ঢাকা: টেলিযোগাযোগ আইনের খসড়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি, অতি উচ্চ হারে জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ, যেকোনো ধরনের অপরাধকে জামিন অযোগ্য বলে বিবেচনা করা, দায়মুক্তিসহ বেশ কিছু ধারা পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
বুধবার (৫ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) মিলনায়তনে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।
আইনের খসড়াটি নিয়ে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি (টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টারস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ) এই গোলটেবিলের আয়োজন করে।
সহযোগিতা করে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব (অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ)।
বক্তারা মনে করেন, সরকার যখন সুদূরপ্রসারী স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০২৪ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে, সেই সময় নতুন করে টেলিযোগাযোগ আইন ঢেলে সাজানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে এই আইনের খসড়ায় কিছু কিছু বিষয়ে টেলিযোগাযোগখাত সংশ্লিষ্টদের ভিন্নমত আছে।
‘বিশেষ করে বিরোধ নিষ্পত্তি, অতি উচ্চ হারে জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ, যেকোনো ধরনের অপরাধকে জামিন অযোগ্য বলে বিবেচনা করা, দায়মুক্তিসহ আরও বেশ কিছু ধারা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ’
তারা বলেন, আইনের খসড়ায় নিয়ন্ত্রক কমিশন বিটিআরসির স্বাধীনতা হরণ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবসার বিষয়টি যথাযথভাবে সঙ্গায়িত হয়নি। অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এআইয়ের মতো সর্বশেষ প্রযুক্তি। ভিন্ন ভিন্ন গাইড লাইনের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।
গোলটেবিলে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ।
এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন এমটবের সভাপতি ও গ্রামীণেফোনের সিইও ইয়াসির আজমান।
এছাড়াও দেশের টেলিযোগাযোগখাতের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, শিক্ষাবিদ, পদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আমিনুল হক এবং মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আইন মানুষের জন্য। আমি ক্ষমতা নয়, দায়িত্বে বিশ্বাসী। তবে দায়িত্ব পালন করতে চাই নির্ভয়ে। এটা মিলিটারি শাসন নয়। স্বার্থ রক্ষা করে মানুষের সেবা দিতে চাই।
পলক বলেন, টেলিকম ও খাত সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়েই আইনটি চূড়ান্ত করা হবে। এজন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও জানান তিনি।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পরে দেশ যখন স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে সে সময় আইনের খসড়ার কিছু দিক নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
খসড়া আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে বক্তারা বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য দেশে ২০০১ সালে প্রণীত একটি পৃথক আইন থাকা সত্ত্বেও খসড়ায় এ সংক্রান্ত ধারা সন্নিবেশিত করা হয়েছে যা নতুন করে সমস্যা তৈরি করবে। খসড়ায় সর্বোচ্চ ৩শ কোটি টাকাসহ উচ্চ জরিমানার বিধান রয়েছে যা অনেক বেশি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রশাসনিক জরিমানাই এক ধরনের শাস্তি, এর ওপরে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায় যা ব্যবসাবান্ধব নয়। এতে এই খাতের লাইসেন্সিদের অপরাধকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। এতে সরকার বা কমিশনকে তাদের কোন কাজের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের কোনো পদক্ষেপের ওপর কোনো দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার থাকবে না বলে বলা হয়েছে। এ ধরনের বিধান সাংবিধানিক অধিকার এবং দেশের আইন প্রণয়নের চেতনার পরিপন্থি।
আলোচকরা বলেন, আইনে এমন কোনো ধারা থাকা উচিত নয়, যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। তারা সরকারের কাছে খাত সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি আইন প্রণয়নের অনুরোধ করেন।
গোলটেবিল আলোচনায় আরও অংশ নেন টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল মাবুদ চৌধুরী (অতিরিক্ত দায়িত্ব), বাংলালিংক ডিজিটালের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হ্যান্স মার্টিন হেনরিকসন, এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার (অব.), মোবাইলফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জাকারিয়া শহীদ, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমদাদুল হক, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাইমুম রেজা তালুকদার, ফাইবার অ্যাটহোম পরিচালক আব্বাস ফারুক, সামিট কমিউনিকেশনের চিফ আর্কিটেক্ট অফিসার ফারুক ইমতিয়াজ, নগদের ভাইস প্রেসিডেন্ট সজল জাহিদ প্রমুখ দেন।
বৈঠকটি সঞ্চালন করেন টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদী ও স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৪
এমআইএইচ/এএটি