ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ই-হাসি: হাহাহা বনাম হেহেহে

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৫
ই-হাসি: হাহাহা বনাম হেহেহে ছবি: সংগৃহীত

আমরা এখন সবাই মস্ত হাসিয়ে। গেলো  ক’বছরে ই-মেইলে, চ্যাটবক্সে, টেক্সট মেসেজের বদৌলতে আমরা বড় হাহা ওয়ালা।

বন্ধু মজার কিছু লিখেছোতো আমরা গুটি কয় ‘হা হা’ লিখে দেই। ওটা ই-হাসি (ইলেক্ট্রনিক হাসি)। আপনি ডিজিটাল হাসিও বলতে পারেন। নিশ্চিত যে ওটা কিছু হলো না। কিন্তু এই হাসি মিলিয়ে নেওয়া যায় বাস্তবের সব দাঁত কেলানো, হা-মুখো হাসির ছবির সাথে।

‘হাহা’ লেখা দেখে কারো ফালতু লাগতে পারে। কিন্তু হাসি সেতো ‘হাহা’ই। এই জীবনে এমন হাসিতো আমরা মেনেই নিয়েছি। কেউ কেউ মেনেছে, তো অন্যদের মানতে ক্ষতি কি? কতটা হাসি আমরা। বন্ধুদের কেউ কেউতো হাসতেই চায় না। ওরা এসবের ঊর্ধ্বে। ওদের মুখে আপনি ‘হা’ শুনবেন খুবই কম, হয়তো শুনবেনই না। ওরা অনেক মজার কথাই সামান্য ‘হা’ শব্দটি ছাড়াই বলে ফেলে, শুনে ফেলে। অনেকেই সেটা পারে না। তাদের হাসতেই হয়।

ই-হাসি হাসতে হবে- ‘হা হা’, ‘হো হো’, ‘হি হি’ কিংবা ‘হেহ’ দিয়ে। আর এগুলো দেখলে যে কেউই বুঝতে পারবে আপনি হাসছেন। নব্য এক হাসি এসে বেশ জায়গা দখল করে নিয়েছে সেটি হচ্ছে ‘হেহে’। বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই! তরুণরাই চালু করেছে এই হাসি। এই হাসির মানে কি?

আসুন গোড়া থেকে ভাবা যাক। ছোট্ট হাসির কথা কিন্তু আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই জানি বই, চুটকি, কৌতুক এসবের বইয়েও দেখেছি ‘হা’। এই ‘হা’ যেনো একটি লেগোর মতো, একটার পাশে অন্যটা বসিয়ে আমরা হাসির পরিধি বাড়াতে কমাতে পারি। আপনি যখন ‘হা!’ লিখবেন তখন যেনো হাসির শব্দটিই শুনতে পাবেন। একদম স্বচ্ছ হাসি। আপনি যখন চ্যাট করছেন কিংবা টেক্সট বিনিময়, একটি মাত্র ‘হা’ লিখলে বুঝাই যাবে মজার কিছু ঘটে গেছে। আর আপনি তাতে সাড়া দিলেন। ওতেই চলে। এখন যদি কৌতুককর কিছু বলা হয়, আর মোটে একটা ‘হা’ বলে দাঁতে কপাট লাগান তাহলে তো চলবে না। ‘হা’র পাশে বসবে আরও ‘হা’। তবে স্রেফ একটি সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ জানাতে ওই এক ‘হা’ই যথেষ্ট।

চ্যাটিংয়ে একটি ধ্রুপদি ‘হাহা’ বেশ মানানসই। বেশ সম্মানজনক একটি হাসি। ‘হাহা’ মানেই হচ্ছে আপনি আসলেই মজা পেয়েছেন। আর এও বলে দেয় বাস্তব জীবনেও আপনার কম-বেশি হাসির অভ্যাস আছে।

আর যদি আপনি ‘হাহাহা’ দেন। তার মানে আপনি যথেষ্টই আনন্দিত বোধ করছেন। আর তিনটিরও বেশি ‘হা’ বলে দেবে আপনি হাসির ফল্গু ছড়াচ্ছেন। এটা যদি করেন, তাহলে আপনি হয়তো আপনার ডেস্কে বসে হাসছেন কিন্তু আপনার সহকর্মীরাও শুনে ফেলছে সেই হাসি। এই সময় আপনার দুই হাতই সচল হবে, মুখেও ফুটবে হাসি। কেউ আবার একটু বেশিই রসিক। কৌতুকপ্রিয়র সঙ্গে দুষ্টু প্রকৃতিরও। ওদের মন্তব্যগুলো একটু মাসালা মাখা উচ্চমাত্রার রসালো হয় (আদি রসেরও হতে পারে)।

ওদের ক্ষেত্রে আপনার কিন্তু এই সব হাহা তে কুলোবে না। সেক্ষেত্রে চ্যাটবক্সে গুটি কয় ‘জে’ ছেড়ে দিতে পারেন যেনো তার কথায় আপনার খুশি আর ধরছে না। আর এতই আমোদিত যে ‘জয়’ কথাটিও পুরো লিখতে পারছেন না।

