ঢাকা: রাজধানীর সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নাগরিকদের ভোগান্তি সঙ্গে সংস্থাগুলোকে গুণতে হচ্ছে আর্থিক ক্ষতি।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবে ভোগান্তিতে পড়েছে রমনা-পরীবাগের অফিসগুলো ও এলাকাবাসী। এখানকার প্রায় একশ’ টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিকল হয়ে রয়েছে।
১৩২ কেভি উচ্চতাপ সম্পন্ন বৈদ্যুতিক ক্যাবল লাইন স্থাপনে নাগরিক জীবনেও এসেছে ভোগান্তি। ঝুঁকি নিয়ে চলছেন সাধারণ মানুষ, এর যেন শেষ নেই।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পরীবাগে বিটিসিএল-এর ভবনের সামনে দেখা যায় কাটা রাস্তার গর্তে একজন কর্মী তার জোড়া দিচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন না ভাই, ডিপিডিসি আমাদের লাইন কাটছে, আর জোড়া দিচ্ছি আমরাই।
পরীবাগ থেকে রমনা, মগবাজার এবং ডিআইটি রোডের আবুল হোটেল হয়ে রামপুরা বাজার পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি করে তার বসাচ্ছে ডিপিডিসি।
রামপুরা এলাকায় ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে পরীবাগের সাব-স্টেশনের জন্য লাইন টানা হচ্ছে বেশকিছু দিন ধরেই।
গভীর রাতে ডিপিডিসির কাজ চলা এবং বিটিসিএল কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে একশ’র মতো টেলিফোন লাইন ও অপটিক্যাল ফাইবার কাটা পড়েছে বলে জানায় বিটিসিএল। এতে টেলিফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহকরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিটিসিএলের লাইন তিন ফুট নিচে, আর ডিপিডিসি বসাচ্ছে সাড়ে চার ফুট গভীরে। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে লাইন কাটা পড়ছে বলে জানান বিটিসিএল কর্মীরা।
বিটিসিএলের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, তারা আমাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করলে এমনটা হতো না।
একশ’টির মধ্যে ৩০টি’র মতো সংযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের লোকজন কাজ করছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
বিটিসিএলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, কপার কেবল কাটা পড়ায় টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ভবনে অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এমন তার কাটাকাটিতে আর্থিক ক্ষতির চেয়েও বিটিসিএলে সেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রাহকেরা, অথচ ক্ষতি করছে অন্য সংস্থা।
‘সরাসরি লাইন থাকলে যে সেবা পাওয়া যায়, জোড়া লাগালে তা পাওয়া যাবে না’, বলেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই কর্মকর্তা।
বিটিসিএলের মুখপাত্র মীর মোহাম্মদ মোরশেদ বাংলানিউজকে বলেন, অফিসের কাজ ও বয়োঃবৃদ্ধরা কথা বলার জন্য টেলিফোন ব্যবহার করেন। কোনো কারণে লাইন কাটা পড়লে গ্রাহকরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানায়।
ইন্টারনেট ও ফোনালাপে সমস্যার পাশাপাশি খোঁড়াখুঁড়িতে রাজধানীবাসীর চলাফেরাতেও ভোগান্তির অন্ত নেই। বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি নিয়ে কাটা গর্তের উপর দিয়ে রাস্তা পারাপার করছেন নগরবাসী।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা আবুল হোটেল এলাকায় কয়েকটি জায়গায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে দেখা গেছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরাও পড়ছেন ভোগান্তিতে।
রমনা মডেল থানার সামনের রাস্তায় এক রিক্সাচালক বলেন, সারা বছরই পথে পথে ঘুরছি, এই খোঁড়াখুঁড়ির তো শেষ দেখি না।
ডিপিডিসির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এই কেবল স্থাপনের কাজটি তদারকি করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরিচালক রমিজ উদ্দিন সরকারের সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ডিপিডিসির অপারেশন বিভাগ থেকে জানানো হয় এ ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না।
ডিপিডিসি জায়গায় জায়গায় সাইন বোর্ড দিয়ে দায় সারাভাবে লিখেছে- ‘১৩২ কেভি উচ্চতাপ সম্পন্ন বৈদ্যুতিক ক্যাবল লাইনের কাজ চলিতেছে। জনসাধারণের সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
এমআইএইচ/এমজেএফ