বিআইসিসি থেকে: বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৫-এর ইনোভেশন জোনে নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন স্বপ্নবাজ কিছু তরুণ-তরুণী। কৈশোর পেরুনো এই তারুণ্যের নবযাত্রীদের চোখভরা স্বপ্ন আর আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের নেশা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) চার তরুণের একটি টিম, নাম দিশারী, প্রদর্শন করছে তাদের উদ্ভাবিত "ম্যাপ এক্সপ্লোরার"। কথা হলো তাদের একজনের সঙ্গে। ধীমান নামের সেই স্বপ্নবাজ তরুণ জানালেন, তাদের এই ম্যাপ এক্সপ্লোরারটি ভূমিকম্প কিংবা ভবন ধসের সময় বিধ্বস্ত বিল্ডিং কিংবা যেকোন স্থাপনার ভেতরে প্রবেশ করে অনুসন্ধান কাজে সহায়তা করতে পারে। এতে সংযুক্ত রয়েছে ক্যামেরা, যেটি অনুসন্ধানকালীন সময়ে সার্বক্ষণিক ছবি পাঠাতে থাকবে এবং একই সঙ্গে ধ্বংসস্তুপের লাইভ ভিডিও দেখা যাবে।
ব্লুটুথ নিয়ন্ত্রিত এই যন্ত্রটির আরও বেশ কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। যেমন- এটিকে একটি নির্দিষ্ট পথ বলে দিলে সে পথে গিয়ে আবার একাই ফিরে আসবে কন্ট্রোলারের কাছে। আবার এ যন্ত্রটির সঙ্গে যদি ব্লুটুথ নিয়ন্ত্রণ বিচ্ছিন্নও হয়ে যায়, তবে এটি ২০ সেকেন্ড পর নিজেই পথ চিনে চিনে ফিরে আসবে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই তরুণ প্রদর্শন করছেন তাদের তৈরি "হোম অটোমেশন" প্রযুক্তি। তরুণ উদ্ভাবক সাখাওয়াত হোসেন জানালেন, তাদের এ প্রযুক্তি একই সঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং ঘরের বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্য স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এছাড়াও অন্ধকার ঘরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে লাইট জ্বলে ওঠবে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে। খরচ পড়বে খুবই সামান্য, আর প্রয়োজনীয় অ্যাপটিও তারা তৈরি করে দেবেন গ্রাহকদের।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তরুণ-তরুণীর আরেক দল উদ্ভাবন করেছেন ইন্টারেকটিভ ট্রেন শিডিউল এর মডিউল। জেরিন নাসরিন টুম্পা, তাওসিফ-উজ-জামান প্লাবন এবং রাশেদ ইবনে আনোয়ারের এ দলটি তাদের উদ্ভাবন নিয়ে বেশ আশাবাদী। কারণ হিসেবে তারা বললেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবহৃত বর্তমান প্রযুক্তির চেয়ে তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি অনেক আধুনিক। ওয়েব সাইট ও মোবাইল অ্যাপভিত্তিক এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই ট্রেনের শিডিউল জানতে পারবেন, কোন ট্রেন কোন স্টেশনে কেন দেরি করছে সেটাও জানা যাবে। একই সঙ্গে রয়েছে ভয়েস নিদের্শনার সুবিধা। উদ্ভাবকদের আশা, এটি অন্ধ লোকদেরকেও ট্রেনের শিডিউল জানতে এবং ঝামেলাহীন চলাচলে সুবিধা দেবে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক দল উদ্ভাবন করেছেন "স্মার্ট হোটেল" প্রযুক্তি। নাহিদ উজ জামান, ফাহিম হাসান ও রাসেল রানারকে নিয়ে এ টিম। তারা জানালেন, তাদের এ প্রযুক্তি একটি হোটেলকে আরও বেশী আরামদায়ক এবং ঝামেলাহীন করে দিতে পারে, যা কিনা অতিথিদের কাছে আরও বেশী গ্রহণযোগ্য করে তুলবে তাদের সেবাকে।
তারা আরো জানান, এ প্রযুক্তিটি ব্যবহার করলে হোটেল রুমে চাবি প্রয়োজন হবে না। কোন অতিথি চেক-ইন করলে তার স্মার্টফোনে প্রথমেই একটি অ্যাপ ইন্সটল করে একটি পিন নাম্বার দেয়া হবে। সেই পিন নাম্বার দিয়েই হোটেল রুমে প্রবেশ করা যাবে। এছাড়াও ওই অ্যাপ থেকে রুমের সব ইলেক্ট্রনিকস প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এখানেই শেষ নয়, তাদের এই "স্মার্ট হোটেল" প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি রুমে বসেই খাবারের অর্ডার দিতে পারবেন। আরও আশ্চর্য হবেন যখন দেখবেন একটি রোবট খাবার নিয়ে এসে আপনার দরজায় কড়া নাড়ছে। সত্যিই এমন "স্মার্ট হোটেল" প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন তারা।
ড্যাফোডিলেরই খাজা ফয়সাল হক এবং হাফিজুল ইমরানের দল উদ্ভাবন করেছেন "ইন্টারনেট কন্ট্রোলড রোবট"। ব্যাটারি এবং সোলারচালিত এই রোবটটিকে জিপিএসের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এই রোবট দুর্গম এলাকায় অনুসন্ধান কাজে সহায়ক হবে, তুলে পাঠাবে লাইভ ফুটেজ-ছবি।
আরও বেশ কিছু তরুণ-তরুণী এ মেলার ইনোভেশন জোনে প্রদর্শন করছেন তাদের দিন-রাত পরিশ্রমের ফসল, বিভিন্ন প্রযুক্তি। তাদের কথা থাকছে পরবর্তী পর্বে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৫
একেএ/জেডএম