ঢাকা: বর্তমান বিশ্বে সার্বিকভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় মনোনিবেশ করেছেন।
যে কারণে মানুষ খবরের কাগজের পরিবর্তে দিন দিন অনলাইনে তাৎক্ষণিক খবর জানতে ও পড়তে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন।
বাংলাদেশে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমার পাশাপাশি কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কর্মক্ষম মানুষকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করলেই কেবল দেশ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টে’ প্রবেশ করেছে।
সিআইএ-দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক’র মতে, যখন কোনো দেশের কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি থাকে, তখন দেশটি ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টে’ প্রবেশ করে। আগামী দু’দশকে উন্নত দেশগুলোতে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি সক্ষম সেবা শিল্প (আইটিইএস) বিকাশের সুযোগ রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষার আলোকে সরকার এলআইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি সহায়ক এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
বাংলাদেশে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি এলআইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বিকাশে ৩৪ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।
বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে ফাস্ট ট্রাক ফিউচার লিডার কর্মসূচিতে ৪ হাজার তরুণ-তরুণীর প্রশিক্ষণ চলছে। এর মধ্যে ১০ হাজার তরুণ-তরুণীকে টপ-আপ আইটি ও ২০ হাজার তরুণ-তরুণীকে ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এ লক্ষ্যে গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শীর্ষ স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বছরের জানুয়ারি থেকে তারা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই তরুণ। এমনই চিন্তা থেকে সরকার অন্যান্য খাতের ন্যায় আইটি খাতেও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
এ খাতের বিকাশে মানবসম্পদ তৈরির নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প। প্রকল্পটি গ্রহণে বিশ্বব্যাংকের একটি সমীক্ষাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সরকার।
২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংক এ সমীক্ষাটি চালায়। ওই সমীক্ষাতে বলা হয়-বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ও মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। এখানে শ্রম ব্যয়ও কম। সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ও অ্যানিমেশনে এ শিল্পের বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
এলআইসিটি প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, প্রকল্পটির অন্যতম একটি প্রধান সাব কম্পোনেন্ট হচ্ছে-বিশ্বমানের প্রশিক্ষণে আইটি খাতে ৩৪ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। এ কাজে আমরা অনেকদূর অগ্রসর হয়েছি। এফটিএফএল কর্মসূচিতে অনলাইনে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী বাছাই করে হচ্ছে। মানসম্মত কারিকুলাম তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
উপপ্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, এলআইসিটি প্রকল্প দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
এলআইসিটি প্রকল্প ফাস্ট ট্রাক আইটি ফিউচার লিডার (এফটিএল) কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে ৪ হাজার ভবিষ্যৎ আইটি লিডার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ইতোমধ্যে দুই ব্যাচে প্রায় ৩’শ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিযোগতিমূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। এফটিএফএল কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণের অংশ নিয়ে বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশের চাকরি হয়ে যাচ্ছে।
প্রথম ব্যাচের ১৪৮ জনের মধ্যে প্রায় ১০৮ জনের এবং এবং দ্বিতীয় ব্যাচের ৬৪ জনের ইতোমধ্যে চাকরি হয়েছে। সাধারণত তিন ধরনের প্রোগ্রামে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তরুণ-তরুণীদের বাছাই করা হয়।
এগুলো হচ্ছে-সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) এবং ম্যানেজমেন্ট।
বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর এবং ইংরেজিতে দক্ষ উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন এমন আগ্রহী প্রার্থীদের এ তিন ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করা হচ্ছে।
১০ হাজার গ্রাজুয়েটকে বিশেষায়িত আইটি প্রশিক্ষণ দিয়ে আইটি পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। যাদের আইটিতে ধারণা রয়েছে তাদের আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়াও ব্যবস্থা রয়েছে।
আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ও ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজির (আইআইটি), কম্পিউটার সায়েন্স (সিএস), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে গড়ে তুলবে।
আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং’র তৈরি কারিকুলাম ও ম্যানুয়াল অনুসরণ করেই মাস্টার ট্রেইনাররা প্রশিক্ষণ দেবে। বিজ্ঞানে বিষয়ের উপর ১০ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হবে।
২০১৪ সালে এলআইসিটি প্রকল্প দেশের ৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) এবং ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে এ প্রশিক্ষণ নিয়ে মতবিনিময় করে।
বিশ্ব বাজারের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে সফটওয়্যার উন্নয়ন, প্রোগ্রামিং, ডেটা স্কিলস, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও), করপোরেট কালচার, আন্তব্যক্তিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে প্রাথমিক (বেসিক) প্রশিক্ষণ দিয়ে ২০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিতে পেশাজীবী দক্ষজন শক্তি গড়ে তোলা হবে।
বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিষয়ে ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক পাশ থেকে মস্টার্স ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীদের এ প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করা হবে। আইটি সেবা দিতে সক্ষম করে তোলার জন্য এদের গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন, ডেটা, আন্তব্যক্তিক যোগাযোগসহ আইটির নানা ধরনের প্রোগ্রাম সম্পর্কে বেসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৫
এসএস/টিআই/এমজেড