ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

মেলায় অব্যবস্থাপনা, প্রথমদিনেই হতাশ প্রযুক্তিপ্রেমীরা

মেহেদী হাসান পিয়াস, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
মেলায় অব্যবস্থাপনা, প্রথমদিনেই হতাশ প্রযুক্তিপ্রেমীরা ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) থেকে: অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন আর সম্ভাবনার আহ্বানে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার (১৫ জুন) শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী প্রযুক্তিমেলা।

মেলায় নতুন বা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আর অভিনব পণ্যের সমাহার ঘটবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল প্রযুক্তিপ্রেমীদের।

কিন্তু মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।

বিভিন্ন স্টল ও প্যাভেলিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-দর্শনার্থী ও প্রযুক্তিপ্রেমীদের হতাশা প্রকাশ করেছেন। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বা অত্যাধুনিক পণ্যের প্রদর্শনী তো নেই-ই বরং বাজারের গতানুগতিক পণ্যে ঠাসা রয়েছে স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো।

এক্সপোতে উদ্ভাবনী প্রকল্প চ্যাম্পিয়নশিপ, ডিজিটাল ফটো প্রতিযোগিতা, সেলফি ও গেমস প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ার মতো নেই। এগুলোর মধ্যে গেমস প্রতিযোগিতাতেই ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৫’।

‘মিট নিউ বাংলাদেশ’ স্লোগানে মেলায় দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ সরকারের ১০টিরও বেশি মন্ত্রণালয় তাদের সেবা প্রদর্শন করার কথা ছিল।

কিন্তু প্রথমদিনে আইসিটি ডিভিশন ছাড়া সরকারের আর কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

যদিও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের হালনাগাদ পণ্য ও বিভিন্ন সেবা মেলায় প্রযুক্তিপ্রেমীদের মাঝে তুলে ধরাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। তাছাড়া মেলাজুড়ে অব্যবস্থাপনা ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রথমদিনে মেলায় অনুষ্ঠিত দুটি সেমিনারও হয়েছে দায়সারা গোছের। বিআইসিসির মিডিয়া বাজার মিলনায়তনে ‘ডিজিটাল হেলথ কেয়ার’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে নির্ধারিত আলোচকদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না।
 
এমনকি মেলা প্রাঙ্গণে যে প্রযুক্তি বিষয়ে দুটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো ঘোষণাই ছিল না আয়োজকদের পক্ষ থেকে।

মেলা প্রাঙ্গণ ফ্রি ইন্টারনেট সেবার (ওয়াইফাই) আওতায় থাকলেও এর দুর্বল গতির কারণে এ সুবিধা নিতে পারছেন না ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।

মেলায় ঘুরতে আসা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র রেহমান সাবাব বলেন, মেলায় নতুন কিছু নেই। সবই গতানুগতিক।

কারণ হিসাবে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রথমত প্রযুক্তিশিল্পকে তুলে ধরা যদি এ মেলার প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে বলবো তা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ আয়োজনে এর সেরকম কোনো ছাপ নেই।

‘ইনোভেশন জোনে যা প্রদর্শন করা হচ্ছে তার অধিকাংশই সাম্প্রতিক কোনো উদ্ভাবন নয়। তাছাড়া নানা ব্র্যান্ডের কম্পিউটার, ল্যাপটপে ছাড়, অফারের মেলা তো সারাবছরই হয়ে থাকে। ফলে এ মেলাতে আমি ব্যতিক্রম কিছু দেখছি না,’ যোগ করেন এই তরুণ।

রাজধানীর তেজগাঁও থেকে আসা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের মেলার আয়োজন খুবই ভালো উদ্যোগ। দোকানেও এসব পণ্য পাওয়া যায়, কিন্তু মেলায় আসার উদ্দেশ্য হলো ভালো মানের পণ্য ছাড়ে পাওয়া।

‘মেলায় যা দেখেছি, এসব দোকানেও পাওয়া যায়। তবে উন্নত দেশের বাজারগুলোতে যেসব প্রযুক্তি দেখা যায়, আমাদের প্রযুক্তি মেলাতে সেসব কখনোই পাই না,’ এভাবে হতাশার কথা বলছিলেন জহির উদ্দিন নামে আরেক দর্শনার্থী।

তবে মেলাকে সার্বিকভাবে সফল মনে করেন প্রযুক্তি মেলার আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান স্বপন।

ক্রেতা-দর্শনার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, বাজারে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি পণ্যটি এ মেলায় রয়েছে। কষ্ট করে খুজেঁ নিতে হবে।

মেলার অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপন বলেন, এতো বড় আয়োজনে ত্রুটি-বিচ্যুতি কিছু থাকেই। তবে এ আয়োজনকে সার্বিকভাবে সফলই মনে করছি আমরা।

‘বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার নির্মাতা ও সরবরাহকে গুরুত্ব দিয়ে এ ধরনের বড় মেলা এবারই প্রথম,’ মেলার সফলতা তুলে ধরে বলেন তিনি।  

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে একই জায়গায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড নামে তথ্যপ্রযুক্তি মেলা আয়োজন করেছিল। এতে সহযোগিতা করেছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। পরিসরের দিক থেকে ওই মেলা ছিল আরও বড়।

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে এই মেলার পার্থক্য কী জানতে চাইলে বিসিএস-এর সহ-সভাপতি স্বপন বলেন, আমরা হার্ডওয়্যারের গুরুত্ব দিয়ে মেলার আয়োজন করছি। এর উদ্দেশ্য হলো হার্ডওয়্যার উৎপাদনে আমরা কোথায় আছি সেটা তুলে ধরা। এর সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের কী দরকার হবে সে বিষয়টি জানা যাবে।
 
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পার্থপ্রতীম দেব আয়োজনের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দর্শনার্থীদের চাহিদা অনেক বেশি যা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের পক্ষে মেটানো সম্ভব হয় না। উন্নত বিশ্বের নতুন কোনো প্রযুক্তি আমাদের দেশে আসতে কমপক্ষে ছয়মাস লেগে যায়।

প্রদর্শনীর চেয়ে উদ্ভাবনী চিন্তা ও ধারণাকেই এ মেলায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই বিশ্বে হার্ডওয়্যারের যে ব্যাপক বাজার রয়েছে তা আমাদের দেশের তরুণ ও যুব সমাজের দখলে আসুক।

‘এ বিষয়ে উৎসাহ দিতেই এ মেলার আয়োজন,’ যোগ করেন পার্থপ্রতীম দেব।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
এমএইচপি/এটি/জেডএস/একেএ/একে/এমএ

** দুই সহস্রাধিক তরুণ পেলেন ক্যারিয়ার নির্দেশনা
** লেনেভোর পণ্যে ১১ শতাংশ ছাড়, সঙ্গে এলইডি টিভি!
** ১০ শতাংশ ছাড়ে ‘সনি অ্যাকশন ক্যাম’
** প্রযুক্তি মেলায় প্রত্যাশিত পণ্যে ছাড়
** ৫ হাজার টাকায় আইফোন ৬!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।