ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প

তাঁতের সুদিন ফেরানোর উদ্যোগ, হচ্ছে শুমারি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৮
তাঁতের সুদিন ফেরানোর উদ্যোগ, হচ্ছে শুমারি তাঁতকলে কাজ করছেন এক নারী, কিন্তু গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই তাঁত এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে (ফাইল ফটো)

ঢাকা: কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং আধুনিকায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প প্রায় হারিয়ে বসার পথে। এই শিল্পকে বাঁচাতে নানা সময়ে সচেতন মহল আহ্বান জানিয়ে এলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছিলো না। এবার ঐতিহ্যের ধারক তাঁতশিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এই উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তাঁতশুমারি করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। শুমারির পর নেওয়া হবে যাবতীয় উন্নয়ন কর্মসূচি।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের আগ্রহে ‘তাঁতশুমারি-২০১৮’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। ৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

কাজ শুরু হয়েছে এই মার্চেরই শেষভাগ থেকে।

প্রকল্পের আওতায় তাঁত ইউনিট অর্থাৎ তাঁতখানা ও তাঁত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং উক্ত তাঁত ইউনিটসমূহে পাওয়ারলুমের মোট সংখ্যা নিরূপণ করা হবে। এ তথ্য ইউনিয়ন পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড, মৌজা, গ্রাম/মহল্লাভিত্তিক সংগ্রহ করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৯০ সালের আগেও হস্তচালিত তাঁতশিল্প ছিল দেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প। তাঁত শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৫ লাখ লোক নিয়োজিত ছিল। কর্মসংস্থানের দিক থেকে কৃষি ও গার্মেন্টস্ শিল্পের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম এবং গ্রামীণ কমর্সংস্থানের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত ছিল তাঁত। কিন্তু ভিনদেশি পোশাকের বাজার দখল এবং আধুনিকায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা-প্রশিক্ষণের অভাবে তাঁতশিল্প ছেড়ে দিচ্ছেন তাঁতিরা।  

কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি পোশাকের পাশাপাশি দেশীয় অন্যান্য পোশাকেও আধুনিকায়নের ফলে নতুনত্ব এলেও তাঁতশিল্পে উন্নত প্রযুক্তি বা প্রশিক্ষণ নেই। এরমধ্যে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিতে এবং শ্রমের যথেষ্ট মূল্য না পাওয়ার কারণে এই শিল্প ছেড়ে জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁতিরা। ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, যশোর, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, বরিশাল এবং পাহাড়ি অঞ্চলের তাঁতকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর মিলছে সংবাদমাধ্যমে।  

তাঁতিদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এই শিল্পে ধরে রাখতেই সরকার উদ্যোগটি নিয়েছে। যেহেতু সুযোগ-সুবিধা বা প্রণোদনার জন্য দরকার তাঁতশিল্পে জড়িতদের সঠিক পরিসংখ্যান, তাই তাঁতশুমারির জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।  
 
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ দু’টি তাঁতশুমারি (১৯৯০ ও ২০০৩) অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে যেখানে দেশে মোট ২ লাখ ১২ হাজার ৪২১টি তাঁতকল ছিল, সেখানে ২০০৩ সালে কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টিতে। অর্থাৎ তাঁতকলের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। যদিও সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, এ শিল্পের বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৭৯ কোটি মিটার কাপড়। জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজনের দিক দিয়ে অবদান ছিল ১ হাজার ২২৭ কোটি টাকারও বেশি।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম দেশের সব তাঁতিকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে এ শিল্পকে টেনে তুলতে চান। যেহেতু তাঁতিদের এখনকার সঠিক পরিসংখ্যান কারও হাতে নেই এবং সব তথ্যই প্রায় ১৫ বছর আগের, সেহেতু প্রথমত তাঁতশুমারি করতে তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে সম্প্রতি চাহিদাপত্র (ডিও লেটার) পাঠানন। ডিও লেটারের ভিত্তিতে ৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্দও পেয়েছে তাঁত বোর্ড।

এই বিষয়ে বুধবার (২৮ মার্চ) প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, একসময় গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির পরেই তাঁতের অবস্থান ছিলো। কিন্তু নানা কারণে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছে। গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল ও দেশীয় কাপড়ের চাহিদা মেটাতে এই শিল্পকে ধরে রাখতে হবে। দেশীয় তাঁতিদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেজন্য আমরা তাঁতিদের জরিপ করবো। এই জরিপের ওপর ভিত্তি করেই বড় প্রকল্প গ্রহণ করবে তাঁত বোর্ড।
         
বোর্ডের সদস্য (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) গাজী মো. রেজাউল করিম বলেন, তাঁতের ঐতিহ্য ফেরাতে তাঁতিদের প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন, ঋণ দেবো। এর পাশাপাশি তাঁতিদের শিক্ষা-চিকিৎসার ভারও সরকার নেবে। এসব পরিকল্পনার আগে তাঁতিদের সঠিক সংখ্যা জানতে কার্যক্রম চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।