ঢাকা: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আর্শীবাদে মানুষের জীবন সহজ ও সাবলীল হচ্ছে। উন্নত হচ্ছে জীবনমান।
মানুষের সামাজিক জীবনের অংশ হিসেবে জায়গা দখল করে নিয়েছে ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগের সাইট বা গণমাধ্যম। সাইবার অপরাধীরা ইন্টারনেট ও সামাজিক সাইট ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে ক্রমেই তাদের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বা সাইটের অন্যতম ফেসবুক। এ সামাজিক মাধ্যমটির অধিকাংশ ব্যবহারীকারীই তরুণ-তরুণী।
এ মাধ্যমটি জীবনকে অনেক সহজ করলেও অনেকে কখনো কখনো প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকারও হন। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তারা অর্থ খুইয়ে যেমন সর্বশান্ত হন, তেমনি জীবনও হারান অনেকে। প্রতারক চক্র সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীল ও নোংরা ছবি দিয়ে এ প্রতারণার ফাঁদ পেতে থাকেন। ব্যবহারকারী একবার এ ফাঁদে পা দিলেই বিপদে পড়ে যান। এ প্রতারণার মাধ্যমে ঘটে যায় খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন অঘটন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এ প্রতারণার ফাঁদে যারা পা দেন, তাদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। তবে বয়স্ক ব্যক্তিরাও এ ধরনের প্রতারণার শিকার থেকে বাদ যান না।
সুন্দরী মেয়েদের ছবি সংগ্রহ করে বিভিন্ন নোংরা নামে ফেসবুকে আইডি খুলে ফাঁদ পাতেন সাইবার ক্রাইমের সদস্যরা। যে সব নাম ব্যবহারে তরুণ-তরুণীরা বেশি আকর্ষিত হন, সাইবার অপরাধীরা সাধারণত সে সব নামই ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা।
এই সাইবার ক্রাইম চক্রে অনেক নারী সদস্যও থাকেন, যাদের মাধ্যমে অনেকে সহজেই প্রতারিত হন। প্রতারণার কৌশল হিসেবে এ সব নারীরা প্রেমের প্রস্তাব বা অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। পরে অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রতারক চক্রের নারী সদস্যের সঙ্গে ছবি তুলে মুক্তিপণ আদায় করেন।
উদাহরণ হিসেবে চলতি বছরের ২৪ জুলাই রাত সাড়ে ১২টায় শাহবাগ থানার তোপখানা রোডের ‘বৈশাখী আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’-এর পঞ্চম তলায় ৫০১ নম্বর কক্ষে অভিযান চালিয়ে এক অপহৃতকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় অপহরণকারী চক্রের সাতজনকেও আটক করা হয়।
এদের মধ্যে সেই হোটেলের বয় আব্দুল কাদেরও জড়িত ছিল বলে জানা গেছে।
যাকে জিম্মি করা হয়েছিল, তিনি সবে এইচএসসি পাস করেছেন বলে জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা দিতে কোচিং করছেন তিনি। তাকে জিম্মি করে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল বলে জানায় ডিবি পুলিশ।
সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ভুক্তভোগী এই তরুণের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারী চক্রটি জানিয়েছিল, তারা বেশ কিছুদিন ধরেই এ ধরনের অপরাধ করে আসছিলেন।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধ (সাইবার ক্রাইম) দমনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি বিশেষ টিম নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এর তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন ডিবি উত্তর ডিভিশনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সাধারণত যে সব আইডি বা পেজগুলোর বিষয়ে অভিযোগ পাই, সেগুলোর ব্যবহারকারীকে ধরি। এ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে কেউ যদি প্রতারণার মাধ্যমে টাকা দাবি বা আদায় করে, সে সব অপরাধীদের বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা যে সব মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করেন, সেগুলো সাধারণত সঠিক থাকে না। তবে কিছু ঠিক থাকে যা অপরাধীরা ব্যবহার করেন। হয়ত সেগুলোর নিবন্ধন অন্য কারো নামে থাকে।
গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, অশ্লীল আইডি বা পেজে পাতানো প্রতারণার ফাঁদে পড়ে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২ থেকে ৩টি অভিযোগ আসে আমাদের কাছে। পরে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হয়।
এ সম্পর্কে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয়, র্যাব সদর দফতর অপারেশন বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল কে এম আজাদের সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেকেই বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে র্যাবের কাছে অনেক অভিযোগ আসে। এ সব অভিযোগ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করে র্যাব।
অশ্লীল-নোংরা ছবি বা তথ্য দিয়ে ব্যবহৃত আইডি কিংবা পেজের মাধ্যমে অপরাধ দমনে র্যাবের নিয়মিত নজরদারি রয়েছে বলে জানান লে. কর্নেল কে এম আজাদ।
প্রতিমাসে গড়ে ৩ থেকে ৪টি অভিযোগ আসে র্যাবের কাছে। এ ধরনের অপরাধ রোধে অভ্যন্তরীণভাবে র্যাবের একটি বিশেষ টিম নিয়মিত কাজ করে থাকে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫
এনএইচএফ/এবি