বাংলাদেশে মোবাইলফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সে তুলনায় বাড়ছে না স্মার্টফোনের ব্যবহার। ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা, প্রয়োজনীয় বাংলা অ্যাপসের অভাব এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের জটিলতা-এর প্রধান কারণ।
বাংলাদেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং ইন্টারনেট সেবা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় কিছু প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দেশের ৬৪ জেলায় মেবাইলফোন ব্যবহারকারীদের নিয়ে জরিপ করে দেশীয় হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ড এলিট মোবাইল। যেখানে তারা হ্যান্ডসেটের ধরন সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও গবেষণা করে প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, স্মার্টফোনে ব্যবহৃত ইংরেজি ভাষা, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জটিলতার কারণে সাধারণ মানুষ ফিচার ফোন থেকে স্মার্টফোনে আসার আগ্রহ পায় না। আর এই স্মার্টফোন ব্যবহারের অজ্ঞতার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষ ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
রাজধানী বা বড় শহরগুলোতে স্মার্টফোনের ব্যবহার আধিক্য থাকলেও গ্রামাঞ্চলে মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহারে সাহস পায় না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
কাস্টমস অফিসের তথ্য মতে, ২০১৪ সালে দেশে ২ কোটি ৪০ লাখ মোবাইল আমদানি হলেও স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে মাত্র ৪০ লাখ।
মোবাইল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল বছরের চেয়ে ২০১৫ সালে মোবাইল আমদানি বেড়ে ২ কোটি ৬০ লাখ হবে। এর মধ্যে স্মার্টফোন থাকবে মাত্র ৬৩ লাখ।
গত ২০ অক্টোবর বিটিআরসি প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার। যেখানে ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ৫ কোটি ৪০ লাখ ৫৮ হাজার। এর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক। বিটিআরসির হিসেবে এখনও শুধু মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৭ কোটি ৯৪ লাখ ৩৬ হাজার গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডিজিটাল উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশনের সভায় ২০১৫ সালের বিশ্ব ব্রডব্যান্ড পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাসা বাড়ি প্রতি ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান অনেকটা পিছিয়ে আছে বলে মনে করছে জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে দেওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। সহজ যোগাযোগ এবং ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্যও স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা বেশি। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষদের এখনও ফিচার ফোন নির্ভরতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। কাস্টমস ও বিএমপিআইএ-এর জরীপও তাই বলছে।
এলিট মোবাইলের গবেষণা প্রতিবেদনে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, দেশে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন, বাংলা মোবাইল অ্যাপস ও ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রশিক্ষণ বাড়ালে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়বে।
এজন্য সরকার, রেগুলেটরি, মোবাইল অপারেটর, হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৫
এসজেডএম