ঢাকা: বাংলাদেশে ১০ হাজার আইটি গ্রাজুয়েট তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে, গেল বছরের ২৪ অক্টোবর ঢাকায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইটি প্রতিষ্ঠান ‘পিপলএনটেক’। দেখতে দেখতে কেটে গেল প্রায় অর্ধবছর।
এর মধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে তাদের প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংয়ের ৩টি, ডেক্সটপ অ্যান্ড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংয়ের ১টি, ওরাকল ট্রেনিংয়ের ১টি ও ইংরেজির ২টি ব্যাচ।
আউট সোর্সিংয়ে বাংলাদেশের নাম কেবল ডেটা এন্ট্রির তালিকা থেকে উঠিয়ে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নযাত্রায় পিপলএনটেকের হাত ধরে অনেকেই নৌকা ভাসিয়েছিলেন। তাদের বর্তমান অবস্থা জানতে সম্প্রতি কথা হয় বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কেউ কম্পিউটার সায়েন্স, কেউ বিবিএ, কেউবা এসেছেন ভিন্ন পেশার দুনিয়া থেকে। আগমনের আয়োজন আলাদা কিন্তু লক্ষ্য এক। তা হলো, তথ্যপ্রযুক্তির আকাশটা আরেকটু বড় করা!
কথা হয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কম্পিউটার সায়েন্সের ৫ম সেমিস্টারের ছাত্র মাহির আমিরুর রহমান ইরামের (২২) সঙ্গে। ইরাম প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ব্যাচ টু-এর শিক্ষার্থী। নিজে কম্পিটারের ছাত্র হয়েও পিপলএনটেকে এসেছিলেন শেখার গন্ডিটা আরও বাড়াতে।
বাকিটা শোনা যাক ইরামের মুখেই, এক কথায় বললে, প্রত্যাশার চেয়ে অনেকগুণ বেশি পেয়েছি পিপলএনটেকের কাছ থেকে। আমি এখন যা শিখছি, ইউনিভার্সিটিতে তা আমাদের শেখানো হতো ফাইনাল সেমিস্টারে গিয়ে।
আর পিপলএনটেককের কাছে আরও বেশি ঋণী কারণ, আমরা নির্ঝর আনজুম স্যারের মতো কোর্স টিচার পেয়েছি, যোগ করেন ইরাম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী কানিজ ফাতেমা মিলি। পড়েছেন দর্শনে, চাকরি করেছেন মানবসম্পদ বিভাগে। পারিবারিক সূত্রে বেশ কিছুদিন ইউরোপ-আমেরিকায়ও ছিলেন। সেখানেই পিপলএনটেকের সঙ্গে পরিচয়। নিউইয়র্ক ক্যাম্পাসে করেছেন সফটওয়্যার টেস্টিংয়ের কোর্স।
নিউইয়র্ক ক্যাম্পাসের কথা যখন এলো তখন বলে নেওয়া ভালো, শুরুতেই লেখা ছিল এটি ‘যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইটি প্রতিষ্ঠান’, কাজেই ব্রুকলিন, নিউজার্সি ও ভার্জিনিয়ায় এর শাখা রয়েছে আর গোড়াপত্তন সেখানেই। এর বাইরে পিপলএনটেকের শাখা রয়েছে কানাডা আর ভারতে।
ফিরে আসি মিলির কথায়। জানালেন, স্থান-কাল-পাত্রে যুক্তরাষ্ট্র আর বাংলাদেশে বিস্তর ফারাক থাকলেও, পিপলএনটেকের সেবা ও শেখানোয় কোনো তফাত নেই। উন্নত ল্যাব ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সমন্বয়ে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ।
‘বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ’ ধরেই কথা শুরু করলেন টেলিটক বাংলাদেশের কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ এস কে আবদুল সাজ্জাদ, দীর্ঘদিনের ইচ্ছের অংশ হিসেবে এর আগেও আমি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কোর্স করেছি। সত্যি কথা বলতে গেলে, তারা শুধু শিখিয়েই ছেড়ে দেন। শিক্ষার্থীরা বুঝল কী বুঝল না, সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই!
