ঢাকা: তিন বছর ঝুলে থাকা তিন হাজার কোটি টাকার সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে এবার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দ্বারস্থ হয়েছে দেশের শীর্ষ চার মোবাইলফোন অপারেটর।
মঙ্গলবার (০২ জুন) বিকেলে মোবাইলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা পলকের অফিসে এসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
অপারেটররা এই জটিলতা দূর না হওয়া পর্যন্ত আসন্ন স্পেকট্রাম নিলামে অংশ নেবেন না বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে অপারেটরগুলোর মূল কোম্পানিগুলোও জানিয়েছে, কয়েক বছরের পুরনো এ সমস্যার সমাধান না হলে তারা আর বড় বিনিয়োগে যাবে না।
বিষয়টি জানাতে তারা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বরাবর চিঠিও দিয়েছেন। গ্রামীণফোনের মূল কোম্পানি টেলিনর, বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিম্পেলকম, রবি’র মূল কোম্পানি আজিয়াটা এবং এয়ারটেলের মূল কোম্পানি ভারতী এয়ারটেল যৌথভাবে ওই চিঠি পাঠায়।
সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স হিসেবে এনবিআর চারটি অপারেটরের কাছে মোট তিন হাজার দশ কোটি টাকা দাবি করেছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে এক হাজার ৫৬২ কোটি, বাংলালিংকের কাছে ৭৬২ কোটি, রবি’র কাছে ৬৪৭ কোটি এবং এয়ারটেলের কাছে ৩৯ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে।
বিষয়টি আদালতে গেলেও এর কোনও সুরাহা হচ্ছে না। মোবাইলফোন অপারেটর সূত্র জানিয়েছে, জুনাইদ আহমেদ পলক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তাদের সমস্যার কথা শুনেছেন।
প্রতিমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন, ৪ জুন বাজেটের পর বিষয়টি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এবং প্রয়োজনে আরও ওপর মহলে তুলে ধরা হবে।
বৈঠকে অংশ নিয়েছেন এমন এক অপারেটর কর্মকর্তা জানান, প্রতিমন্ত্রী সমস্যার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে একটি সারসংক্ষেপ চেয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তারা প্রতিমন্ত্রীকে একটি প্রেজেন্টেশন দেবেন।
একটি অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, অপারেটরদের সমস্যা জিইয়ে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না। ফলে যতো দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে প্রতিমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন।
এদিকে, নিজেদের দাবি সম্পর্কে এনবিআর বলছে, মোবাইলফোন অপারেটরদের বদলে দেওয়া সিমের ৭৯ শতাংশই সঠিকভাবে নিবন্ধিত নয় এবং একজনের সিম আরেকজনকে দেওয়া হয়েছে। আর এজন্য প্রতিটি সিমের ওপর তারা ছয়শ’ টাকা হারে ট্যাক্স দাবি করেছেন। বর্তমানে সিম প্রতি ট্যাক্স আছে তিনশ’ টাকা।
অপরদিকে, মোবাইলফোন অপারেটররা এনবিআরের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলছে, ২০১০ সালের আগে সিম নিবন্ধনের জন্য সরকারের দিক থেকে কোনও নির্দেশনাই ছিল না। ফলে সঠিক নিবন্ধন না হওয়া বা অন্য কোনও কারণে একজনের সিম অন্যজনের কাছে গিয়ে থাকলে তার দায় তাদের নয়।
রবির সিইও সুপুন বীরাসিংহের নেতৃত্বে এয়ারটেলের সিইও প্রশান্ত দাস শর্মাসহ গ্রামীণফোন, বাংলালিংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বৈঠকে যোগ দেন। দেশের বাইরে থাকায় গ্রামীণফোনের সিইও রাজীব শেঠি ও বাংলালিংকের সিইও জিয়াদ সাতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
অপারেটর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তিন বছরের সমস্যা সমাধান না হওয়ায় তাদের অন্তত তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে রয়েছে।
বৈঠকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে মোবাইল অপারেটরদের অবদানের কথা তুলে সিইওরা প্রতিমন্ত্রীর কাছে সিম ট্যাক্স মওকুফসহ নিজেদের বিভিন্ন দাবির কথাও জানান। সেই সঙ্গে তারা মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সরকারের সহযোগিতা চান।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৮ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৫
এসইউ/পিসি