ঢাকা: প্রতিমন্ত্রী আসবেন, তাই ভিড় করছিল সাধারণ জনতা। ভিড় ঠেলে মূল সড়কে গাড়ি থেকে নেমে সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে গিঞ্জি গলি ধরে এগিয়ে গেলেন প্রতিমন্ত্রী।
‘একটি জিনিস খুব আশ্চর্য করেছে, এই রকম একটি জায়গায় প্রায় পরিত্যক্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন বসবাস করে, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ব্যবসা চলছে, এটা আমার নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হতো। সচরাচর বিলাসবহুল বাড়িতে বোধহয় আরাম-আয়েশে ব্যবসা চলছে, এরকম জায়গা বেছে নেওয়া হবে, এটি আসলে চোখ খুলে দেওয়ার মতো ব্যাপার। ’
রাজধানীর মিরপুর বাংলা স্কুলের পেছনে একটি বাড়িতে র্যাবের অভিযানে অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধারের খবরে ছুটে এসে পরিস্থিতি দেখে এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরও সচিবালয় থেকে ছুটে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাস্তবে আসতে চেয়েছি এজন্য যে আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী-ৠাব তারা উদ্বুদ্ধ হন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অবৈধ ভিওআইপি’র বিরুদ্ধে অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে তারানা হালিম বলেন, এই প্রক্রিয়া চলমান, চলবে, চলতে থাকবে। মানুষ যেন সচেতন হয়, এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। এ কারণে এখানে এসেছি।
‘দৃষ্টি সীমানার বাইরে ছোট ছোট গলি, গিঞ্জি কোনো কিছু বাদ যাওয়া উচিত নয় এবং যাবেও না। বাংলাদেশে অবৈধ ভিওআইপি থাকবে না। ’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৃহৎ চক্রটি অত্যন্ত সংঘবদ্ধ, তারা অত্যন্ত ধনবান, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করাটা খুবই কঠিন। তারপরও আমরা মনোবল-শক্তি দিয়ে নেমেছি এই যুদ্ধে।
‘কেউ যেন মনে না করেন অর্থবল, জনবল, পরিচয় দিয়ে তারা এই অবৈধ কাজটি করে যাবেন, সেটি আমরা মেনে নেবো। সেটি ভাববার কোনো সুযোগ নেই। নতুন উদ্যোমে শুরু করেছি, তাদের সাবধান হতে হবে, ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে এখান থেকে তারা ছাড় পাবেন না। ’
মিলন নামে এক ব্যক্তির ওই বাড়িতে অভিযানে অবৈধ ভিওআইপি’র কাজে ব্যবহৃত ৭৬০টি সিম, দু’টি মেশিনসহ দু’জনকে আটক করে ৠাব।
এর আগে গত চার মাসে সাতটি বড় অভিযানে এক হাজার ৩০৯টি সিম জব্দ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ৠাব আন্তরিক মনোভাব নিয়ে অভিযান চালিয়েছে, অনুরোধ রাখবো যেন অব্যাহত রাখে। তথ্যের ব্যাপারে বিটিআরসি যতো রকম সহায়তা লাগে দেবে।
‘অনিবন্ধিত সিমের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধে নেমেছি, মূল কারণ কিন্তু অবৈধ ভিওআইপি কমিয়ে আনা, চাঁদাবাজি কমিয়ে আনা, সন্ত্রাস কমিয়ে আনা এবং আশা করছি এই প্রক্রিয়াটি যখন সম্পূর্ণ শেষ করতে পারবো, তখন মে মাস থেকে এই বিষয়গুলোর মাত্রা অনেক কমে আসবে। ’
অনিবন্ধিত সিমের নিবন্ধনের কার্যক্রম তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বায়োমেট্রিক বিষয়টা এসেছে এই সমস্যা সমাধানের জন্য। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলে মাত্রা অনেক কমে যাবে। রিটেইলার, ডিস্ট্রিবিউটরের ডাটাবেজ মেনটেইন করতেই হবে, বিটিআরসিকে বলেছি। ডাটাবেজ না দেওয়ার জন্য দায়ভার কোম্পানিগুলোকে বহন করতে হবে। সিম নিবন্ধন না করে বিক্রি, প্রি-অ্যাকটিভেটেড সিম বিক্রি করলে দায়িত্ব নিতেই হবে।
‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অবৈধ ভিওআইপি’র বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। তথ্য উপদেষ্টাও (সজীব ওয়াজেদ জয়) বলেছেন, আমিও কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছি। ’
বাড়িওয়ালাদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা বাড়ি ভাড়া দেন, তারা যদি বলেন এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না, আমি কিন্তু মানতে রাজি নই। যে সিঁড়ি দিয়ে উঠলাম, যে ঘরে কেউ থাকতে পারে না, এটি বাড়িওয়ালার জানা থাকবে না? এটা ভাববার অবকাশ নেই। এর দায় বাড়িওয়ালাকেও নিতে হবে।
ফেসবুক খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনস্বার্থ, জননিরাপত্তার জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। জনগণ নিরাপদ হলে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেবো।
পার পাবে না টেলিটক
অবৈধ ভিওআইপি’র কাজে টেলিটকের সিম সব থেকে বেশি ব্যবহার হচ্ছে- এ প্রসঙ্গে তারানা হালিম বলেন, টেলিটকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। অন্য মোবাইল অপারেটরের যে সিম ব্যবহার করছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠনের ক্ষমতা আমার নেই, বিটিআরসির আছে। আমার যে ক্ষমতা আছে, কমিটি গঠন করেছি, শুধু সই করার বাকি আছে। মূল উদ্দেশ্য কোথা থেকে, কীভাবে হচ্ছে, আগেই কাউকে অপরাধী বলতে পারি না। কাজেই সম্পূর্ণ বিষয়টি তলিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছি।
২ ঘণ্টা পরপর সিম পরিবর্তন করছিলো তারা
অভিযানের পর ৠাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, শুধু অভিজাত এলাকায় হয় তা না, কুঁড়ে ঘর, নৌকার মধ্যেও ভিওআইপি পেয়েছি। মন্ত্রীকে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য জাতিকে জানিয়ে দেওয়া, আমরা নতুন উদ্যোমে শুরু করেছি। যেখানেই পাবো গ্রেফতার করবো।
‘বাড়ির মালিক যদি হন, বুঝতে হবে কেউ এই ধরনের বাড়ি কেন ভাড়া নিচ্ছে। জঙ্গি সংগঠন থাকতে পারে, অথবা কোনো অপরাধ সংগঠনের জন্য থাকতে পারে। এক হাত চওড়া সিঁড়ি দিয়ে একটা লোকেরই ওঠা কষ্ট। আমরা সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। ’
‘২০০৯, ২০১০, ২০১১ সালেও অভিযান চালিয়েছি। নির্মূল হবে, সফল হবো। সকল অপরাধীকে নির্মূল করা যায় না, আস্তে আস্তে প্রশমিত করতে হয়। অনেক দিনের পুরনো জরাজীর্ণ বিষয়গুলো আছে। ’
‘বিটিআরসি-বিটিসিএল, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা অন্য যে কেউ জড়িত থাকুক, আমরা গ্রেফতার করতে দ্বিধাবোধ করবো না। ’
অভিযানে ৭৬০টি সিমের সঙ্গে ১২৮ পোর্টের দু’টি হাতে তৈরি মেশিন উদ্ধার করা হয় বলে জানান কর্নেল জিয়াউল। তিনি বলেন, মেশিনে দুই ঘণ্টা পরপর সিম পরিবর্তন করে অন্য সিমে চলে যাচ্ছে, আমাদের ধোকা দেওয়ার জন্য। অনেক রকম পন্থা ব্যবহার করেছে তারা।
তিনি জানান, আটক দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা হবে, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে। বাড়ির মালিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব খান, সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
এমআইএইচ/এইচএ/
** বাংলাদেশে অবৈধ ভিওআইপি থাকবে না
** মিরপুরে ভিওআইপি সরঞ্জামসহ আটক ২