অনেকে আবার ‘হা’ গুলোর মাঝে একটি করে গ্যাপ দিয়ে দেন। কিন্তু যদি বড় কিছু ঘটে যায় তাহলে আর গ্যাপের দরকার নেই। কখনো কখনো তো আমরা খেইই হারিয়ে ফেলি। এই সময়ে সবগুলো বড় অক্ষরে ‘হাহা’ লিখি, হতে পারে একটা বিস্ময়বোধক চিহ্নও দিয়ে দেই বিস্ময়ের আতিশয্যে। কারো কারো আবার ফোনে থাকে স্বয়ংক্রিয় সংশোধনী। ফলে সামান্য হাহা, ‘হাহাহাহা..’ কিংবা ‘হাহাহাহাহাহাহা’য় রূপ নিতে পারে। আর ধরা পড়ে যাওয়ার আগেই যদি সেন্ড বাটন টিপে ফেলেন তাহলে বিপাক। কারণ এতে আপনার বন্ধুটি খুশির পরিবর্তে বেজারও হয়ে যেতে পারেন।

ঝুলিতে কিন্তু আরও কিছু শব্দও রয়েছে। ‘হেহ’ এই শব্দের ব্যবহার করতেই পারেন ঠিক যখন আপনি মজার কিছু কথা বলছেন ঠিক তখনই অযাচিত কিছু একটা পেলেন। আর ‘হো হো’ বলছেন যখন কেউ একজন নোংরা জোকসটি শুনিয়ে ফেলেছে, এখন আপনাকে হাসতেও হবে আর তাকে একটু বকেও দিতে হবে তখন। কিছু কিছু বন্ধু আছে যারা একটা ‘হা’ কিংবা ‘হে’ কিংবা ‘হো হো’ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন তাদের কাছ থেকে ‘হাই ফাইফ’ অভিব্যক্তি মেলেই না। একটি যদি ‘হাই ফাইভ’ বা ‘হা হা’ বের করা যায় সেটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। আর সে যদি কোনও দিন ‘হাহাহা’ লিখে ফেলে তো তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি না করিয়ে উপায় থাকবে না।

‘হি হি’ এক কিউট হাসি, আর যড়যন্ত্রীরও বটে। হি হি, আমরা এক কোনায় বসে কথা বলছি। হি হি, সে আমাকে কিসব লিখেছে, হি হি, মজা পাইছি ধরনের কথা-বার্তা। আবার লেখা হয় ‘টি হি’ যার মানে ভীষণ সুন্দর। টু কিউট এর অন্য ভার্সন। যখন বললেন ‘টি হি’, মানে হচ্ছে বিষয়টি আপনার ভালো লেগেছে, কিংবা খুব সুন্দর বলতে চাইছেন।

এর পর আসা যাক রহস্যজনক ‘হেহে’ প্রসঙ্গে। অপেক্ষাকৃত ছোটদের ই-হাসি এই ‘হেহে’। ছোটরা ‘হেহে’ বা ‘হিইইই...’ করে। তবে এরা হাহাহাহার দলেরও। তবে এই ‘হেহে’ তে বেশ অদ্ভুত রহস্য লুকিয়ে থাকে।

‘হেহে’ কে আপনি হাসির ‘ওয়াহ’র মতোই ভাবতে পারেন। বাজে কিন্তু যখন তখন ব্যবহার চলে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ‘হেহে’ শব্দ করে শিক্ষককে বিরক্ত করে। ওটার মধ্যে শয়তানি রয়েছে। এটা এক ধরনের চাপা হাসি। আসলে ‘হেহে’ টা হচ্ছে ‘হিহি’ আর ‘হেহহেহ’র মিশ্রিত রূপ। এখানে আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে যখন কেউ তার শয়তানিটা ধরিয়ে দিতে চায় না তখন ‘হেহেহে’ ব্যবহার করে।

কারো কারো কাছে এই ‘হেহে’ খুব প্রিয়। এরা আবার ‘লল’ কিংবা ইমোজি ব্যবহার করে না।

তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই যে, এখন কেউ কেউ ‘হাহা’ করে আর কেউ কেউ ‘হেহে’ করে। কৌশলীদের ‘হেহে’ ভালোরা ‘হিহি’ হিসেবে শুনে নেয়। আর তাতে ভার্চুয়াল জগতে দিনভর বিনিময় হতে থাকে লক্ষকোটি হাসির শব্দ। ‘হা-হা’, ‘হি-হি’, ‘হাহাহা’, ‘হিহিহি’। এতে সময়টা তাদের বেশ ভালোই কাটছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউইয়র্কারে প্রকাশিত সারাহ লারসনের নিবন্ধ অনুসরণে।
  
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।