ঢাকা: ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন (আইপিভি) হালনাগাদ করে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাবে গ্রাহক। এ জন্য বিদ্যমান আইপিভি-৪ (ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন-৪)-এর পরিবর্তে আইপিভি-৬ ভার্সন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন করবে।
৯০-এর দশকে দেশে আইপিভি-৪ বাস্তবায়ন শুরুর পর দ্রুতই তা গ্রহণযোগ্যতা পায়। ৩২ বিটের প্রায় চার বিলিয়ন আইপি অ্যাড্রেস সেবা দিতে সক্ষম আইপিভি-৪-এর অল্প কিছু সংখ্যক অ্যাড্রেস বরাদ্দ বাকি রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী আর আইপি অ্যাড্রেস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর ১০ বছর আগে আইপিভি-৬ চালু হলেও তা সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
আর ১২৮ বিটের এই ভার্সনে কয়েক বিলিয়ন আইপি অ্যাড্রেস দিতে সক্ষম।
আইসিটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রত্যেক ডিভাইসের (মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ) জন্য পৃথক আইপি অ্যাড্রেস প্রয়োজন। ভবিষ্যতে যেমন ডিভাইসের সংখ্যা বাড়বে, তেমনি ক্ষুদ্র হয়ে আসবে এ সব ডিভাইস। এজন্য প্রত্যেক ডিভাইসের ক্ষেত্রে আলাদা আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) অ্যাড্রেস প্রয়োজন পড়বে। এ জন্য প্রয়োজন আইপিভি-৬।
এ বিষয়ে ফাইবার অ্যান্ড হোম লিমিটেডের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির বাংলানিউজকে বলেন, আইপিভি-৬ একাধিক আইপি অ্যাড্রেস নিশ্চিতের পাশাপাশি ইন্টারনেটের গতিও বাড়াবে। পৃথিবীর অনেক দেশ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাধিক্যের কারণে আমাদেরও আইপিভি-৬ এর দিকে যেতে হবে।
আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক এস এম আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় জনবল তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ভবিষ্যতে ডিভাইসের সংখ্যা বাড়বে। ডিভাইসগুলো আরো ছোট হয়ে আসবে। হয়ত ওষুধের মধ্যেও ছোট ছোট ডিভাইস সংযুক্ত করা হবে, ওষুধ ঠিকঠাক তৈরি হয়েছে কিনা।
তিনি বলেন, এ সব প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে একাধিক আইপি অ্যাড্রেস প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রয়োজন আইপিভি-৬।
এদিকে, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগ জানায়, ১৯৯৮ সাল থেকে আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হলেও প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাবে তা সম্পন্ন হয়নি।
বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক এস এম আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির পরিকল্পনা অনুযায়ী আইপিভি-৬ বাস্তবায়নের জন্য অ্যাকশন প্ল্যান (কর্মপরিকল্পনা) তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বাজেট বরাদ্দের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) কাছে কথা বলেছি।
তবে আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন হলে এর চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এর প্রধান সমস্যা নিরাপত্তা। স্মার্ট সাইবার ক্রিমিনাল থাকলে বড় বড় আইপি অ্যাড্রেস মনিটর করা কঠিন। সাইবার নিরাপত্তাই প্রধান সমস্যা। এছাড়া বিদ্যমান ডিভাইসগুলো কনফিগার করতে হবে।
এস এম আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখন আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে। সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ডিভাইসগুলোকে কনফিগার করতে হবে। এটি বড় কাজ। এটা করতে পারলেই আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন সম্ভব। এ জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা দেওয়ারও আগ্রহ দেখাচ্ছে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএ) সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম বলেন, দিন দিন ডিভাইসের সংখ্যা বাড়ছে। আইপিভি-৬ বাস্তবায়নে তিন থেকে চারশ প্রকৌশলী এ ব্যাপারে সহায়তা দিতে পারবে।
এদিকে, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আইপিভি-৬’র প্রতি আগ্রহ দেখালেও তাদের মধ্যে সাইবার ক্রাইম নিয়ে ভয়ভীতি কাজ করছে জানিয়ে ফাইবার অ্যান্ড হোম লিমিটেডের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ বলেন, এ জন্য ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।
বর্তমানে গুগল, ইয়াহু ছাড়াও স্থানীয় কনটেন্ট যেমন- নিউজপোর্টালগুলো আইপিভি-৬ এনাবেল। সরকার চাইলে ছয় মাসের মধ্যে আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
মোবাইল ডিভাইসগুলো আইপিভি-৬-য়ে হালনাগাদ, সব সরকারি ওয়েবসাইট আইপিভি-৬ উপযোগী করা, আইপিভি-৬ ব্যবহারে আইসিটি যন্ত্রপাতি করমুক্ত আমদানি করার পরামর্শ দেন সুমন আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৫
এমআইএইচ/এবি