ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

শিশুরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে ঝুঁকিপূর্ণ কনটেন্ট দেখে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৩
শিশুরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে ঝুঁকিপূর্ণ কনটেন্ট দেখে

ঢাকা: ইন্টারনেটে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের কনটেন্ট নেই বললেই চলে। এতে শিশুরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানহীন, ঝুঁকিপূর্ণ এবং তাদের জন্য উপযুক্ত নয় এমন কনটেন্ট দেখে।

সোমবার (২২ মে) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রধান সম্মেলন কক্ষে শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত সংক্রান্ত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রযুক্তি সম্পর্কে অন্ধকারে না রেখে ছোটকাল থেকে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রযুক্তির ক্ষতিকর বিষয়সমূহ সম্পর্কে সচেতন করতে জোর দেওয়া হয় কর্মশালায়।

বিটিআরসির সহায়তায় সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ তথা সিসিমপুর আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।

কর্মশালায় ইন্টারনেটে বাংলাদেশে শিশুদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা তথ্য তুলে ধরা হয়। সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের উদ্যোগে গবেষণাটি করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়।

গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেটে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের কনটেন্ট নেই বললেই চলে, ফলে শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানহীন, ঝুঁকিপূর্ণ এবং তাদের জন্য উপযুক্ত নয় এমন কনটেন্ট দেখে।  

শিশুদের ইন্টারনেটে নিরাপদ রাখতে তাদের জন্য উপযোগী শিক্ষণীয় ও মানসম্পন্ন কনটেন্ট বাড়ানোর বিষয়টি জোর দেওয়া হয় গবেষণায়।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, বিটিআরসি নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে কাজ করছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে বিটিআরসি যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে এবং প্রতি তিন মাস পর পর এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা আহ্বানের মাধ্যমে সাইবার জগতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।  

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৩ প্রতিবেদন অনুযায়ী সাইবার অপরাধের বেশি শিকার নারী ও শিশুরা এবং ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বিটিআরসিতে সাইবার সিকিউরিটি সেল চালু করা হয়েছে। এই সেলের মাধ্যমে বিভিন্ন সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের সহায়তা করা হয়। ভুক্তভোগী অধিকাংশ নারী-শিশু লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ করে না। আইএসপি অপারেটরসমূহ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সময় অভিভাবকদের প্যারেন্টাল গাইডলাইনস দিলে সচেতনতা বাড়বে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে পারলে তা ফলপ্রসূ হবে।

অনুষ্ঠানে লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন বলেন, শিশুদের মানসিক উন্নয়ন ও সচেতন করতে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা জরুরি।  

শিশুরা ক্রমশ ইন্টারনেট জগতে আসক্ত হয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে বিটিআরসি ওটিটি গাইডলাইনস প্রণয়নে কাজ করছে। শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার দায় আমাদের সবার ওপর।  শিশুরা যাতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আসক্ত না থেকে প্রকৃতি ও গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারে, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশে প্রণীত গাইডলাইন অনুসরণের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়োজিত আইএসপি, মোবাইল অপারেটরসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

কমিশনের অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার জগতে অপরাধের ধরনও বদলেছে।  

শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে গবেষণার মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বাস্তব পরিস্থিতি তুলে আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সাইবার জগত নিরাপদ রাখতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সাইবার জগতের বিশাল পরিসরে শিশুদের নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। সেফ ইন্টারনেট ফর আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে সিসিমপুর সেই কাজটি করছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পৃথিবী প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই শিশু-কিশোরদের সাইবার জগত সম্পর্কে জানার পথকে অবরুদ্ধ না রেখে প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনের পথ খোলা রাখতে হবে।  

সচেতন না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর ইন্টারনেটের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের খারাপ প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অভিভাবকদের সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের অভিভাবক বিশেষ করে মায়েদের সচেতন করা জরুরি।

সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের ডিরেক্টর আবু সাইফ আনসারীর (প্রোগ্রাম অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বিটিআরসির প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবীর, সচিব (বিটিআরসি) মো. নুরুল হাফিজ, মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, ইন্টারনেট সোসাইটি ফাউন্ডেশনসহ বিটিআরসির কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৩
এমআইএইচ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।