বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে: উদ্ভাবন আর সম্ভাবনার আহ্বানে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) চলছে তিন দিনব্যাপী প্রযুক্তি মেলা। এ মেলায় বেচাকেনা নয়, মানুষকে প্রযুক্তির জ্ঞান দেওয়াই মুখ্য উদ্দেশ্য বলে মনে করেন খ্যাতিমান প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার।
‘মিট ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানে সোমবার (১৬ জুন) শুরু হওয়া ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৫’ নামের এ মেলার বিভিন্ন পর্যায়ে অংশ নিচ্ছেন দেশের খ্যাতিমান প্রযুক্তবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার (১৬ জুন) মেলা প্রাঙ্গণে মোস্তফা জব্বারের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
তিনি কথা বলেন দেশীয় প্রযুক্তির হালনাগাদ অবস্থা, বাস্তবতা ও সম্ভাবনা এবং আকার-আয়োজনে, অংশগ্রহণে এ মেলা দেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে কী ভূমিকা রাখবে কিংবা দেশে তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনা কতটুকু ইত্যাদি বিষয়ে।
প্রযুক্তি উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি শিল্প বিকাশে এ ধরণের মেলা কী ভূমিকা রাখতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা জব্বার বলেন, ১৯৯৩ সালে প্রথম কম্পিউটার মেলা করেছিল কম্পিউটার সমিতি। এরপর ধারাবাহিকভাবে নানা পরিসরে মেলা হচ্ছে।
তবে এ মেলার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আলাদা। কারণ এ মেলায় বেচাকেনাটা মুখ্য বিষয় নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে প্রযুক্তি দেখানো এবং প্রযুক্তি দেখানোর পাশাপাশি প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষকে জ্ঞান দেওয়া, যেন তারা নিজেদের জীবনে প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে পারে।
সেদিক থেকে এ মেলা কতটুকু সফল বলে মনে করছেন? জানতে চাইলে খ্যাতিমান এ প্রযুক্তিবিদ বলেন, একটি মেলা করেই বিষয়টির মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কেবলতো শুরু হলো, দেখা যাক কতটুকু এগোনো যায়!
তবে এ মেলা অন্যসব মেলা থেকে আলাদা হওয়ার আরেকটা বড় কারণ হলো, আমরা সচরাচর যেসব মেলা করে থাকি সেখানে শুধুমাত্র বেসরকারি খাতের আইটি কোম্পানিগুলো যুক্ত থাকে। এবার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত হয়েছে, সরকার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে আয়োজনে এটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আমি মনে করি এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বড় বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে অনেক সচেতন।
পাঠ্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়ার আগ্রহ বাড়ছে। ফলে সিলেবাসের পরিসর বড় করতে হচ্ছে। তাছাড়া, এ ধরণের মেলাগুলোতে ওদের (শিক্ষার্থীরেদ) নিয়ে এসে বুঝাতে হবে প্রযুক্তির পরিবর্তনটা কী হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে? সে কারণেই আমি মনে করি এ ধরণের মেলার নানা রকম গুরুত্ব আছে- যোগ করেন বিজয় কিবোর্ডের এ স্বত্ত্বাধিকারী।
এ মেলার ঘাটতি কী? মোস্তফা জব্বার উত্তর দেন, আমার মনে হয় এ মেলার দু’টো দিক দিয়ে ঘাটতি আছে। সময়ের বিবেচনায় মেলাটা একটু শর্ট হচ্ছে। কারণ তিনদিনের মেলা আসলে বিসিএস সাধারণত করে না। এছাড়া, জায়গার অপ্রতুলতাও একটা সমস্য।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, সময় নির্বাচন। এ সময়টা যেকোনো আয়োজনের জন্য ভালো সময় নয়। জুন মাস মেলার জন্য খুব একটা সুবিধাজনক নয়। মেলা বা বড় আয়োজনের জন্য ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার-বিকাশ বিবেচনায় আপনাদের সময়ের সঙ্গে এই সময়ের পার্থক্য কী দেখছেন? মোস্তফা জব্বারের উত্তর, আমি যখন শুরু করি তখন একজন ছাত্র খুজেঁ পাইনি কম্পিউটার শেখানোর জন্য। গ্রামে গ্রামে ঘুরতে হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতে হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি কী বোঝাতে হয়েছে এবং একইসঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যও কাজ করতে হয়েছে।
মেলার আঙ্গিক কী ধরণের হওয়া উচিৎ? মোস্তফা জব্বার বলেন, বরাবরই চেষ্টা করেছি কম্পিউটার প্রযুক্তি মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার। তাই সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক না করে মফস্বল এমনকি গ্রামাঞ্চলে প্রযুক্তির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে সরকারের উদ্যোগ, প্রতিশ্রুতির বিষয়ে মোস্তফা জব্বার বলেন, ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণার পর থেকে কম্পিউটার সমিতি প্রচুর কাজ করে যাচ্ছে। গত ছয় বছরে সরকার দেশে তথ্যপ্রযুক্তির নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে দ্রুত গতিতে। অসাধারণ পরিবর্তন! আমার ২৮ বছরে এরকম একটি অবস্থানে আসবো সেটিই আমার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি।
তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে কম্পিউটার সমিতি কীভাবে ভূমিকা পালন করছে? মোস্তফা জব্বার জানান, কম্পিউটার সমিতি একমাত্র সংগঠন যারা বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে নিয়মিতভাবে মেলা করে আসছে। ঢাকার বাইরে যে ক’টি মেলা হয়েছে, তার সবক’টি কম্পিউটার সমিতি করেছে। তবে, গত দু’বছর ধরে মেলা নিয়মিত না হওয়ার জন্য সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে আমাদের আরও সক্ষম হতে হবে। আমাদের আরও দ্রুত গতিতে দৌড়ানো সম্ভব, দৌড়াচ্ছিও, গতিও খারাপ নয়। কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়া একটা দেশ। সে তুলনায় আমাদের সক্ষমতা তারচেয়ে বেশি। তবে আমার প্রত্যাশা হলো আমরা এর চেয়ে ভালভাবে দৌড়াবো এবং আমাদের অবস্থা এর চেয়ে ভাল হবে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিজের মূল্যায়ন করতে বললে খ্যাতিমান এ প্রযুক্তিবিদ বলেন, শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি কম্পিউটারকে পাঠ্যভূক্ত করার জন্য। বাংলায় বই লেখার চেষ্টা করেছি। সলিউশন তৈরি করার চেষ্টা করেছি। সবগুলো কাজের উদ্দেশ্য ছিল, আমরা যেন তৃণমূল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তিকে নিয়ে যেতে পারি। কম্পিউটার সমিতির আমি চারবার সভাপতি ছিলাম।
শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন বাংলাদেশে এ বিষয়ে কাউকে বোঝাতে হয় না। কাউকে কিছু বলতে হয় না। এমনকি কাউকে উৎসাহিত করারও প্রয়োজন নেই। নিঃসন্দেহে এই রকম একটি সময় আমাদের সবারই কাঙ্ক্ষিত এবং সেটি আমরা অর্জন করতে পেরেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৫
এমএইচপি/এইচএ/
** দোয়েলে আগ্রহী ক্রেতাদের ব্যাটারিতে ভয়
** তথ্যপ্রযুক্তির যাবতীয় সমাধানে হুয়াই