ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট সলিউশন শিগগিরই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট সলিউশন শিগগিরই

ঢাকা: মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও নগদ অর্থ পরিবহনের ঝুঁকি এড়াতে অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট সলিউশন ইন্টার কানেক্টিভিটি হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

আমাদের নাগরিকরা যারা ভারতে যাচ্ছেন তাদের রুপি বা ডলার করে নিতে হয়, সে জায়গায় সমাধানের পথ কী- এ বিষয়ে পলক বলেন, বিষয়টি অনেকটা এগিয়ে এসেছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিনিময় একদম লিগ্যাল চ্যানেলে, খুব নির্বিঘ্নে হতে হবে। ইতোমধ্যে আমাদের ‘টাকা পে’ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। ইন্টার অপারেটবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্লাটফর্ম ‘বিনিময়’ তৈরি করে ফেলেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকে গত পরশুদিন গিয়েছিলাম, এটার ইউজার ডাবল হয়ে গেছে। আমরা খুব খুশি। এখন ‘টাকা পে’র সঙ্গে রুপির কানেকশন করে দিতে পারলে ডিজিটাল পেমেন্টের ইন্টারফেসটা হয়ে যাবে। যেভাবে ভারতের সঙ্গে এখন সিঙ্গাপুরের লেনদেন হচ্ছে, যেভাবে প্যারিসে হচ্ছে, একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট সলিউশনের ইন্টার কানেক্টিভিটি হবে। আমাদের একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। একদিকে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা আসবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, মানুষের হয়রানিও কমবে। মানি লন্ডারিং কিংবা হুমকি- এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

এটা কী ডলারে কনভার্ট হবে- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু। আমরা শুধু টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট করছি।

প্রতিমন্ত্রী জানান, আমাদের ঢাকার কেরানীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ সবগুলো জায়গায় ১১টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ কাজ চলছে। কোথাও ৫০ ভাগ, কোথাও ৩০ ভাগ হয়ে গেছে। আশা করি, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে হাইটেক পার্কগুলো অপারেশনাল হবে। ভারত আমাদেরকে ১৯৩ মিলিয়ন ডলার লাইন অফ ক্রেডিট দিয়েছে, কনফেশনাল লোন। যেটা খুব স্বল্প সুদে। এখানে আমাদের অর্থ অনেক সাশ্রয় হচ্ছে। সেখানে মিনি সুপার কম্পিউটার, ইন্সট্রুমেন্ট আসছে। আমরা অনেক স্বল্প খরচে দেশের জনগণকে স্মার্ট সল্যুশন দিতে পারব। আমাদের হাইটেক পার্কের সঙ্গে ছয়টি জায়গায় ডিজিটাল সার্ভিস এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টারের কাজ শেষ হয়ে গেছে। সেখানেও কিন্তু আমাদের প্রায় ৩০ হাজার ছেলেমেয়ে ব্লগচেইন, রোবোটিক্স, ডাটা এনালিটিক্স- এ ধরনের ভবিষ্যতমুখী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রয়োজনীয় যে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়ে তুলতে পারব।

ভারতীয় হাই কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে পলক বলেন, আমাদের যে ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাকট্রাকচার আছে, তাদের অর্থ এবং তথ্য সংরক্ষণ করা এবং সাইবার সিকিউরিটির জন্য আমাদের পারস্পরিকভাবে একসঙ্গে কাজ করা দরকার। পাশাপাশি ইনফরমেশন শেয়ারিং, হুমকি শেয়ার করা দরকার। এগুলোর যে ভালো প্র্যাকটিস আছে, কোন দেশ কিন্তু এককভাবে সাইবার স্পেস নিরাপদ করতে পারে না। এজন্য আমরা এটা একসঙ্গে করতে চাই। যাতে বাংলাদেশ ও ভারতের সাইবার এক্সপার্টরা একসঙ্গে মিলে থ্রেটগুলো এনালাইসিস করা, প্রিভেন্টিভ মেজার নেওয়া- সেগুলো একসঙ্গে করা হবে। হয়তো আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে আমরা দুই দেশ একটা সময় ঠিক করব।

পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপচয় রোধ করে আইসিটিসি সেক্টরে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে আমাদের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে এবং আমাদের স্থানীয় তরুণ তরুণীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এই তিনটি জায়গায় আমরা ভারতের সহযোগিতা পাব বলে প্রত্যাশা করছি।

তিনি আরও বলেন, দুই দেশের সাইবার জগতটাকে নিরাপদ রাখার জন্য আমরা একটি এমওইউ করেছিলাম, সেটার আমরা মেয়াদও বাড়িয়েছি। এখন আমরা দুই দেশ একত্রিত হয়ে সাইবার ড্রিল পরিচালনা করব। ‌ যাতে বাংলাদেশ ভারতের সাইবার স্পেসসহ সারা বিশ্বের সাইবার জগতটাকে নিরাপদ রাখার জন্য বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে মিলে কাজ করতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এর সঙ্গে ডেটা সেন্টার নির্মাণ করতে হবে। আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে ডাক, টেলিযোগ সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়ানো, বিনিয়োগ আকর্ষণ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যেভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করেছে। একই সঙ্গে ডিজিটাল ভারত বিনির্মাণে বাংলাদেশ ভারতের পাশে থাকবে। কারণ আমাদের দু'দেশের স্টার্টআপদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী একটি সেতুবন্ধন রচনা করেছেন গত জুলাই মাসে। তিনি বাংলাদেশ-ভারত স্টার্টআপ ব্রিজ, এটা একটা ইউনিক কলাবরেশন প্ল্যাটফর্ম।

গত ৫ বছরে স্টার্টআপে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে অধিকাংশ বিনিয়োগ এসেছে ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে। কিছু অংশ এসেছে জাপান থেকে। ভারতের প্রায় দেড় বিলিয়ন জনগোষ্ঠী, একটি পণ্য যদি আমরা ভারতে সেটা সফটওয়্যার হোক হার্ডওয়ার হোক আমরা যদি নিতে পারি, তবে বিশাল মার্কেট আমাদের ঘরের কাছে। আবার বাংলাদেশের গ্রোয়িং মার্কেটও ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা নিতে পারে।

তিনি বলেন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরে সরকারের লাইন অব ক্রেডিট বিলিয়ন ডলারের ওপরে বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে। প্রাইভেট সেক্টরে ও বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশ থেকে আইসিটি রপ্তানি পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চাই। আমরা আরও ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান আগামী পাঁচ বছরের সৃষ্টি করতে চাই। আগামী পাঁচ বছরে আগামীর ২০৪১-এর স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে যে ভিত্তিটা রচনা করার উদ্যোগ নিয়েছি, সেখানে বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করবে এবং আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
এমআইএইচ/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।