সেক্ষেত্রে পুরোপুরি উল্টো পিপলএনটেক। এখানকার প্রত্যেক কোর্স টিচার এত যত্ন আর ধৈর্য নিয়ে শেখান যে, এখানে ব্যাকগ্রাউন্ড কোনো ব্যাপার নয়, যে কেউ শিখে যাবে, সাজ্জাদের এমনই আত্মবিশ্বাসী দাবি।
ওয়েব ব্যাচ ওয়ানের শিক্ষার্থী হিসেবে সাজ্জাদও রয়েছেন নির্ঝর স্যারের পরিচর্যায়। একই রকম প্রশংসার দাবি রাখেন ডেক্সটপ অ্যান্ড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাহবুবুর রহমান স্যার, ইংরেজির মামুন মিঞা স্যার, ফটোশপ-ইলাস্ট্রেটরের সাইফুল ইসলাম স্যার ও ওরাকলের এ এন এম অহিদুল আলম। আর উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন ইউল্যাবের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন।
ডেক্সটপ অ্যান্ড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন কোর্সের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহম্মদ। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রনিক্স ইনজিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। হঠাৎ আইটি ক্ষেত্রে, তাও আবার পিপলএনটেকের হাত ধরে কেন, জানতে চাইলে একরকম জোর দিয়েই বললেন, আইটির জন্য পিপলএনটেকে নয়, পিপলএনটেকের জন্যই আইটিতে আসা! আইটি নিয়ে তাদের চিন্তাধারা ও স্বপ্নই মূলত আমাকে বদলে দিয়েছে। আইটিতে কিছু করার সাহস জুগিয়েছে।
ভিন্ন দুই পেশার মোতালেব হোসেন (৩৪) ও আলি শাহরিয়ার আমিন বাপ্পার (২৯) গলাতে প্রায় একই সুর, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হয়ত অনেক কম টাকায় এ ধরনের কোর্স করাচ্ছে, কিন্তু কম টাকার সঙ্গে সঙ্গে তাদের শেখানোর মানও নিম্নতর।
আর সমস্বরে গলা মিলিয়ে সবাই যেটি যোগ করতে বললেন, আইটি ক্ষেত্রের এই মহাসমুদ্র যাত্রায় সারাক্ষণ তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো ও উজ্জীবিত করার জ্বালানি সরবরাহ করে যাচ্ছেন নির্ঝর স্যার। এজন্য পিপলএনটেককে আবারও ধন্যবাদ, এরকম বিশ্বমানের সব শিক্ষকদের সহচর্যে শেখার পরিবেশ করে দেওয়ার জন্য।
পিপলএনটেক ও এর কার্যক্রম নিয়ে এত কথা হলো, কিন্তু বিশেষ একজনের কথা না বললে রীতিমতো অন্যায় হবে! তিনি ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ। এই যে ফয়সালের মতো ‘পিপলএনটেকের জন্য আইটিতে আসা’, এমন অসংখ্য স্বপ্নবাজদের বুকে আইটি বীজ বুনে দেওয়ার বাসনা প্রথম তিনিই দেখেছিলেন। পিপলএনটেকের যত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-স্বপ্ন, সেসব আসলে তার হাত ধরেই।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমান। এরপর কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্সসহ ওরাকল ডিবিএ, সিস্টেম অ্যাডমিনে যাবতীয় সার্টিফিকেশন অর্জন করে এফডিআইসি, আইআরএস, ডিওডি, আইবিএম ও ওরাকল কোম্পানিতে কাজ করে অর্জন করেন বাস্তব অভিজ্ঞতা।
তার ভাষ্য, বর্তমান সরকার যে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের, আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে চায়, এজন্য এমন একটি উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজনীয়।
১০ হাজার আইটি গ্রাজুয়েট তৈরির পাশাপাশি, সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে একটি আইটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেরও স্বপ্ন রয়েছে তার।
ফিরে যাই লেখার শুরুতে। এসব নির্দিষ্ট মেয়াদী কোর্স একসময় শেষ হবে। এরপর কী জানতে কথা হয় পিপলএনটেকের ঢাকা শাখার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার শেখ দুর্জয় জামানের সঙ্গে।
জানালেন, এরপর পেশাদার সিভি তৈরি থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছুসহ সবার জন্য মক ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে চাকরি পাওয়াসহ আউট সোর্সিংয়ে কাজ পাওয়া নিশ্চিত হয়। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও জব প্লেসমেন্টের জন্য একটি রিক্রুটমেন্ট টিম নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের বড় বড় আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে কাজ করবেন।
পিপল এন টেকের যোগাযোগ: www.piit.us, phone: +8801611446699, +8801799446655
www.facebook.com/peoplentech
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
এসএস