্ণ, যোগ্য আন্দোলনের গায়ে এমন বীভৎস আঘাত করার জন্য। এই জঘন্য কাজের মাশুল গুনতে হবে রাষ্ট্রকে।

আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের অকথ্য অত্যাচের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য, কৌশিক সেন, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, সুদীপ্ত চক্রবর্তী, চিত্রপরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মত ব্যক্তিত্বরা। এই ঘটনার নিন্দা করে একটি ডেপুটেশনে সই করেছেন বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী। চিঠিতে সই করেছেন ড. বিনায়ক সেন, অপর্ণা সেন, কুণাল সরকার, বিভাস চক্রবর্তী, সুমন মুখোপাধ্যায়, সুজন মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় রেশমী সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়। অনেকে আবার সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।

ঘটনার প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবীদের একাংশ যে ডেপুটেশন জমা দিতে চলেছেন, তাতে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখেছি যে অনশনরত চাকরি প্রার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য কীভাবে সল্টলেক বিধাননগর পুলিশ বলপ্রয়োগ করে তাদের আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করেছে। এই ঘটনাকে আমরা ধিক্কার জানাই এবং পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে মনে করি।

কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারক শুক্রবার (২১ অক্টোবর) মন্তব্য করেছেন, পুলিশ কি পাওয়ার লেস হয়ে পড়েছে? ১৪৪ ধারার নামে নির্য়াতন! অবিলম্বে সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে এই জটিলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য আবেদন জানাচ্ছি এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের যাতে না করা হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করছি।

অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য জানান, কোন যোগ্য লোক প্রাপ্যটা পাচ্ছেন এই রাজ্যে? এই দেশে? যে আজ হঠাৎ পাবে! এতো দীর্ঘ ইতিহাস। যাদের প্রতিবাদ করার তারা করছেন। যে চিঠিতে সই করেছি, তাতে এই ঘটনাকে ধিক্কার জানানো হয়েছে। তাতে সহমত বলেই সই করেছি। সহমত না হলে সই করতাম না।

চিত্র পরিচালক, অভিনেত্রী অপর্ণা সেন বলেন, অনশনকারীদের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে তৃণমূল সরকার! অহিংস আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করা হল কেন? সরকারের অনৈতিক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করছি অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র লেখেন, এরাজ্যে পড়াশোনা করে যে, চাকরি পায় না সে, বরং পুলিশের অত্যাচার সয় সে। সমালোচনায় সরব আরও অনেক হয়েছেন বাংলার বিশিষ্টজনেরা।

মুলত, রাজ্যের সরকারি স্কুলের নিয়োগের নিয়ম অনুযায়ী, এসএসসি পরীক্ষায় বসতে হলে আগে টেট দিতে হবে। এর আগে দেখা গেছে রাজ্যের মন্ত্রী থেকে নেতৃত্বরা প্রাপ্রকের প্রাপ্য চাকরি অন্যকে পাইয়ে দিয়েছেন। টেটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, তালিকায় মেধাবীদের নাম প্রকাশ পেলেও তাদের বদলে অন্যরা শিক্ষকতায় নিয়োগ পেয়েছেন। তাই নিয়ে ৫০০ দিনের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চলছে কলকাতার ধর্মতলায় মাতঙ্গিনী মূর্তির পাদদেশে। মঙ্গলবারই তাদের একাংশ সল্টলেকে অনশনে বসেন। ১৪৪ ধারা দেখিয়ে তাদের ওপরই অকথ্য অত্যাচার করে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
ভিএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।