ঢাকা: দেশব্যাপী মোবাইল সিম নিবন্ধন শুরু হয়েছে রোববার (১৫ নভেম্বর) থেকে। গ্রাহক ধরে রাখতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে ফোন কোম্পানিগুলো।
লোকসানে থাকা ক্ষয়িষ্ণু এ কোম্পানিটির গ্রাহকরা তাই ভোগান্তির শঙ্কায় ভুগছেন। ত্যক্ত অনেক গ্রাহক আবার টেলিটক ছাড়ার কথাও ভাবছেন।
এ বিষয়ে আলাপ করলে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, অন্যান্য কোম্পানির মতো টেলিটকও কাস্টমার কেয়ারের মাধ্যমে সিম নিবন্ধন করবে।
কিন্তু দুর্বল নেটওয়ার্ক ও সেবার মানের ঘাটতির কারণে রাজধানীনির্ভর হয়ে পড়া রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটির কেবল ঢাকা নিয়েই কী উদ্যোগ রয়েছে, জানতে চাইলে টেলিটকের এমডি কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
এমনকি বিশেষ এ সার্ভিসের (সিম নিবন্ধন) জন্য কাস্টমার কেয়ারে লোকবল বাড়ানো হয়েছে কি-না তা-ও বলতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানানোর কথা বলেছেন টেলিটকের এমডি।
শঙ্কিত গ্রাহকরা বলছেন, খোদ এমডি যখন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানেন না, বা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তখন সহজেই অনুমেয় কোম্পানিটির ভেতরের অবস্থা।
টেলিটকের সদরঘাট কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে এখনও (বেলা ১১টায়) সিম নিবন্ধন শুরু হয়নি। এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও পাইনি। তবে, শুনেছি ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে।
কোম্পানিটির রোকেয়া সরণির কাস্টমার কেয়ারের এক কর্মকর্তা জানান, সিম নিবন্ধনের জন্য কোনো লোকবল বাড়ানো হয়নি। আগে যারা ছিলেন তারাই আছেন। আর একটি মাত্র মেশিন পাঠানো হয়েছে।
বনশ্রী কাস্টমার কেয়ারের কর্মকর্তারা জানান, সিম নিবন্ধন শুরু হবে ১৬ ডিসেম্বর থেকে। আজকে টেস্টিং (পরীক্ষা) করা হচ্ছে।
গত ২১ অক্টোবর সিম নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ পদ্ধতির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ প্রক্রিয়ায় সিম নিবন্ধন করতে লাগছে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, পাসপোর্টের মতো অনুমোদিত পরিচয়পত্র।
অনুমোদিত পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতে হবে। ১৫ নভেম্বর থেকে নতুন সিম কিনতেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া সিমটি প্রতিস্থাপন করতে হলেও এ পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে।
২০১২ সালের পরে কেনা সিমের জন্য গ্রাহকেরা নিজেরাই নিবন্ধনের যথার্থতা অনলাইনে যাচাই করতে পারবেন। একটি সিম সঠিকভাবে নিবন্ধিত কি-না তা এসএমএস’র মাধ্যমে জানা যাবে। এজন্য মেসেজ অপশনে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ, পূর্ণ নাম লিখে ১৬০০ নম্বরে পাঠিয়ে দিতে হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কারও কাছে সিম বিক্রি করা যাবে না। সিম থাকলেও নিবন্ধন করা যাবে না। ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের তাদের অভিভাবকের (মা-বাবা) নামে সিম নিবন্ধন করতে হবে। ভুয়া পরিচয় এবং নিবন্ধন না করে সিম কিনে অপরাধীদের ব্যবহার ঠেকাতে গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধন করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশা হিসেবে, ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যে সিম নিবন্ধন করতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে অনিবন্ধিত সিমের জন্য অপারেটরদের সিম প্রতি পঞ্চাশ ডলার জরিমানার বিধান কার্যকর করা হবে।
সারাদেশে গ্রামীণফোনের ৭৯টি, রবির ৪৬টি কাস্টমার কেয়ারে এই সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। অন্যদিকে টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ও কাস্টমার কেয়ার পয়েন্ট রয়েছে ৩১টি। এসব সেন্টার বা পয়েন্টের বেশিরভাগই এখনও এ বিষয়ে অবগত নয়।
নিবন্ধনের বিষয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স সৈয়দ তালাত কামাল বাংলানিউজকে জানান, ১৫ নভেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে গ্রামীণফোন। সারাদেশে গ্রামীণফোনের নিজস্ব ও ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলিয়ে ৭৯টি জিপিসি থেকে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশনস অ্যান্ড কর্পোরেট রেসপনসিবিলিটি) ইকরাম কবীর জানান, সারাদেশে ৪৬টি সেবাদান কেন্দ্রে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গ্রাহকদের রেসপন্স অনেক ভালো।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র সেপ্টেম্বর মাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ছয়টি মোবাইল অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার।
** আঙুলের ছাপে সিম নিবন্ধন শুরু
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এসআই/এইচএ/