ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প

১৯২৪ কোটি টাকা ফাঁকি মওকুফে মরিয়া বিএটিবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
১৯২৪ কোটি টাকা ফাঁকি মওকুফে মরিয়া বিএটিবি বিএটিবি লোগো

ঢাকা: মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ ফাঁকি দেওয়া ১৯২৪ কোটি টাকা মওকুফে মরিয়া হয়ে উঠেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ  লিমিটেড (বিএটিবি)। আর এজন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত খোদ ব্রিটিশ হাই কমিশনারই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ওই টাকা ফাঁকি দেয় বিএটিবি। ফলে বিপুল ওই টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার।

টাকা আদায়ে বহুজাতিক এই সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করে এনবিআর। কিন্তু হাইকোর্ট সেই মামলার রায় সরকারের পক্ষে দিলে বিএটিবি আপিল করে। বর্তমানে মামলাটি চলমান থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট মওকুফে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এনবিআর জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ব্রিস্টল ও পাইলট সিগারেটকে নিম্নমূল্য স্তরের সিগারেট ঘোষণা দিয়ে উৎপাদন শুরু করে। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর একটি অভিযোগ দায়ের করে।   ২০১০ সালের ১৫ জুন অভিযোগটি আমলে নেয় এনবিআর। তারপর সিগারেটের নমুনা সংগ্রহ করে। সেই নমুনা ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর খাদ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ‘বিসিএসআইআর’ এ পাঠায়। ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি ‘বিসিএসআইআর’ পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয়।

রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ব্রিস্টল ব্র্যান্ডকে মধ্যম মূল্য স্তরে ঘোষণা করা হলে প্রতিষ্ঠানটি ব্রিস্টলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তখন পাইলট ও ব্রিস্টল ব্র্যান্ডকে নিম্ন মূল্য স্তরের ঘোষণায় মূসক ফাঁকির মামলার উদ্ভব ঘটে।  

যার ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর পাইলট সিগারেটে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৭৯৮ কোটি ২৪ লাখ, ব্রিস্টল সিগারেটে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৯৯ কোটি ৩৭ লাখ  এবং পাইলট সিগারেটে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে অক্টোবর ২০১৩ পর্যন্ত ৪২৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির প্রাথমিক দাবিনামা জারি করা হয়। কিন্তু দাবিনামার জবাব না দিয়ে সময় বৃদ্ধির আবেদন করে বিএটিবি।

এরপর  ২০১৪ সালের ২১ মে ১৯২৪ কোটি টাকার চুড়ান্ত ‍দাবিনামা জারি করে এনবিআর। সেই দাবিনামার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৬ মার্চ রাজস্ব ফাঁকির রায় এনবিআরের পক্ষে দেয়। কিন্তু বিএটিবি হাইকোর্টের রায়ের বিপরীতে আপিল বিভাগে আপিল করে। বর্তমানে মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, মামলাটি বিচারাধীন থাকলেও বিএটিবি’র পক্ষে সমঝোতার চেষ্টায় নেমেছেন ঢাকায় কর্মরত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক। বিএটিবিকে যাতে ওই টাকা দিতে না হয় সেজন্য আদালতের সমঝোতায় প্রস্তাব দিয়ে গত ৬ আগস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠি দেন তিনি।

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের চিঠি পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী তা এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের কাছে পাঠিয়ে আদালতের দিক নির্দেশনা মেনে ব্যবস্থা নিতে বলেন। ২৮ মে এনবিআর চেয়ারম্যান সেই চিঠিতে প্রথম সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।  

এ বিষয়ে বিএটিবি’র চেয়ারম্যান গোলাম মাঈনুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এনবিআর যে অর্থের দাবি করছে সেটা যৌক্তিক নয়। আর ন্যায় বিচারের জন্যই হাই-কমিশন থেকে চিঠিটি অর্থমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, বিএটিবি ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।   সুতরাং এখানে সমঝোতার কোনো কিছুই নেই। আদালত যে রায় দেবেন সেটাই মেনে নিতে হবে।

বিএটিবি’র পক্ষে ব্রিটিশ হাই-কমিশনারের পাঠানো সুপারিশের বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এনবিআর মামলা করেছে।   আদালতও এনবিআরের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমরা আপিলের রায়ের অপেক্ষায় আছি। অন্য কোনো সুপারিশে কাজ হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
এসজে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।