ঢাকা: বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের সংস্কারে তথা উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দশটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে গ্রাহক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনের সভাপতির সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবের যুক্তি তুলে ধরে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৬ সালের মার্চ মাসে যাত্রা শুরুর পর থেকে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের আপামর জনসাধারণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শতভাগ নাগরিকের হৃদয়ে অনুভূতির জায়গায় টেলিটক থাকলেও ব্যবহারে নেই। কারণ টেলিটকের অপর্যাপ্ত রিটেলার, সার্ভিস সেন্টার অপ্রতুল, রিটেলারদের কাছে ডাটা বা প্যাকেজ ইনফরমেশন না থাকা, বাজারে সিম ও রিচার্জ করতে না পারা এবং মানসম্মত নেটওয়ার্ক না থাকা, সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রচারণা না থাকায় গ্রাহকদের টেলিটকের সেবার মান নিয়ে আস্থা নেই।
তিনি আরও বলেন, তুলনামূলক কম কলরেট ও ডাটা রেট থাকার পরও বিটিআরসির মাসিক গ্রাহক সংখ্যার পরিসংখ্যান অনুসারে ৬৫ লাখ গ্রাহক রয়েছে, যা অন্যান্য প্রাইভেট অপারেটরের তুলনায় খুবই কম। এত কম গ্রাহক নিয়ে টেলিটক ব্যবসায়িকভাবে টেকসই অবস্থানে যেতে পারবে না।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে আমরা দেখতে পারি, টেলিটকের টাওয়ার সংখ্যা ৬ হাজারের মতো। অন্য অপারেটরদের টাওয়ার সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি।
তিনি বলেন, সীমিত ফোর-জি কভারেজ, মাঠপর্যায়ে সেলস কার্যক্রমের উদাসীনতা, গণমাধ্যম ও সোশাল মাধ্যমে মার্কেটিং কার্যক্রম অনুপস্থিত, দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো ও স্বচ্ছতার অভাব, বিগত রাজনৈতিক সরকারের টেলিটক নিয়ে নেতিবাচক মনোভাবের কারণে টেলিটকের দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে সফল হতে পারেনি।
আপামর মোবাইল গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন মনে করে যে, বৈষম্যহীন স্বাধীন বাংলাদেশে টেলিটকের সেবার মান বাড়ানো এবং গ্রাহকদের কম খরচে মোবাইল সেবা দেওয়ার জন্য টেলিটকের আমূল সংস্কার করা প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট পেশ করা প্রস্তাবনায় রয়েছে-
১. টেলিযোগাযোগ সেক্টর সংশ্লিষ্ট কারিগরি ও ব্যবসায়িক বিবেচনায় দক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে টেলিটকের বোর্ডের সংস্কার করে কোম্পানিটি পরিচালনায় সরকারের প্রত্যক্ষ গতি আনতে হবে।
২. সংস্কার কার্যক্রম হিসেবে টেলিটকের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ টেলিটক’ করার প্রস্তাবনা করছি। এর মাধ্যমে টেলিটকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্বায়িত্ব পালনে অধিকতর অনুপ্রেরণা পাবেন বলে আমরা মনে করি।
৩. টেলিটকের ধীরগতির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পগুলো দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে কভারেজ বিস্তার নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে দেশের স্বার্থ ও টেলিটকের ব্যবসায়িক বিবেচনায় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক অন্যান্য অপারেটরের মতো দেশের সব জায়গায় নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় কম খরচে সহজ ভয়েস ও ডাটা প্যাকেজ অফার করতে হবে। প্যাকেজ অফারে নতুনত্য আনতে হবে। বাংলাদেশ টেলিটকের ডাটা এবং ভয়েস কলের কোনো মেয়াদ থাকবে না।
টেলিটকের মার্কেটিং নেই বললেই চলে। গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মার্কেটিং কার্যক্রম নিয়ে ব্যবসায়িক পরিধি বাড়াতে হবে। মার্কেটিং ও সেলস বিভাগকে সুনির্দিষ্ট টার্গেট দিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে।
৫. সোশ্যাল নেটওয়ার্কে গ্রাহকদের অভিব্যক্তি থেকে জানা যায়, টেলিটকের বিভিন্ন সাইটের বড় অংশে ব্যাটারি ব্যাকআপ না থাকায় বিদ্যুৎ না থাকলে টাওয়ার বন্ধ হয়ে থাকে। এ সমস্যা নিরসনে দ্রুত সময়ে ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারি পরিবর্তন করে সাইটগুলো সর্বাবস্থায় সচল রাখতে হবে যাতে গ্রাহকরা সেবা পেতে সমস্যার সম্মুখীন না হন।
৬. মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব জনবলের সঠিকভাবে কাজের পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে টেলিটকের প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কার করা প্রয়োজন। কাজের গতি ও স্বচ্ছতা, দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করতে হবে। প্রাইভেট অপারেটরদের ন্যায় পরিচালনার জন্য কোম্পানির পলিসি সংস্কার করতে হবে।
৭. গ্রাহকরা যাতে দেশের সব এলাকায় টেলিটকের সিম কিনতে পারেন, এবং রিচার্জ নিতে পারেন, সেজন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া সরকারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টেলিটকের সিম ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. বিগত সরকারের টেলিটক বিক্রয়ের সব পাঁয়তারা বন্ধ করে টেলিটকে জনসাধারণের কোম্পানিতে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া এ বিক্রয় প্রক্রিয়ায় কে বা কারা ব্যক্তিগত লাভ অর্জন করতো, তাদের নাম উন্মোচন করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৯. টেলিটকের ফাইভ-জি প্রকল্পের দুর্নীতি অনিয়ম দ্রুত তদন্তের আহ্বান।
১০. বিটিসিএলের কর্মকর্তাদের টেলিটকে নিয়োগ না দেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
এমআইএইচ/আরএইচ